মঙ্গলবার হুগলি এবং হাওড়া জেলার বিভিন্ন প্রান্তে মহা সমারোহে পালিত হল রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের জন্মদিনের অনুষ্ঠান। রাজপথে ব্যান্ডের তাল, কচি কণ্ঠে রবীন্দ্রসঙ্গীত, নৃত্য, আবৃত্তিতে সকাল থেকেই দিনটা ছিল একটু অন্য রকম। পাড়ায় পাড়ায়, ক্লাবে, সরকারি দফতরে সর্বত্র বিরাজ করলেন কবি। ধবধবে সাদা পাজামা-পাঞ্জাবিতে সেজে প্রভাত ফেরিতে সামিল হলেন পুলিশ অফিসারেরা।
সকালে শ্রীরামপুরের এসডিও দফতর এবং তথ্য সংস্কৃতি দফতরের যৌথ উদ্যোগে প্রভাতফেরি বের হয়। এর পরে বিভিন্ন স্কুলকে নিয়ে অনুষ্ঠান হয় এসডিও বাংলো চত্ত্বরে। পড়ুয়াদের পাশাপাশি শিক্ষক-শিক্ষিকারাও অনুষ্ঠান পরিবেশন করেন। উপস্থিত ছিলেন এসডিও মুক্তা আর্য, মহকুমা তথ্য ও সংস্কৃতি আধিকারিক লিপিকা বন্দ্যোপাধ্যায় প্রমুখ। |
উলুবেড়িয়ায় রবীন্দ্রজয়ন্তী |
রাজ্য সরকারের নির্দেশ অনুযায়ী প্রতিটি থানাই বিভিন্ন অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছিল। রিষড়ার আবৃত্তি, অঙ্কন, নাচ, গানের শিক্ষণকেন্দ্রের যৌথ মঞ্চ ‘নৈবেদ্য’ সান্ধ্যফেরি বের করে রিষড়া থানা এবং পুরসভার সহযোগিতায়। গত রবিবারেও রিষড়া থানার উদ্যোগে কবিকে স্মরণ করা হয় নানা অনুষ্ঠানে। উত্তর ২৪ পরগনার ইছাপুর থেকে নাচের দল আনা হয়। এ দিন জাঙ্গিপাড়া থানার উদ্যোগে প্রভাত ফেরি বের হয়। সন্ধ্যায় থানা চত্ত্বরে নানা অনুষ্ঠান হয়। বিভিন্ন স্কুলের ছাত্রছাত্রী, শিক্ষক-শিক্ষিকা থেকে শুরু করে নানা পেশার মানুষ সেখানে সামিল হন। শ্রীরামপুর থানা চত্বর সুন্দর ভাবে সাজানো হয়েছিল। সেখানে শিল্পীদের পাশাপাশি পুলিশকর্মীরাও গান এবং আবৃত্তি পরিবেশন করেন। গত রবিবার বৈদ্যবাটি নেতাজি সুভাষ সদনে মূল অনুষ্ঠান হয়। সেখানে অনুষ্ঠান পরিবেশন করেন কোহিনূর সেন বরাট এবং তাঁর দল। আবৃত্তি শোনান অভিনেত্রী দোলন রায়। |
পোলবা থানার উদ্যোগে প্রভাত ফেরি হয়। থানা চত্ত্বরেই এ দিন বসে আঁকো প্রতিযোগিতা হয়। শ’দেড়েক ছেলেমেয়ে তাতে যোগ দেয়। গত রবিবার বিভিন্ন সাংস্কৃতিক প্রতিযোগিতা হয় থানা চত্ত্বরে। সন্ধ্যায় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান হয়। এ দিন ভদ্রেশ্বর থানার উদ্যোগেও বর্ণাঢ্য প্রভাত ফেরি বের হয় এলাকার বিভিন্ন স্কুলের ছাত্রছাত্রীদের নিয়ে। তার পরে থানা চত্ত্বরে কবি স্মরণে অনুষ্ঠান হয়। তারকেশ্বর থানা এবং পুরসভার যৌথ উদ্যোগে বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রা বের করা হয় এ দিন সকালে। পুরসভার সামনে থেকে ওই শোভাযাত্রা আরম্ভ হয়। ট্যাবলো সহকারে ওই শোভাযাত্রা শহরের বিভিন্ন রাস্তা পরিক্রম করে পুরসভার সামনে এসেই শেষ হয়। উপস্থিত ছিলেন রাজ্যের পর্যটনমন্ত্রী তথা স্থানীয় বিধায়ক রচপাল সিংহ, পুরপ্রধান স্বপন সামন্ত, ওসি তারকেশ্বর মুখোপাধ্যায় প্রমুখ। সন্ধ্যায় নাচ, গান, আবৃত্তি-সহ নানা অনুষ্ঠান হয়।
বিভিন্ন স্কুলেও বিশেষ দিনটিকে পালন করা হয়। হরিপালের জামাইবাটি উচ্চ বিদ্যালয়ে প্রভাতী অনুষ্ঠান হয়। কয়েকশো ছাত্রছাত্রী সেখানে উপস্থিত ছিল। শ্রীরামপুরের তারাপুকুর লেনে রবীন্দ্র জন্মোৎসব কমিটির উদ্যোগে এ দিন সকালে নানা অনুষ্ঠান হয়। বৈদ্যবাটি ‘রিদম্’ও বিভিন্ন অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছিল। |
মঙ্গলবার সকাল থেকে রাত পর্যন্ত রবীন্দ্র জন্মোৎসব উপলক্ষে নানা অনুষ্ঠানে মাতল আরামবাগ মহকুমা। গৌরহাটি মোড় থেকে প্রভাত ফেরি বের হয়। তাতে যোগ দেন সমাজের বিশিষ্টজনেরা। মহকুমা তথ্য ও সংস্কৃতি দফতরের উদ্যোগে এসডিও দফতরে বিশেষ অনুষ্ঠান হয়। অঙ্কন প্রতিযোগিতা, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের পাশাপাশি কবিকে নিয়ে আলোচনা করেন বিশিষ্টজনেরা। দুপুরে সঙ্গীত পরিবেশন করেন শিল্পী শ্রীরাধা বন্দ্যোপাধ্যায়। উপস্থিত ছিলেন মহকুমাশাসক অরিন্দম নিয়োগী-সহ ৬টি ব্লকের সরকারি আধিকারিকেরা। মহকুমার বিভিন্ন ক্লাবে, এমনকি পাড়ায় নানা অনুষ্ঠান হয়। মহকুমার চারটি থানায় সন্ধ্যায় ‘কবিপ্রণাম’ অনুষ্ঠান হয়। গোঘাট থানায় এলাকার ছেলেমেয়েদের নিয়ে অনুষ্ঠান করে। তৃণমূলের তরফে শোভাযাত্রা বের করা হয়।
হাওড়ার ডোমজুড়ে মহিয়াড়ী জুনিয়র হাই অ্যান্ড প্রাইমারি স্কুলের যৌথ উদ্যোগে অনুষ্ঠান হয়। স্কুল পড়ুয়ারা নাচ, গান, আবৃত্তি পরিবেশন করে। রবীন্দ্রনাথকে নিয়ে আলোচনা করা হয়। এ দিনই স্কুলের বার্ষিক পুরস্কার বিতরণ করা হয়। অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন কবি-সাহিত্যিক আশিস গায়েন, অধ্যাপক অসোক সৎপতি প্রমুখ। পাঁচলার গঙ্গাধরপুর বয়েজ ও গার্লস স্কুল এবং বিএড কলেজের উদ্যোগে কবির স্মরণে অনুষ্ঠান হয়। কবিকে নিয়ে আলোচনার পাশাপাশি গান, নাচ, আবৃত্তি পরিবেশিত হয়। হাজার দু’য়েক ছাত্রছাত্রী উপস্থিত ছিলেন। জগৎবল্লভপুরে কৃষ্ণনন্দনপুরে জওহর শিশু ভবনে রবীন্দ্রজন্মোৎসব অনুষ্ঠান হয়। শিশুদের নাচ, গান, আবৃত্তির অনুষ্ঠান ছিল জমজমাট।
২৫ শে বৈশাখ উপলক্ষে বালির নিক্বণ সংস্থার পক্ষ থেকেও প্রভাতফেরি বের করা হয়েছিল। এ বার প্রভাতফেরির থিম ছিল ‘অচলায়তন।’ নাচ-গান-পথনাটিকার আয়োজন করা হয় এ দিন। এলাকার মানুষের হাতে রাখি পরান নিক্বণের সদস্যেরা। |
ছবিগুলি তুলেছেন হিলটন ঘোষ, মোহন দাস, রমাপ্রসাদ গঙ্গোপাধ্যায়। |