|
|
|
|
থানা থেকে স্কুল, রবীন্দ্রময় দুই মেদিনীপুর |
নিজস্ব প্রতিবেদন |
কোথাও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। কোথাও আলোচনাসভা। কোথাও আবার সাউন্ড বক্সে রবীন্দ্রগান। পঁচিশে বৈশাখের সারাদিন নানা অনুষ্ঠানে এ ভাবেই উদ্যাপিত হল রবীন্দ্র জন্ম-সার্ধশতবর্ষ। দুই মেদিনীপুরের স্কুল-কলেজ থেকে শুরু করে সরকারি-বেসরকারি অফিস, এমনকী থানাগুলিতেও ছিল রবীন্দ্র-স্মরণের আয়োজন।
১৯৩৯ সালে বিদ্যাসাগর স্মৃতিমন্দিরের উদ্বোধন করতে মেদিনীপুর শহরে এসেছিলেন কবিগুরু। তাঁর ব্যবহৃত চেয়ার এখনও সেখানে সযত্নে রক্ষিত। বঙ্গীয় সাহিত্য পরিষদের উদ্যোগে মঙ্গলবার সকালে এখানে এক অনুষ্ঠান হয়। উপস্থিত ছিলেন রবীন্দ্র গবেষক অনুত্তম ভট্টাচার্য, পরিষদের সভাপতি হরিপদ মণ্ডল, মণীন্দ্রনাথ চক্রবর্তী, দণ্ডধর দে তুঙ্গ প্রমুখ। বিদ্যাসাগর স্মৃতিমন্দিরের দ্বারোদ্ঘাটন অনুষ্ঠানে দর্শকাসনে ছিলেন মণীন্দ্রনাথবাবু ও দণ্ডধরবাবু। তখন তাঁরা স্কুলে পড়েন। দু’জনেই কাছ থেকে রবীন্দ্রনাথকে দেখেছিলেন সে দিন। মঙ্গলবার তাঁরা সেই স্মৃতি রোমন্থন করেন। এ দিন বিদ্যাসাগর স্মৃতিমন্দিরে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানেরও আয়োজন ছিল। মেদিনীপুর শহরের কলেজ মোড়ে রবীন্দ্র-মূর্তির পাদদেশে সকালে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান হয়। উদ্যোক্তা জেলা তথ্য সংস্কৃতি দফতরের। সেই সঙ্গে বিভিন্ন সংস্থার পক্ষ থেকেও কবিগুরুকে শ্রদ্ধা জানানো হয়। মালা দেওয়া হয় মূর্তিতে। মেদিনীপুর টাউন স্কুল (বালক) থেকে বেরোনো প্রভাতফেরিও রবীন্দ্র-মূর্তিতেই শেষ হয়। যুব তৃণমূল কংগ্রেসের উদ্যোগে হয় পদযাত্রা। মেদিনীপুর-খড়্গপুর, এই দুই শহর ও শহরতলির বিভিন্ন সাংস্কৃতিক সংস্থা দিনটি উদ্যাপন করে। খড়্গপুর মহকুমশাসকের দফতরে দিনটি পালন করা হয়। সকালে প্রভাতফেরি বেরোয়। বিকেলে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান হয়। উপস্থিত ছিলেন মহকুমাশাসক সুদত্ত চৌধুরি। |
|
ডিমারিতে ভাষা ও সংস্কৃতির অনুষ্ঠান। |
পুলিশের উদ্যোগে এ দিন নানা অনুষ্ঠান হয়। মেদিনীপুরে জেলা পুলিশের সদর দফতরে স্কুল ছাত্রছাত্রীদের জন্য ছবি আঁকা ও ক্যুইজ প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হয়েছিল। শতাধিক ছাত্রছাত্রী এতে যোগ দেয়। সফল প্রতিযোগিদের হাতে এ দিনই পুরস্কার তুলে দেওয়া হয়। উপস্থিত ছিলেন জেলা পুলিশ সুপার সুনীল চৌধুরি, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর) কল্যাণ মুখোপাধ্যায় প্রমুখ। থানাগুলিতেও রবীন্দ্র-স্মরণে নানা অনুষ্ঠান হয়। গোয়ালতোড় থানায় আয়োজিত অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন শালবনির বিধায়ক শ্রীকান্ত মাহাতো। স্থানীয় স্কুলের ছাত্রছাত্রীরাই সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান করে। মেদিনীপুর কোতয়ালি থানা, খড়্গপুর টাউন থানা থেকে শুরু করে বেলদা, নারায়ণগড়, পিংলা, খড়্গপুর লোকাল-জেলার প্রতিটি থানাতেই দিনটি উদ্যাপন করা হয়। রবীন্দ্রনাথের ছবি রেখে তার চারপাশ ফুল দিয়ে সাজানো হয়। বেশ কয়েকটি থানায় সাউন্ড বক্স রেখে রবীন্দ্র সঙ্গীত বাজানো হয়। জঙ্গলমহল এলাকার থানাগুলিতেও এদিন নানা অনুষ্ঠান হয়েছে। ঝাড়গ্রাম সহ বিভিন্ন এলাকায় আবার অনুষ্ঠান চলাকালীন থানায় আসা মানুষজনকে মিষ্টিমুখ করানো হয়। পশ্চিম মেদিনীপুরের পুলিশ সুপার সুনীল চৌধুরি বলেন, “প্রতিটি থানাতেই রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের জন্ম-সার্ধশতবর্ষ উদ্যাপন করা হয়েছে।” |
চৈতন্যপুরে রবীন্দ্র-স্মরণ। |
ঝাড়গ্রাম মহকুমা তথ্যকেন্দ্রে কবি-প্রণাম। |
|
জঙ্গলমহল এলাকার স্কুলগুলিতেও রবীন্দ্র-স্মরণে নানা অনুষ্ঠান হয়। শালবনির মৌপাল দেশপ্রাণ বিদ্যাপীঠে এদিন বিশ্বকবির আবক্ষ মূর্তির উন্মোচন করা হয়। উন্মোচন করেন রবীন্দ্র গবেষক অনুত্তম ভট্টাচার্য। ছিল আলোচনাসভা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন। আদিবাসী কবিতা আবৃত্তি, নৃত্য, নাটক পরিবেশিত হয়। প্রকাশিত হয় দেওয়াল পত্রিকা ‘উজান’। প্রধান শিক্ষক প্রসূনকুমার পড়িয়া জানান, রবীন্দ্রনাথ ও বিবেকানন্দের জীবন ও কর্ম নিয়ে এক চিত্র প্রদর্শনী আয়োজিত হয়েছে। বিবেকানন্দ যুব মহামণ্ডলের কেন্দ্রীয় প্রতিনিধি যুগল প্রধান স্বামী বিবেকানন্দ ও যুবসমাজে তাঁর ভূমিকা নিয়ে অলোচনা করেন।দেবগ্রাম হাইস্কুলেও এ দিন রবীন্দ্রনাথ ও বিদ্যাসাগরের আবক্ষ মূর্তির আবরণ উন্মোচন হয়। উপস্থিত ছিলেন পঞ্চিমাঞ্চল উন্নয়নমন্ত্রী সুকুমার হাঁসদা, বিধায়ক শ্রীকান্ত মাহাতো, বিডিও জয়ন্ত বিশ্বাস, পঞ্চায়েত সদস্য আশিস বিশুই প্রমুখ। ঘাটালেও নানা অনুষ্ঠান হয়। ঘাটাল মহকুমা প্রশাসন ও তথ্য সংস্কৃতি দফতরের উদ্যোগে আয়োজিত অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন মহকুমাশাসক অংশুমান অধিকারী, মহকুমা তথ্য সংস্কৃতি আধিকারিক প্রদীপ্ত আচার্য প্রমুখ। ঘাটাল কলেজ ও বিদ্যাসাগর হাইস্কুলেও দিনটি উদ্যাপন করা হয়। পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা পরিষদের উদ্যোগে এদিন বিকেলে জেলা পরিষদ হলে এক সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান হয়। উপস্থিত ছিলেন জেলা পরিষদের সভাধিপতি অন্তরা ভট্টাচার্য-সহ বিশিষ্ট ব্যক্তিরা। |
অনুষ্ঠান এগরা শহরেও। |
কোতয়ালি থানায় কবি-প্রণাম। |
|
পূর্ব মেদিনীপুর জেলা প্রশাসন ও তথ্য-সংস্কৃতি দফতরের উদ্যোগে এ দিন জেলা প্রশাসনিক ভবন প্রাঙ্গণে অনুষ্ঠান হয়। সেখানে রবীন্দ্রনাথের মূর্তিতে মাল্যদান করেন জেলাশাসক পারভেজ আহমেদ সিদ্দিকি। জেলা পুলিশ সুপারের দফতরে অনুষ্ঠানের পাশাপাশি জেলার প্রতিটি থানায় রবীন্দ্র জন্মজয়ন্তী পালন হয়। এসপি অফিসে সকাল ১১টা থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত অনুষ্ঠানে রবীন্দ্র সঙ্গীত, আবৃত্তি পাঠ ও আলোচনায় যোগ দেন পুলিশকর্মীরা। উপস্থিত ছিলেন জেলা পুলিশ সুপার সুকেশ জৈন, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর) উৎপল নস্কর-সহ পদস্থ পুলিশ আধিকারিকেরা। তমলুক থানার এক পুলিশ আধিকারিক জানান, সরকারি নির্দেশ মেনে গত ১ মে থেকে রবীন্দ্র জন্মজয়ন্তী পালন করছে তারা। জেলা পরিষদ প্রাঙ্গণেও অনুষ্ঠান হয়। উপস্থিত ছিলেন জেলা পরিষদের মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ কর্মাধ্যক্ষ বুদ্ধদেব ভৌমিক, খাদ্য কর্মাধ্যক্ষ মিঠু অধিকারী প্রমুখ। |
শালবনির মৌপালে স্কুলপড়ুয়াদের নাটক। |
মেদিনীপুরে রবীন্দ্র-স্মরণ। |
|
সরকারি অনুষ্ঠানের পাশাপাশি বিভিন্ন বেসরকারি সংগঠন ও স্কুলেও অনুষ্ঠান হয়। তমলুকের ডিমারি বাজারে ভাষা ও সংস্কৃতি পালকি নিয়ে বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রা বার করে এলাকায়। রবীন্দ্রনৃত্য ও সঙ্গীত পরিবেশন হয় ভ্রাম্যমাণ শিল্পীদের নিয়ে। কোলাঘাটের পরমানন্দপুর ভূবনচন্দ্র প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শতবর্ষ উদ্যাপন উপলক্ষে রবীন্দ্রনাথ, বিবেকানন্দ ও বিদ্যাসাগরের আবক্ষ মূর্তির আবরণ উন্মোচন করা হয়। নন্দীগ্রামের আমদাবাদ এলাকায় কমলপুর মাজিদজায়ীর ইসলামিয়া মাদ্রাসায় এই উপলক্ষে ক্রীড়া ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন ছিল। নন্দীগ্রামের তেরপেখিয়া সিন্ধুস্মৃতি ক্লাব সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের পাশাপাশি স্বাস্থ্যশিবিরের আয়োজন করেছিল। কোলাঘাটের পুলশিটা গ্রামে এ দিন নতুন অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রের ভবন উদ্বোধন হয়। সেখানে পড়ুয়াদের বই-শ্লেট দেওয়া হয়। অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন কোলাঘাট পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি অসিত বন্দ্যোপাধ্যায়, পুলশিটা পঞ্চায়েতের প্রধান অসীমা মান্না প্রমুখ। |
|
মেদিনীপুরের পঞ্চুরচকে মাল্যদান। |
কাঁথি মহকুমাতেও মঙ্গলবার নানা অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে রবীন্দ্রনাথের জন্মদিনটি উদ্যাপন হয়। রামনগর থানা ও অঙ্কুর কলা মন্দির আনন্দমঠের উদ্যোগে সকালে প্রভাতফেরি হয়। এরপর রামনগর থানা প্রাঙ্গণে আয়োজিত মূল অনুষ্ঠানে রবীন্দ্রনাথের জীবনের নানা দিক নিয়ে বক্তব্য রাখেন শিশির চক্রবর্তী, রামনগর থানার ওসি সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়, প্রভুরাম প্রধান প্রমুখ। সঙ্গীত পরিবেশন করেন কাঞ্চন মাইতি, প্রণব দাস, নিখিল সামন্ত, রতন আচার্য। আবৃত্তি পরিবেশন করেন বৃন্দাবন গিরি, গৌতম পাত্র, শিশির চক্রবর্তী ও বাঞ্ছানিধি শুঁই। পরে কল্যাণ দাস ও সন্ধ্যা দাসের পরিচালনায় অঙ্কুর কলা মন্দিরের শিল্পীরা রবীন্দ্র নৃত্য পরিবেশন করেন। উত্তর কাঁথির মারিশদাতে নবারুণ সঙ্ঘের উদ্যোগে দু’দিন ধরে পালিত হচ্ছে রবীন্দ্র জন্মজয়ন্তী। মঙ্গলবার প্রভাতফেরির মাধ্যমে উৎসবের সূচনা হয়। উদ্বোধন অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন মানিকলাল দলাই, আশিস মাইতি ও মারিশদা গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধান রঞ্জন রায়। আবৃত্তি, অঙ্কন ও ভলিবল প্রতিযোগিতার আয়োজন ছিল।
সব মিলিয়ে রবীন্দ্রনাথের জন্ম-সার্ধশতবর্ষ উদ্যাপন ঘিরে এ দিন পূর্ব ও পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা জুড়ে তৈরি হয়েছিল অন্য এক আবহ।
|
ছবি তুলেছেন সৌমেশ্বর মণ্ডল, রামপ্রসাদ সাউ, পার্থপ্রতিম দাস, রামপ্রসাদ সাউ,
আরিফ ইকবাল খান, দেবরাজ ঘোষ, কৌশিক মিশ্র ও কিংশুক আইচ। |
|
|
|
|
|