সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের ‘আমি বলতে গেলে গ্রন্থাগারেরই সন্তান’ (২২-২) স্মৃতিচারণা পড়ে আমাদের লাইব্রেরির কথাও খুব মনে পড়ল। তার থেকেও বেশি ‘মিত্তিরদার মতো অন্যান্য পাড়ার লাইব্রেরির...’ ইত্যাদি পড়ে মনে হল, যদি আজকে উনি অনিলদার কথা জানতেন, তবে কত সুন্দর করেই না লিখতে পারতেন।
উনি যেমন মিত্তিরদার নামটা জানতেন না, আমিও তেমনই অনিলদার পদবিটা জানি না। কারণ, আমাদের সময় ‘কাকু’র থেকে ‘দাদা’ বলাটাই বেশি চলত এবং ছেলে বুড়ো সবাই অনিলদাকে ‘অনিলদা’ বলেই জানত। অনিলদা জীবনবিমায় ভাল চাকরি করতেন এবং সব পয়সাই লাইব্রেরির পিছনে অর্থাৎ আমাদের শিয়ালদাপাড়ার ইস্ট লাইব্রেরির জন্য ব্যয় করতেন। রোগাসোগা, ছোটখাটো মানুষটা ধুতি-পাঞ্জাবি আর সাধারণ চপ্পল পরে সন্ধে সাতটা থেকে রাত দশটা অবধি রোজ লাইব্রেরি খুলে বসে থাকতেন। |
কী শীত, কী গ্রীষ্ম। শুধু শীতকালে একটার বদলে দুটো জামা পরতেন। যখন স্কুলের খুব নিচু ক্লাসে পড়ি তখন আমাদের লাইব্রেরি ছিল চালাঘর। পরে আমাদের পাড়ারই শূর কোম্পানির বদান্যতায় বড় বাড়িতে লাইব্রেরি স্থানান্তরিত হয়। কিন্তু লাইব্রেরির নাম বদল না-করেই শূর মেমোরিয়াল ইনস্টিটিউটে স্থানান্তরিত হল ইস্ট লাইব্রেরি। দোতলা বাড়ির একতলা ছিল আমাদের ছোটদের লাইব্রেরি। কিন্তু ছোটদের পাঠ্য বইয়ের সংখ্যা কম বলে ছোটদের আলাদা লাইব্রেরি চালানো খুবই কঠিন। তবুও অনিলদা ‘দেশ’ ইত্যাদি নানা পত্রিকার বিজ্ঞাপন থেকে বই বাছাই করে বড়দের লাইব্রেরির জন্য যেমন কিনতেন, তেমনই আমাদের ছোটদের লাইব্রেরির জন্যও ভাল অনুবাদের বই ইত্যাদি কেনা হত। বহু বছর হল আমি শুধু শিয়ালদাপাড়া-ছাড়া নই, পশ্চিমবঙ্গ ছেড়ে পশ্চিমে মুম্বইয়ে অনেকগুলো বছর কাটিয়েছি। আর ইতিমধ্যেই অনিলদা বছর দশেক বা তার বেশি হল ইহসংসারের মায়া কাটিয়েছেন। কিন্তু লাইব্রেরির মায়া কি কাটাতে পেরেছেন? মোহনলাল ভট্টাচার্য। রাহাবাড়ি, গুয়াহাটি |