কখনও লালকৃষ্ণ আডবাণী, কখনও নরেন্দ্র মোদী, কখনও আর কেউ। বিজেপির একাধিক নেতাকে নিশানা করে সামগ্রিক ভাবে প্রধান বিরোধী দলকে নাগাড়ে অস্বস্তিতে ফেলতে চাইছে কংগ্রেস। পাল্টা জবাব দিতে আজ তেড়েফুঁড়ে আসরে নামল বিজেপি। কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী পি চিদম্বরমের বিরুদ্ধে আর্থিক দুর্নীতির অভিযোগকে হাতিয়ার করে আজ সংসদের উভয় সভাই দফায় দফায় মুলতুবি করে দিল তারা।
বিজেপির দাবি, এয়ারসেল-ম্যাক্সিস চুক্তিতে পি চিদম্বরম নিজের ছেলে কার্তি-কে আর্থিক সুবিধা পাইয়ে দিয়েছেন। এর আগে টুজি-সংক্রান্ত দুর্নীতির অভিযোগে চিদম্বরমকে তুলোধোনা করে অবশ্য লাভ হয়নি বিজেপির। তাদের আশা ছিল, এক বার চিদম্বরমকে জেলে পাঠাতে পারলে সরাসরি মনমোহন সিংহকে কাঠগড়ায় দাঁড় করানো সম্ভব হবে। কিন্তু আদালত টুজি মামলায় প্রাক্তন অর্থমন্ত্রীকে রেহাই দিয়েছে। সঙ্ঘ নেতৃত্ব সে কারণে চিদম্বরমকে ছেড়ে সরাসরি গাঁধী পরিবারের বিরুদ্ধে আক্রমণের নির্দেশ দিয়েছেন। বফর্স বিতর্ক ফের মাথা তোলার পরে বিজেপি সেই চেষ্টা করেওছিল। কিন্তু পরক্ষণেই বঙ্গারু লক্ষ্মণ ঘুষ-কাণ্ডে জেলে যাওয়ায় সেই আশা জলাঞ্জলি দিতে হয়। গত কাল গুজরাত দাঙ্গায় মোদীর ভূমিকা তদন্ত করার প্রচার এবং বাবরি মসজিদ ধ্বংসের ঘটনায় আডবাণীর বিরুদ্ধে তদন্ত চালাতে সিবিআই হলফনামার পর আজ ফের এককাট্টা হল বিজেপি।
আজ সকালেই আডবাণী-সুষমা-অরুণ জেটলিদের উপস্থিতিতে বিজেপির সাংসদরা স্থির করেন এই মুহূর্তে চিদম্বরমের বিরুদ্ধে যে নতুন অভিযোগ হাতে এসেছে, তাকে অস্ত্র করেই কংগ্রেস-বিরোধিতায় সরব হবে দল। সদ্য এনডিএ-তে যোগ দেওয়া জনতা পার্টির সভাপতি সুব্র্যহ্মণম স্বামী অভিযোগ করেন, এয়ারসেল-ম্যাক্সিস চুক্তিতে তৎকালীন অর্থমন্ত্রী চিদম্বরম ‘ফরেন ইনভেস্টমেন্ট প্রোমোশন বোর্ড’-এর (এফআইপিবি) অনুমতি দিতে দেরি করেছিলেন। যাতে তাঁর ছেলে কার্তি চার হাজার কোটি টাকার চুক্তিতে পাঁচ শতাংশ অংশিদারিত্ব পেতে পারেন! এই নিয়েই আজ সংসদের উভয় সভায় হট্টগোল করেন বিজেপি সাংসদরা। বিজেপি মুখপাত্র রবিশঙ্কর প্রসাদ বলেন, “এই চুক্তি করতে কেন অহেতুক দেরি হল, সরকারকে তার জবাব দিতে হবে। এক দিকে সিবিআই সরকারের দুর্নীতির তদন্তে ঢিলেমি করছে, আর বিজেপির ক্ষেত্রে অতি-সক্রিয় ভূমিকা নিচ্ছে!”
কংগ্রেস নেতৃত্ব বুঝতে পারেন, বাবরি মসজিদের ঘটনায় সিবিআই নতুন করে তদন্ত করানোর কথা বলাতেই বিজেপি একজোট হয়ে আক্রমণাত্মক ভূমিকা নিচ্ছে। সরকারের ভাবমূর্তি অক্ষুণ্ণ রাখতে সংসদে তড়িঘড়ি বিবৃতিও দেওয়া হয়। প্রণব মুখোপাধ্যায়ের অর্থ মন্ত্রক চিদম্বরমের হয়ে লিখিত বিবৃতি জারি করে। পবন বনশল থেকে সলমন খুরশিদরা তথ্য দিয়ে দাবি করেন, “চুক্তিতে কোনও দেরিই করা হয়নি। বিজেপি ভিত্তিহীন অভিযোগ তুলছে।” কিন্তু সরকারের বক্তব্যে ‘সন্তুষ্ট’ হয়নি বিজেপি। অরুণ জেটলি প্রশ্ন তোলেন, “চুক্তির মাধ্যমে কাউকে কি কোনও সুবিধা পাইয়ে দেওয়া হয়েছে? সেই প্রশ্নটা সরকার এড়িয়ে যাচ্ছে কেন?”
|