দলের কেন্দ্রীয় কমিটিতে মহিলা প্রতিনিধির সংখ্যা বৃদ্ধির দাবিতে একদা কলকাতা পার্টি কংগ্রেসে কার্যত ‘বিদ্রোহী’ ভূমিকা নিয়েছিলেন বৃন্দা কারাট। শেষ পর্যন্ত তাঁর চাপে কেন্দ্রীয় কমিটিতে মহিলার সংখ্যা বৃদ্ধির সিদ্ধান্ত নিয়েছিল সিপিএম।
দীর্ঘ ১৪ বছর পর সিপিএমের উত্তর ২৪ পরগনা জেলা সম্পাদকমণ্ডলী মহিলা-শূন্য হওয়ায় দলে নতুন করে ‘ক্ষোভ’ দেখা দিল। মহিলা নেতৃত্বের ‘চাপে’ শেষ পর্যন্ত আলিমুদ্দিন সিদ্ধান্ত নিয়েছে প্রতি জেলায় অন্তত একজন মহিলাকে সম্পাদকমণ্ডলীতে নিতে হবে। শুধু তা-ই নয়, মহিলা সংরক্ষণের কথা মাখায় রেখে পঞ্চায়েত বা পুরভোটের ব্যাপারে সম্পাদকমণ্ডলীর বৈঠকে জেলা কমিটির নেতৃস্থানীয় মহিলা সদস্যরা ‘বিশেষ আমন্ত্রিত’ হিসাবে উপস্থিত থাকবেন। জেলা সম্পাদকদের ইতিমধ্যেই এ কথা জানিয়েছে আলিমুদ্দিন। আগামী বৃহস্পতিবার রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীর বৈঠকেও বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হওয়ার কথা। প্রাথমিক ভাবে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে, যদি কোনও জেলাতে ইতিমধ্যেই মহিলা-শূন্য ভাবে সম্পাদকমণ্ডলী গঠিত হয়ে থাকে (যেমন উত্তর ২৪ পরগনা ও পশ্চিম মেদিনীপুর), সেক্ষেত্রে অন্তত একজন মহিলা নেত্রীকে ‘সংযুক্ত’ (কো-অপ্ট) করা হবে।
পশ্চিম মেদিনীপুরের নতুন সম্পাদকমণ্ডলীতে কোনও মহিলা সদস্য নেই। উত্তর ২৪ পরগনায় ১৮ জনের সম্পাদকমণ্ডলীতে মহিলা ছিলেন দু’জন। দলের রাজ্য কমিটির সদস্য প্রাক্তন মন্ত্রী রেখা গোস্বামী ও তানিয়া চক্রবর্তী। গত পার্টি কংগ্রেসে রেখাদেবী কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য নির্বাচিত হন। সিপিএমের গঠনতন্ত্রে এক ব্যক্তি তিনটি কমিটিতে থাকতে পারেন না। সেই সূত্রেই রেখাদেবী জেলা সম্পাদকমণ্ডলীতে নেই বলে সিপিএম নেতৃত্বের ব্যাখ্যা। অন্য দিকে, জেলা সম্পাদক গৌতম দেব সম্পাদকমণ্ডলীতে ‘নতুন মুখ’ তুলে আনতে গিয়ে বাদ দিয়েছেন দলে অমিতাভ নন্দীর ঘনিষ্ঠ হিসাবে পরিচিত তানিয়াদেবীকে। ফলে সম্পাদকমণ্ডলীতে মহিলা প্রতিনিধি নেই!
বিষয়টি নিয়ে দলে প্রবল বিতর্ক সৃষ্টি হয়। জেলা কমিটির বৈঠকের পরই একাধিক নেতা প্রতিবাদ জানান। দলের মহিলা নেতৃত্ব প্রতিবাদ জানান রাজ্য সম্পাদক বিমান বসুর কাছে। ‘মহিলাদের কখনওই বঞ্চিত করা হবে না’ বলে বিমানবাবু তাঁদের আশ্বাস দেন। মঙ্গলবার এক প্রশ্নের জবাবে গণতান্ত্রিক মহিলা সমিতির সর্বভারতীয় সভানেত্রী শ্যামলী গুপ্তও বলেন, “এ ব্যাপারে বিমানদার সঙ্গে কথা হয়েছে। সমস্যা মিটে গিয়েছে। প্রতি জেলাতেই সম্পাদকমণ্ডলীতে মহিলা প্রতিনিধি নেওয়া হবে। উত্তর ২৪ পরগনায় সম্পাদকমণ্ডলীর সংযুক্ত সদস্য হিসাবে কাজ করবেন রেখা গোস্বামী।”
বিষয়টি নিয়ে উত্তর ২৪ পরগনা জেলা নেতৃত্ব যে ‘চাপে’, গৌতমবাবুর কথায় তা স্পষ্ট। তিনি বলেন, “রাজ্য নেতৃত্বের বিশেষ অনুমোদনে রেখা গোস্বামী সম্পাদকমণ্ডলীর বৈঠকে উপস্থিত থাকবেন। তাঁকে বিশেষ কাজের দায়িত্ব ও বসার জায়গা দেওয়া হবে।”
জেলায় ১৮ জনের সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্যের সংখ্যা নির্ধারণ করেছে রাজ্য নেতৃত্ব। এই সংখ্যা বৃদ্ধির জন্য রাজ্য নেতৃত্বের কাছে অনুমোদন চাওয়া হবে বলেও গৌতমবাবু জানান। তিনি বলেন, “রাজ্য অনুমোদন দিলেই রেখা গোস্বামী সম্পাদকমণ্ডলীর পূর্ণাঙ্গ সদস্য হিসাবে কাজ করতে পারবেন। প্রয়োজনে আরও মহিলা নেওয়া হবে।” আগামী শুক্রবার জেলা সম্পাদকমণ্ডলীর প্রথম বৈঠক। সেই বৈঠকে সম্পাদকমণ্ডলী থেকে বাদ-পড়া তানিয়াদেবী এবং প্রয়াত সুভাষ চক্রবর্তীর স্ত্রী রমলা চক্রবর্তীকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। গৌতমবাবু বলেন, “পঞ্চায়েতে ৫০ শতাংশ মহিলা প্রার্থী। স্বাভাবিক ভাবেই প্রার্থী বাছাইয়ে ক্ষেত্রে মহিলা নেত্রীদের গুরুত্ব দিতে হবে। সম্পাদকমণ্ডলীর বৈঠকে তাঁদের পরামর্শও নেওয়া হবে।”
কিন্তু বিভিন্ন জেলায় এমন কিছু মহিলা নেত্রী সম্পাদকমণ্ডলীতে রয়েছেন, দলের মধ্যে যাঁদের ‘আনুগত্য’ নিয়ে আলিমুদ্দিনের আপত্তি আছে। সেক্ষেত্রে কী হবে? স্থিতাবস্থা বজায় রাখা হবে? নাকি এই প্রজন্মের কাউকে নির্বাচিত করা হবে? জেলা শীর্ষ নেতারা এ ব্যাপারে কিছুটা ‘বিভ্রান্ত’। কারণ, আলিমুদ্দিন থেকে স্পষ্ট কোনও নির্দেশিকা দেওয়া হয়নি।
দলের একাংশ উদাহরণ দিচ্ছেন কলকাতা জেলা সম্পাদকমণ্ডলীর প্রবীণ মহিলা সদস্য শিবানী সেনগুপ্তের। দলে রাজদেও গোয়ালার ‘অনুগামী’ হিসাবে পরিচিত শিবানীদেবীকে এ বারও কি সম্পাদকমণ্ডলীতে রাখা হবে? কারণ, বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য-বিমানবাবুরা ইতিমধ্যে রাজ্য কমিটি থেকে ছেঁটে ফেলেছেন রাজদেওবাবুকে। ঠিক সে ভাবেই পূর্ব মেদিনীপুরের সম্পাদকমণ্ডলীতে কি রাখা হবে তমালিকা পণ্ডা শেঠকে? যাঁর স্বামী লক্ষ্মণ শেঠ রাজ্য কমিটি বাদ পড়েছেন। বা দক্ষিণ ২৪ পরগনার সম্পাদকমণ্ডলীতে রেখে দেওয়া হবে খোকন ঘোষ দস্তিদারের স্ত্রী চন্দনাদেবীকে? রবীন দেব, সুজন চক্রবর্তীদের কাছে এর কোনও জবাব নেই। |