|
|
|
|
বিতর্ক... |
বিতর্ক: বাংলা ছবি ভাল চলছে, উতরোচ্ছে না |
পক্ষে |
সবাইকে নিয়ে দেখার ছবি কই? |
• সাম্প্রতিক বাংলা ছবিগুলোর কয়েকটি খুব জনপ্রিয় হয়েছে। বক্স অফিসে সফল, শতাধিক প্রেক্ষাগৃহে চলছে। কিন্তু উতরোচ্ছে না, অর্থাৎ প্রযোজক লাভের মুখ দেখছেন, কিন্তু গুণগত উত্তরণ হচ্ছে না। অতীতে ছবিতে থাকত ভাল গল্প, ভাল গান। এখন গানের মধ্যে কোনও কাব্যগুণ নেই। ভাল গীতিকার, সুরকার নেই বললেই চলে। ‘খোকাবাবু’ একটি হিট ছবি। বিদেশি নর্তকীদের দিয়ে নাচের দৃশ্যের জন্য প্রযোজক লক্ষ লক্ষ টাকা জলে দিয়েছেন। গান হয়েছে কি? ‘আন্ডু পান্ডু মারতো সান্টু বিকেলে’ এই গান শুনছেন আমাদের দর্শক। রবীন্দ্রসংগীতের প্রয়োজন ফুরিয়েছে। তরুণ মজুমদার প্রতিটি ছবিতে রবীন্দ্রসংগীতের ব্যবহার করেছেন। বাংলার দর্শকদের কাছে এখনও ‘দাদার কীর্তি’ ‘ভালবাসা ভালবাসা’ ‘আলো’ এ সব ছবির মূল্য অনেক। এখন একটা নতুন ছবি তৈরি হচ্ছে শুধু অতীতের একটি গানকে নিয়ে এবং তার চরিত্রগুলো নিয়ে। আজকের গীতিকারদের চ্যালেঞ্জ জানাচ্ছে সেই গান। পুলক বন্দ্যোপাধ্যায়ের লেখা, সুপর্ণকান্তি ঘোষের সুরে মান্না দে-র কণ্ঠে সেই বিখ্যাত গান ‘কফি হাউসের সেই আড্ডাটা আজ আর নেই’।
আজকের ছবিকে জনপ্রিয় করার কাজে ঝাঁপিয়ে পড়েছে মিডিয়া। দূরদর্শনের চ্যানেলগুলিতে এই সব ছবির ইউ এস পি তোলার জন্য নায়ক-নায়িকা গায়কদের নিয়ে বসে চ্যাট্ প্রোগ্রাম। অর্থাৎ, বাজার তৈরির কাজে লাগানো হয় মিডিয়াকে। ভাল গল্প নেই। সৃজনশক্তি কত দুর্বল হলে তার জন্য বিপণনের এত আয়োজন করতে হয়।
অজিত গুহরায়। ব্যান্ডেল, হুগলি |
|
• বর্তমান ছবিগুলো সমুদ্রের ঢেউ-এর মতোই আমাদের চোখকে আকৃষ্ট করেই যাচ্ছে হারিয়ে। আমাদের মন ছুঁতে পারছে কই? কিন্তু ফেলে আসা দিনের বিভিন্ন বাংলা ছবি আমাদের মনের গভীরে দাগ রেখে গেছে। শরৎচন্দ্রের ‘মেজদিদি’, ‘বিন্দুর ছেলে’, ‘রামের সুমতি’ দেখতে দেখতে আজও তো চোখ ভেসে যায় জলে। ‘পিতা পুত্র’, ‘পথভোলা’, ‘আমার ভুবন’, ‘মন নিয়ে’ ইত্যাদি ছবির গান আজও আমাদের মনের মণিকোঠায় উজ্জ্বল হয়ে আছে। ‘শত্রু’ ‘লাঠি’ ‘গুরুদক্ষিণা’ বার বারই দেখতে মন চায়, পরিবারের সকলের সঙ্গে দেখা যায়। মহানায়ক উত্তমকুমার এবং মহানায়িকা সুচিত্রা সেনের বিভিন্ন ছবি আমাদের চরিত্র গঠনে সাহায্য করে। তাঁরা নাচানাচি করতেন না। চোখের ভাষায় বুঝিয়ে দিতেন সুখ-দুঃখ, যন্ত্রণা, হতাশা, ভালবাসার কথা। সিনেমা থেকে আজ মানবিক দিকগুলি গেছে হারিয়ে। তেমনই একঘেয়ে বিষয়বস্তু। নায়িকা গুন্ডাদের দ্বারা আক্রান্ত হচ্ছে, আর নায়ক ছুটে আসছে। এমন ভাবে ‘ধর্ষণ’-এর দৃশ্য তুলে ধরা হচ্ছে, যার কু-প্রভাব পড়ছে সমাজে। সিনেমাগুলি পরিবারের সকলের সঙ্গে দেখা যায় না।
রিংকু দীর্ঘাঙ্গী। সামতাবেড়, বাগনান, হাওড়া
• বাংলা ছবি এখন সাবালকত্ব পেয়েছে। তার বাজার বিস্তৃত। পশ্চিমবঙ্গ ছাড়িয়ে বাংলাদেশ, অসম ও ঝাড়খণ্ডে তার ভাল ব্যবসা। তাই বাংলা ভাষার ছবি আজ বিগ বাজেটের তৈরি হচ্ছে। সাম্প্রতিক এ সমস্ত ছবিতে কলাকুশলগত নৈপুণ্য, গল্পের বৈচিত্র, আউটডোর শু্যটিং, হোর্ডিং-ব্যানার ও আইনক্স গোষ্ঠীর বাজারিকরণের সহযোগিতার ফলশ্রুতি হল ছবির পুনর্জীবন। কমার্শিয়ালিজমের হাত ধরে বাংলা ছবিতে অনুপ্রবেশ ঘটে চলেছে অর্ধনগ্নতা, দামি কস্টিউম, স্টিরিয়োফোনিক সাউন্ড ইত্যাদির। স্বাভাবিক ভাবে বাংলা সিনেমার সাধারণ দর্শক এই নতুনধর্মী বাংলা ছবিতে অবগাহন করে মনতৃষ্ণা মিটিয়ে নিচ্ছে। ত্রিশ বা পঞ্চাশের দশকের বাংলা ছবিতে এ সব কিছু ছিল না। তবু টেলিভিশনের বহু বাংলা চ্যানেল গত এক দশকে জনাদৃত মেগাসিরিয়ালগুলি বাংলা ছবির দর্শককে অনেকাংশে ঘরমুখো করেছে। সে কারণেই কোনও কোনও বাংলা ছবি ভাল চললেও মোটের উপর উতরোচ্ছে না।
এ এস এম সালাহ্উদ্দিন, খাগড়াগড়, রাজবাটি, বর্ধমান-৪ |
|
|
বিপক্ষে |
বাংলা ছবি স্বর্ণযুগ ফিরে পেয়েছে |
• বাংলা ছবির ক্ষেত্রে বিতর্কের প্রস্তাব বাক্যটি বোধহয় সঠিক নয়। সাম্প্রতিক বাংলা ছবির অনেকগুলিই সার্থক ভাবে রসোত্তীর্ণ হয়েছে। বাংলা ছবির স্বর্ণযুগের (গত পাঁচ, ছয় ও সাতের দশক) পরে, পরবর্তী বেশ কিছুদিন ছিল এক অবক্ষয়ের যুগ। আর্ট ফিল্ম, কমার্শিয়াল ফিল্ম তথা নাগরিক দর্শক ও গ্রামীণ দশকের রুচির দোলাচলতায় সে ছিল এক অস্থির সন্ধিক্ষণ। ক্রমশ পট পরিবর্তন হল। সুদক্ষ পরিচালকদের হাতে ‘আর্ট’ ‘কমার্শিয়াল’-এর ভেদাভেদ ঘুচে গিয়ে একটিই সদর্থক অভিধা সংযোজিত হল ‘ভাল ছবি’। সাহিত্য-নির্ভরতা, শ্রুতিসুখকর সংগীত, শক্তিশালী অভিনেতা-অভিনেত্রী এ সবের রসায়নে হাল আমলের এক ঝাঁক বাংলা ছবি এল, যা জনমানসে স্থায়ী প্রভাব রাখার দাবি রাখে। দর্শকরা পেলেন ‘ইচ্ছে’, ‘রঞ্জনা আমি আর আসব না’ ও ‘চ্যাপলিন’-এর মতো সমাজসচেতন ছবি। ‘আবার ব্যোমকেশ’ ও ‘ফেলুদা’ সিরিজের ছবি, যা স্বর্ণযুগের কিংবদন্তি গোয়েন্দা ‘মোহন’-কেন্দ্রিক ছবি দস্যু ‘মোহন’ (নামভূমিকায় প্রদীপ বটব্যাল)অপেক্ষা কোনও অংশে কম নয়। ‘ওল্ড ইজ গোল্ড’-এর গোঁড়ামি বা প্রতিক্রিয়াশীলতা নয়, চাই উদার, নিরপেক্ষ দৃষ্টিভঙ্গি, যা এখনকার ভাল বাংলা ছবিকে শুধুমাত্র বাণিজ্য নয়, জনপ্রিয়তার মানদণ্ডেও সগৌরবে উত্তীর্ণ বলে স্বীকার করতে শেখাবে।
রূপশ্রী দত্ত। কলকাতা-১৩ |
|
• যে সব সমালোচকরা আলটপকা বেফাঁস মন্তব্য করেন যে, বর্তমানে বাংলা ছবি ভাল চলছে ব্যবসায়িক দিক থেকে, অথচ সৃজনশীলতার দিক থেকে উতরোচ্ছে না বা মনে দাগ কাটছে না, তাঁরা বাংলা ছবি প্রেক্ষাগৃহে গিয়ে না-দেখে অন্যের মুখ থেকে শুনে এই সব অপ্রাসঙ্গিক কথা বলেন। এখন আমাদের বাংলা ছবি সর্বভারতীয় হিন্দি ছবির থেকে গুণগত ও সার্বিক দিক থেকে খুব একটা পিছিয়ে নেই। বক্স অফিসে সাফল্যের পাশাপাশি বাংলা ছবি পরিচালক, প্রযোজক ও কলাকুশলীদের অপূর্ব মুন্সিয়ানায় চলচ্চিত্রজগতে একটা স্বতন্ত্র ঘরানা সৃষ্টি করছে, যা বাংলা তথা বাঙালির একটা গর্বের বিষয়। সুতরাং, বাংলা ছবি আবার তার স্বর্ণযুগ ফিরে পেয়েছে, প্রেক্ষাগৃহগুলিতে রমরমিয়ে চলছে এবং দর্শকরা দারুণ ভাবে উপভোগ করছে। পরিশেষে এক জন চলচ্চিত্রমোদী বাঙালি হিসেবে জোর দিয়েই বলতে পারি, বাংলা ছবি ভাল চলার সঙ্গে সঙ্গেই ভাল ভাবেই উতরোচ্ছে উত্তরোত্তর।
পাভেল আমান। হরিহরপাড়া, মুর্শিদাবাদ
• কথাটা ‘খাচ্ছি কিন্তু গিলছি না’ গোছের হচ্ছে। ‘ভাল চলছে’ মানে তো লোকে দেখছে চলতি কথায় ‘লোকে খাচ্ছে’। আবার ‘ভাল চলছে’ মানে বাণিজ্যিক ভাবে সফল হওয়াকেও বোঝায়। আমার মনে হয়, এক জন পরিচালক এবং অন্যান্য কলাকুশলীরা ছবি বানান আমজনতার বিনোদনের কথা মাথায় রেখে এবং সমাজে কিছু দরকারি বার্তা প্রেরণ করতে। এর পরও নিন্দুকেরা বলবেন, ‘উতরোচ্ছে না’। ব্যাপারটা আপেক্ষিক। উতরোতে না-পারা মানে তো মুখ থুবড়ে পড়া, ডাহা ফেল করা। সাম্প্রতিক কিছু ছবির ‘লোকেশন,’ ‘স্ক্রিপট’ নিয়ে নিত্য-নতুন ভাবনা, আলোর ব্যবহার, বাজেট তো বলিউডের ঘাড়ে নিশ্বাস ফেলছে। সত্যিই তারিফ করার মতো কয়েকজন গুণী পরিচালক আমাদের ইন্ডাস্ট্রিতে রয়েছেন, যা বাংলা ছবির লুকোনো তাস। প্রতি বছরই তো বাংলা ছবি আমাদের জাতীয় স্তরে পুরস্কার এনে দিচ্ছে, যা অন্যদের যথেষ্ট ঈর্ষার কারণ। ‘দাদাসাহেব ফালকে’ তো আর ছেলের হাতের মোয়া নয়, যে চাইলাম আর এনে দিলাম। এটাও তো আমরা কয়েকবার পেয়েছি। সত্যজিৎ রায়, তপন সিংহ, ঋত্বিক ঘটক, মৃণাল সেনদের উত্তরসূরি আমরা। বলিউডের চোরা স্রোতে ভেসে না গিয়ে আসুন না আমরা বেশি করে বাংলা ছবি দেখি। এমন ‘রিজিয়োনাল ল্যাঙ্গুয়েজ ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রি’ বোধ হয় ভূ-ভারতে আর নেই। এর পরও যাঁরা ‘উতরোচ্ছে না’ বলবেন, তাঁরা বোধহয় আমাদের থেকেও বাংলা ছবিকে বেশি ভালবাসেন। কারণ, আমাদের চাহিদা অন্তহীন, ভালর শেষ নেই। তাঁরা আরও ভাল বাংলা ছবি আশা করছেন, এতে আখেরে বাংলা ছবিরই লাভ। বেশি ‘ভাল ভাল’ করলে আবার ‘কলার উঁচু’ হয়, যা একেবারেই কাম্য নয়।
দেবোত্তম বসু। বড়শুল, বর্ধমান |
|
|
জুন মাসের বিতর্ক |
অরাজনৈতিক ব্যক্তিই ভারতের উপযুক্ত রাষ্ট্রপতি |
আপনার চিঠি পক্ষে না বিপক্ষে, তা স্পষ্ট উল্লেখ করুন।
২৫ মে-র মধ্যে এই ঠিকানায়
জুনের বিতর্ক,
সম্পাদকীয় বিভাগ,
আনন্দবাজার পত্রিকা,
৬ প্রফুল্ল সরকার স্ট্রিট,
কলকাতা-৭০০০০১ |
|
|
|
|
|
|
|