কেন্দ্রীয় সাহায্য পাওয়ার মাসখানেকের মধ্যেই জোর ধাক্কা খেল এয়ার ইন্ডিয়ার পুনরুজ্জীবনের চেষ্টা। আর এ বার কাঠগড়ায় ‘ঘরের’ ছেলেরাই।
বিশ্বের আধুনিকতম ড্রিমলাইনার বিমান চালানোর প্রশিক্ষণ কাদের মিলবে, তা নিয়ে কর্তৃপক্ষের সঙ্গে মতানৈক্যের জেরে সোমবার রাত থেকে এয়ার ইন্ডিয়ার বিমান পরিষেবা কার্যত স্তব্ধ করে দিলেন দেড়শোরও বেশি বিমানচালক। বাতিল হল পাঁচটি আন্তর্জাতিক উড়ান। কেউ দেশে ফিরতে পারলেন না, কেউ হারালেন বিদেশে চাকরির সুযোগও। পরিস্থিতি সামলাতে কড়া ব্যবস্থা নিয়েছে বিমান সংস্থাও। অচলাবস্থা তৈরির অভিযোগে মঙ্গলবার দুপুরেই ১০ জন বিমানচালককে বরখাস্ত করেছে এয়ার ইন্ডিয়া। বিমানচালকদের চড়া সুরে ভর্ৎসনা করেছে কেন্দ্রও।
অচলাবস্থার শুরু সোমবার রাত ১২টা থেকে। এর কিছু ক্ষণ আগে সংস্থা কর্তৃপক্ষ এবং চালকদের মধ্যে দাবিদাওয়া সংক্রান্ত আলোচনা ব্যর্থ হয়। তার পরেই ধর্মঘটের ডাক না দিলেও দিল্লি ও মুম্বইয়ের ১৫৭ জন বিমানচালকের প্রত্যেকেই অসুস্থতার কারণ দেখিয়ে কাজে যোগ দেননি। তাঁদের অভিযোগ, কর্তৃপক্ষ সময়ে পদোন্নতি করছেন না, প্রশিক্ষণের সুযোগেও পক্ষপাত হচ্ছে। এর জেরে সোমবার রাত থেকে বিমানবন্দরেই দাঁড়িয়ে দিল্লি-শিকাগো, দিল্লি-টরন্টো, দিল্লি-সিঙ্গাপুর, মুম্বই-হংকং
এবং মুম্বই-নিউ জার্সি রুটের যাত্রীরা।
তবে কলকাতা থেকে কাঠমাণ্ডু ও ইয়াঙ্গন রুটে এয়ার ইন্ডিয়ার দুটি উড়ান নির্দিষ্ট সময়েই চলেছে। |
আচমকা ‘অসুস্থ’ এয়ার ইন্ডিয়ার প্রায় দেড়শো পাইলট। ফলে সোমবার রাত থেকে বাতিল
একের পর এক উড়ান।
সেই ছবিই দেখা গেল মঙ্গলবার সকালে মুম্বই বিমানবন্দরে।
এই অচলাবস্থার
জন্য ১০ পাইলটকে বরখাস্ত করেছে বিমান সংস্থা। ছবি: পি টি আই |
এয়ার ইন্ডিয়া কর্তৃপক্ষ যদিও সাফ জানিয়েছেন, এই অচলাবস্থা চলতে দেওয়া যাবে না। অনুপস্থিত ১০ জন বিমানচালককে বরখাস্ত করা হয়েছে, বাতিল হয়েছে তাঁদের ইউনিয়ন ‘ইন্ডিয়ান পাইলট্স গিল্ড’-এর স্বীকৃতি। দিল্লি, মুম্বইয়ে ওই সংগঠনের কার্যালয় বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। যে বিমানচালকেরা নিজেদের অসুস্থ বলে দাবি করছেন, ‘বাস্তব’ জানতে তাঁদের বাড়িতে বিমান সংস্থার পক্ষ থেকে চিকিৎসক পাঠানো হয়েছে বলেও খবর। এয়ার ইন্ডিয়া কর্তৃপক্ষ হুঁশিয়ারি দেন, মঙ্গলবার সন্ধ্যা ৬টার মধ্যে বাকি অনুপস্থিত চালকরা কাজে যোগ না দিলে তাঁদের ক্ষেত্রেও কড়া ব্যবস্থা নেওয়া হবে। বিমানচালকদের গিল্ড যদিও এয়ার ইন্ডিয়া কর্তৃপক্ষকেই এই পরিস্থিতির জন্য দায়ী করে জানিয়েছে, সাম্প্রতিক বৈঠকগুলিতে সংস্থার কর্তারা চালকদের বিভিন্ন দাবির পরিপ্রেক্ষিতে যা যা প্রতিশ্রুতি দেন, সোমবার বৈঠকে তার সবই খারিজ করে দিয়েছেন সংস্থার চেয়ারম্যান। ফলে বিমানচালকদের হাতে আর কোনও উপায় ছিল না।
কেন এই অচলাবস্থা? এই মুহূর্তে বিশ্বের আধুনিকতম বলে স্বীকৃত বোয়িং ৭৮৭ ড্রিমলাইনার বিমান মাসখানেকের মধ্যেই এয়ার ইন্ডিয়ার হাতে আসছে। সেই বিমান চালানোর প্রশিক্ষণ দিতে চালকদের তালিকাও বানিয়েছে সংস্থা। সেখানেই সমস্যার শুরু। চালকদের একাংশের অভিযোগ, প্রশিক্ষণের জন্য অগ্রাধিকার পাচ্ছেন তাঁরাই, যাঁরা এক সময় ইন্ডিয়ান এয়ারলাইন্সে ছিলেন এবং এয়ার ইন্ডিয়ার সঙ্গে ওই সংস্থা মিশে যাওয়ার পর এয়ার ইন্ডিয়ার চালক হিসেবে রয়েছেন। বিক্ষুব্ধ চালকদের অভিযোগ, এই ‘পক্ষপাতিত্বের’ ফলে প্রথম থেকে এয়ার ইন্ডিয়ার সঙ্গে যুক্ত বিমানচালকেরা প্রযুক্তিগত ভাবে অনেক পিছিয়ে পড়বেন এবং তাঁদের পদোন্নতির সুযোগও কমবে।
এই বিষয়ে এয়ার ইন্ডিয়ার কিছু ‘প্রবীণ’ বিমানচালককে নিয়ে আগে শীর্ষ আদালতেও গিয়েছিল ইন্ডিয়ান পাইলট্স গিল্ড। কিন্তু সেখানে অভিযোগ টেকেনি। সুপ্রিম কোর্ট জানায়, সংযুক্তিকরণের পর সব বিমানচালকই খাতায়কলমে এয়ার ইন্ডিয়ার কর্মী। কর্তৃপক্ষ প্রশিক্ষণের জন্য ইচ্ছামতো বিমানচালকদের নাম স্থির করতে পারে। সেটাকে এ রকম বিভাজনের দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে দেখা যাবে না। ফলে ঘটনাটি কেউই ভাল ভাবে নিচ্ছেন না। পরিস্থিতি বুঝে কিছুটা সুর নরম করেছে পাইলট্স গিল্ডও। মঙ্গলবার দুপুরে এয়ার ইন্ডিয়া কড়া হাতে অচলাবস্থা কাটাতে উদ্যোগী হওয়ার কিছু ক্ষণ পরেই গিল্ডের প্রেসিডেন্ট তথা এনসিপি নেতা জিতেন্দ্র অওহাদ জানিয়েছেন, সমস্যা মেটাতে যে কোনও রকম আলোচনায় তাঁরা রাজি। এমনকী এই নিয়ে কেন্দ্রীয় বিমানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপও দাবি করেছেন তিনি।
বিমানমন্ত্রী অজিত সিংহ যদিও গিল্ডের কোনও ব্যাখ্যা এখনই মানতে নারাজ। তাঁর কথায়, “ক্ষোভ সবার থাকতে পারে। তবে আলোচনার পথ আগেও খোলাই ছিল। বিমান সংস্থা যদি চালকদের কথা না শোনে তবে তাঁরা আমার কাছেও আসতে পারতেন। সেটা না করে অসুস্থ বলে কাজ বন্ধ করে দেওয়াটা বেআইনি। সরকার ওই সংস্থাকে টাকা দিয়েছে নির্দিষ্ট সময়ে ভাল কাজ করে দেখানোর জন্য। সেখানে সংস্থার বিমানচালকেরা যাত্রীদের এ ভাবে উৎকণ্ঠার মধ্যে ফেলতে পারেন না।” পরে মন্ত্রী বলেন, “এয়ার ইন্ডিয়া চলবে না বন্ধ হবে, সেটা ওদের কর্মীদেরই ভাবতে হবে।” |