মনের মানুষকে প্রেম নিবেদন। তার পর তাঁর হাতে তুলে
দেওয়া একটি...
না লাল গোলাপ নয়, এক বালতি জল!
ওটাই ‘প্রতিশ্রুতি’! আক্ষরিক অর্থেই ‘জীবন দেওয়ার’ প্রতিশ্রুতি!
আশির দশকে কে বালচন্দ্র পরিচালিত তামিল ছবি ‘তানির তানির’-এর (বাংলায় যার অর্থ ‘জল জল’) এই দৃশ্য চমকে দিয়েছিল দুনিয়াকে। তামিলনাড়ুর কোভিলপাত্তি অঞ্চলের জীবনযাত্রার উপরে ভিত্তি করে তৈরি হয়েছিল ছবিটি। ‘তানির তানির’-এর সেই দৃশ্য অনায়াসে পুনরভিনীত হতে পারে জেতপুর ও দেভালিয়ায়। গুজরাতের বডোদরা জেলার দু’টি গ্রাম।
জলের অভাব কী ভাবে প্রভাবিত করে ভারতের প্রত্যন্ত গ্রামগুলির দৈনন্দিন জীবনযাত্রা, তার একটা সার্বিক চিত্র বিশ্বের দরবারে পেশ করেছিল বালচন্দ্রের পুরস্কারজয়ী ছবিটি। দু’দশক আগের সেই ছবিই যেন ফের বাস্তব হয়ে উপস্থিত গুজরাতে।
কনে খুঁজতে নাজেহাল দুই গ্রামের পাত্রেরা। পাত্র ‘মন্দ’ নয়, তবু বেঁকে বসে পাত্রীপক্ষ! গ্রামে যে জল নেই! রোজকার প্রয়োজনীয় জল আনতেও গ্রামবাসীদের পেরোতে হয় বেশ কয়েক মাইল পথ।
শাহিদা বানু নামে দেভালিয়ার এক বাসিন্দার কথায়, “জলের অভাব এতটাই যে বাড়িতে অতিথি এলেও আমরা তাঁদের জল দিতে পারি না। পরিবর্তে দিতে হয় এক বোতল ঠান্ডা পানীয়।” নর্মদা জেলা পঞ্চায়েত সদস্য হরিশ বাসব সমস্যার কথা স্বীকার করে নিয়ে বলেন, “মূলত খাওয়ার জলের সমস্যার জন্যই এই গ্রামে মেয়েদের পাত্রস্থ করতে চান না বাবা-মায়েরা।” ‘তানির তানির’-এ জলাভাব থেকে অব্যাহতি পেতে গ্রামবাসীরা নিজেরাই উদ্যোগী হয়েছিলেন। পুলিশ-প্রশাসন-সংবাদমাধ্যমের ‘নিষ্ক্রিয়তা’য় তাঁদের সে চেষ্টা অবশ্য ফলপ্রসূ হয়নি। জেতপুর আর দেভালিয়ার জন্যও একটা আশার আলো ছিল। গ্রাম দু’টি থেকে মাত্র তিরিশ কিলোমিটার দূরেই নর্মদার নদীর উপরে তৈরি সর্দার সরোবর বাঁধ প্রকল্প। তবে তাতে সুরাহা হয়নি কিছুই। প্রদীপের নীচের অন্ধকার হয়ে জেতপুর-দেভালিয়া থেকে গিয়েছে রুক্ষ-শুষ্কই। সর্দার সরোবর বাঁধ প্রকল্পের মাধ্যমে নিয়মিত নর্মদার জল সরবরাহ করা হয় উত্তর গুজরাত, সৌরাষ্ট্র, কচ্ছ এবং রাজস্থানে। অথচ, গুজরাতের ওই দুই গ্রামের প্রায় তিন হাজার বাসিন্দা তীব্র জলাভাবের মধ্যে বাস করেন প্রায় সারা বছরই। গরম কালে যা স্বাভাবিক ভাবেই আরও বাড়ে।
ভারতের ‘জল-ছবি।’ দু’দশকে যা পাল্টায়নি এতটুকুও। সিনেমায় এবং বাস্তবেও! |