শেষ অবধি, লাবানে, বিবেকানন্দের স্মৃতিধন্য বাড়িটি ‘ঐতিহ্য ক্ষেত্র’ হতে চলেছে।
শিলং রামকৃষ্ণ মিশনে, স্বামীজির দেড়শ বছরের জন্মজয়ন্তী উপলক্ষে অনুষ্ঠানে হাজির ছিলেন রাজ্যপাল রঞ্জিৎ শেখর মুশাহারি ও উপ মুখ্যমন্ত্রী বিন্দো এম লানোং। সেখানেই লানোং আনুষ্ঠানিকভাবে এই আশ্বাস দিলেন। উল্টোদিকে, শিলঙে আসার আগে, কামাখ্যার যে বাড়িটিতে মাকে সঙ্গে নিয়ে বিবেকানন্দ তেরাত্তির কাটিয়েছিলেন, সেই বাড়িটির সংরক্ষণে অবশ্য এখনও কোনও উদ্যোগ নেই। বিবেকানন্দের হাতে লেখা একটি শংসাপত্র রয়েছে সেখানে।
|
শিলঙের এই বাড়িতে স্বামীজি ছিলেন। |
স্বামী ব্রহ্মানন্দের দিনলিপি, স্বামী গম্ভীরানন্দের ‘যুগনায়ক বিবেকানন্দ’ বই থেকে জানা যায়, সম্ভবত ধুবুরি থেকে জলপথে অসমে এসেছিলেন স্বামীজি। ওঠেন কামাখ্যাধামে। সাহিত্যিক শঙ্কর জানান, সেই তাঁর শেষ তীর্থভ্রমণ। তাঁর মা সঙ্গে ছিলেন তা নিয়ে মতভেদ নেই। নীলাচল পাহাড়ের উপরে একটি দ্বিতল গৃহে আতিথ্য নিয়েছিলেন বিবেকানন্দ। বাড়ির বর্তমান মালিক নিরঞ্জন পাণ্ডা জানান, বাড়িটিতে ১৯০১ সালের ১৫ থেকে ১৭ এপ্রিল পর্যন্ত ছিলেন স্বামীজি। বাড়ির বাইরে স্বামী আত্মস্থানন্দজী যে ফলক উন্মোচন করেছেন, সেখানে অবশ্য লেখা স্বামীজি ১৭ এপ্রিল বাড়িটিতে ছিলেন।
মাকে নিয়ে দোতলার ছোট্ট একটি ঘরে ছিলেন স্বামীজি। সেই ঘরের মেঝেয় সিমেন্ট পড়লেও, টিন, মাটির ছাদটি প্রায় একই আকারে রয়েছে। ১২৫ বছরের বাড়িটির দোতলার ভগ্নপ্রায় দশা। ভিতরে স্বামীজির নানা সময়ের ছবি, কিছু ফ্রেমে বাঁধানো জীর্ণ নথি রয়েছে। তাঁরা যে খাটে শুয়েছিলেন সেটিও ভেঙেচুরে বারান্দায় পড়ে। নিরঞ্জনবাবুর কথায়, “বাড়ির সংরক্ষণ আমরাই সাধ্যমতো করি। মাটির বাড়ি পাকা হয়েছে। তাঁর স্মৃতি, তাঁর স্বহস্তে লিখে দেওয়া চিঠি আমাদের পরিবারের সম্পদ।” অবশ্য সেই চিঠি এখন বাইরের কাউকে দেখতে দেন না তাঁরা। সেটির বয়ানের অসমীয় ও ইংরাজি অনুবাদ মন্দিরের ট্যাক্সি স্ট্যান্ডে, বিবেকানন্দ মূর্তির বেদীতে উর্ৎকীণ। |
কামাখ্যার এই বাড়িতেই স্বামীজি তাঁর মাকে নিয়ে উঠেছিলেন। |
অসমবাসের সময় থেকেই বিবেকানন্দের শরীর ভেঙে পড়ে। এরপর স্বাস্থ্যোদ্ধারের উদ্দেশে স্যর হেনরি কটনের আমন্ত্রণে স্বামীজি শিলঙে যান। শিলঙে এসে শারীরিক দিক থেকে সুস্থ বোধ করছিলেন বিবেকানন্দ। তিনি লিখে যান, মা যেমন শিশুকে সব কষ্ট থেকে আরাম দেন, তেমনই শিলং তাঁকে আগলে রেখেছিল। শিলং রামকৃষ্ণ মিশনের প্ল্যাটিনাম জয়ন্তী এই বছর। সেই সঙ্গে স্বামীজির শিলং আগমনেরও ১১১ বছর। ১ মে রামকৃষ্ণ মঠ ও মিশন ১১৫ বছরে পা দেবে। তাই শিলংয়ের ওই বাড়িটিকে ঐতিহ্যশালী ভবনের মর্যাদা দেওয়ার দাবি উঠেছিল।
রামকৃষ্ণ মিশনের উৎসবে এসে মেঘালয়ের উপ-মুখ্যমন্ত্রী বলেন, “আমি আমার ও রাজ্য সরকারের তরফে সর্বতোভাবে চেষ্টা চালাব যাতে, দ্রুত বিবেকানন্দের স্মৃতিধন্য বাড়িটি ‘ঐতিহ্য ক্ষেত্র’-র তকমা পায়। মেঘালয়ের প্রশাসন বিষয়ক মন্ত্রী এ এল হেকের হাতে চারদফা স্মারকলিপি তুলে দেন শিলং মিশনের সচিব অচ্যূতেশানন্দজী। লাবানের বাড়ি ও জমিটি অধিগ্রহণ করে তাকে ঐতিহ্যক্ষেত্র ঘোষণা করার দাবি জানানো হয়েছে এই স্মারকলিপিতে। কুইনটন রোডের নাম রামকৃষ্ণ-বিবেকানন্দ রোড করা ও স্বামীজির সার্ধশতবর্ষ উপলক্ষে উদযাপন কমিটি গঠনেরও দাবি করা হয়েছে।
|