হকার নিয়ন্ত্রণে কেন্দ্রীয় সরকারের ‘মডেল বিল’ মানবে না রাজ্য সরকার। তাদের পাঠানো খসড়া প্রস্তাব নিয়ে কেন্দ্রকে এখনও কোনও মত না জানালেও মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার চাইছে, এই রাজ্যে হকারদের আর্থ-সামাজিক পরিস্থিতি বিবেচনা করে পৃথক আইন করতে। সেই লক্ষ্যে আজ, বুধবার মহাকরণে বৈঠকে বসছে মুখ্যমন্ত্রীর তৈরি করে দেওয়া বিশেষ কমিটি। রাজ্যের পুর ও নগরোন্নয়ন মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম বলেছেন, “হকার নিয়ন্ত্রণে কেন্দ্র যে আইন করতে চাইছে, তা সব রাজ্যে কার্যকর হবে না। এক এক রাজ্যে হকার-পরিস্থিতি এক এক রকম। এমনকী, একই রাজ্যের বিভিন্ন শহরে ছবিটা আলাদা।”
এর মধ্যেই অবশ্য হকার পুনর্বাসনের জন্য টাকা চেয়ে কেন্দ্রীয় আবাসন ও শহরাঞ্চলের দারিদ্র দূরীকরণ মন্ত্রকের মন্ত্রী কুমারী শৈলজাকে চিঠি লিখেছেন ফিরহাদ হাকিম। তিনি বলেন, “দড়ি দিয়ে যেমন খুশি পলিথিন টাঙানোর বদলে যদি বাহারি কিয়স্ক বাধ্যতামূলক করা যায় এবং মাথার উপরে রঙিন ছাতার ব্যবস্থা হয়, তা হলে অনেক টাকার দরকার। সেই কথাই কেন্দ্রকে লিখেছি।”
এক পুরকর্তা জানিয়েছেন, কিয়স্কগুলি কী ভাবে নান্দনিক করা যায় এবং শহরের সৌন্দর্যবৃদ্ধিতে তার কতটা প্রভাব পড়বে তা যাচাই করতেই কমিটিতে একাধিক শিল্পীকে রাখা হয়েছে।
রাজ্যের চার মন্ত্রী, তিন দফতরের সচিব এবং সমাজের বিভিন্ন পেশার লোকজনকে নিয়ে ওই কমিটি গড়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। রাজ্য প্রশাসনের এক কর্তা বলেন, “উচ্ছেদের চেয়ে হকার নিয়ন্ত্রণেই সরকার বেশি গুরুত্ব দিচ্ছে। যত্রতত্র বসতে না দিয়ে কী ভাবে তাঁদের একটি সুনির্দিষ্ট নিয়মে বাঁধা যায়, মূলত তাই নিয়েই বৈঠকে আলোচনা হবে।” তবে কলকাতার সৌন্দর্যায়নের পথে হকারদের বাড়বাড়ন্ত যে অন্যতম বড় বাধা, তা নিয়ে সংশয় নেই পুর-অফিসারদের মধ্যে। কলকাতা পুরসভার এক কর্তা বলেন, “ফুটপাথের দুই-তৃতীয়াংশ পথচারীর জন্য ছেড়ে দিতে হবে এবং কোনও ভাবেই রাস্তায় সংযোগস্থল কিংবা ফুটপাথের দু’দিক আটকে দোকান করা যাবে না বাম আমলে এমন নির্দেশিকা জারির পরেও নজরদারির অভাবে তা বাস্তবায়িত হয়নি।”
এই পরিস্থিতিতে নতুন আইন করে আদৌ কোনও সুরাহা মিলবে কি না, সেই প্রশ্নই বড় হয়ে উঠেছে। মহাকরণের বৈঠকের আগে পুর-অফিসারদের একাংশ বলছেন: কারা হকার, সেই তথ্যই সরকারের কাছে নেই। ফলে সবার আগে হকার-সুমারি হওয়া বাঞ্ছনীয়। সেই সঙ্গে শহরের কোন রাস্তায় হকারের সংখ্যা কত, তা-ও বিস্তারিত ভাবে জানা দরকার। কিন্তু কী ভাবে ওই প্রকল্প বাস্তবায়িত হবে, তা নিয়ে ধন্দে নগরোন্নয়ন দফতরের অফিসারেরাই। রাজ্য প্রশাসনের এক কর্তা বলেন, “যে ভাবে ফুটপাথ দখল হয়ে যাচ্ছে, তাতে একটা দিন নির্দিষ্ট (কাট অফ ডেট) করে সে দিন পর্যন্ত ফুটপাথের কতটা অংশ হকারদের দখলে রয়েছে, তা ভিডিয়ো করে রাখতে হবে। যাতে পরে কেউ আর নিজেকে হকার বলে দাবি করতে না পারেন।”
রাজ্যের প্রস্তাব, গোটা শহরকে তিনটি ‘জোনে’ ভাগ করে হকার নিয়ন্ত্রণ করা হবে। সেগুলি হল ভেন্ডিং জোন, রেস্ট্রিকটেড ভেন্ডিং জোন এবং নো ভেন্ডিং জোন। পুর দফতরের এক কর্তা বলেন, “প্রথমটিতে হকারেরা অবাধে ব্যবসা করতে পারবেন, দ্বিতীয়টিতে সময় ধরে হকারদের বসার অনুমতি দেওয়া হবে এবং তৃতীয়টির অর্থ এমন কিছু এলাকা চিহ্নিত করবে সরকার, যেখানে কোনও মতেই হকারেরা বসতে পারবেন না।” |