|
|
|
|
হোমের পরিবেশ অস্বাস্থ্যকর, প্রমাণ প্রশাসনিক তদন্তে |
নিজস্ব সংবাদদাতা • মেদিনীপুর |
জলের মতো ট্যালটেলে ডাল! সঙ্গে ভাত আর সব্জি। খাবার বলতে এই। মাছ জোটে না বললেই চলে। ১৫ দিন অন্তর যদিও বা ডিম মেলে, তা-ও অর্ধেক। পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার ডেবরা থানা এলাকার ‘চককুমার অ্যাসোসিয়েশন ফর সোশ্যাল সার্ভিস’ নামে একটি হোমে অপুষ্টিকর এই খাবারই দিনের পর দিন পরিবেশনের তথ্য উঠে এল প্রশাসনিক তদন্তের রিপোর্টে। কারণে-অকারণে অনাথ, ভবঘুরে বাচ্চাদের ‘ভিখিরির ছেলে’ বলে তিরস্কার এবং উত্তমমধ্যম প্রহারের কথাও রয়েছে তদন্ত-রিপোর্টে।
অতিরিক্ত জেলাশাসক অরিন্দম দত্ত বলেন, “হোমের কাজকর্ম খতিয়ে দেখে রিপোর্ট তৈরি করা হয়েছে। রিপোর্ট সংশ্লিষ্ট দফতরে পাঠিয়েও দেওয়া হয়েছে।” আর চাইল্ড ওয়েলফেয়ার কমিটির চেয়ারপার্সন উত্তরা সিংহ বলেন, “আগের সরকারের আমলে অভিযোগ উঠলেও তদন্ত হয়নি। এ বার তদন্তে হোম কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে ভুরি ভুরি অভিযোগ পাওয়া গিয়েছে। ব্যবস্থা নেওয়ার জন্যও রাজ্যের কাছে সুপারিশ করা হয়েছে।” যদিও হোমের সম্পাদক এই অভিযোগ মানতে রাজি হননি। সম্পাদক ত্রিদিব দাস বেরা বলেন, “হোমের জন্য সরকার যে পরিমাণ অর্থ দেয় তা অতি নগণ্য। তা দিয়ে হোম চালানোই দুরূহ। যে কারণে আমি ‘সারেন্ডার’ করার আবেদনও জানিয়েছি।” তাঁর বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগের প্রেক্ষিতে ত্রিদিববাবুর জবাব, “আমার বিরুদ্ধে চক্রান্ত চলছে। মাথা পিছু দিনে ২৫ টাকায় কী-ই বা হবে?”
চলতি বছর এক আবাসিকের মৃত্যুর পরেই ডেবরার এই হোম নিয়ে তোলপাড় শুরু হয়। শেখ আখতার (১৩) নামে ওই আবাসিককে গত বছর ২৭ জানুয়ারি হোমে পাঠানো হয়েছিল। চলতি বছরের ১৯ মার্চ পেটে ব্যথা নিয়ে ডেবরা গ্রামীণ হাসপাতালে ভর্তি হয় সে। সেখানেই তার মৃত্যু হয়। অপুষ্টিতেই এই মৃত্যু বলে অভিযোগ ওঠে।
এর আগেও আবাসিক পালিয়ে যাওয়া-সহ নানা ধরনের অভিযোগ উঠেছে ওই হোমের বিরুদ্ধে। কিন্তু তা নিয়ে কোনও তদন্ত হয়নি। আখতারের মৃত্যুর পর প্রশাসন নড়েচড়ে বসে। ১১ এপ্রিল প্রশাসনিক কর্তারা তদন্তে গিয়ে দেখেন, আবাসিকদের সকালে মুড়ি-ছোলা আর বিকেলে মুড়ি-চানাচুর দেওয়া হয়। দুপুরে-রাতে ডাল, ভাত আর সঙ্গে কোনও একটি সব্জি। মাছ মেলে না বললেই চলে। ১৫ দিন ছাড়া ডিম দেওয়া হয় ঠিকই, তবে অর্ধেক! প্রশাসনিক আধিকারিকদের সরেজামিন তদন্তের দিন অবশ্য গোটা ডিম দেওয়া হয়েছিল। পানীয় জলের সুবন্দোবস্তও নেই। তাই ১০-১২ বছরের বাচ্চাদের ওজন কারও ২২ কেজি তো কারও ৩০ কেজি।
উপরে ও নীচে দু’টি থাকার ঘর রয়েছে। উপরের ঘরে থাকে ৮ জন বিচারাধীন বাচ্চা। নীচে ৬৩ জন অনাথ ও ভবঘুরে। খাট নেই। অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে মেঝেতেই রাত্রিযাপন। মশারিও মেলে না। অথচ, গুদামে মশারি ও খাট মজুত রয়েছে। জামাকাপড় অপরিচ্ছন্ন। কয়েকজন মাত্র স্কুলে যায়।
হোমে ২৫ জন বিচারাধীন বা বন্দি ও ২৫ জন অনাথ ও ভবঘুরে ছেলে রাখার সরকারি অনুমতি রয়েছে। কিন্তু রাখা হয় তার থেকে অনেক বেশি। যদিও সম্পাদকের অভিযোগ, “প্রশাসন জোর করে বলেই আবাসিকের সংখ্যা বেশি।” প্রশাসনিক কর্তাদের অভিযোগ, ছাত্র পিছু এতদিন সাড়ে ৭০০ টাকা করে পেয়ে এসেছে এই সংস্থাটি। বর্তমানে ছাত্র পিছু মাসিক বরাদ্দ বেড়ে হয়েছে ৯৬০ টাকা। ওই টাকাতে এর চেয়ে অনেক ভাল খাবার দেওয়া যায় বলেই প্রশাসনিক কর্তাদের মত। আবাসিক মৃত্যুর ঘটনার পর তদন্ত শুরু হতেই হোম সারেন্ডারের আবেদন জানিয়েছিলেন কর্তৃপক্ষ। প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, শীঘ্রই এই হোমের অনুমতি বাতিল করা হবে। অন্যত্র ওই বাচ্চাদের রাখার জন্য জায়গা খোঁজাও শুরু হয়েছে। |
|
|
|
|
|