সুপ্রিম কোর্টের রায় সত্ত্বেও ভোডাফোনকে যে কর ছাড় দেওয়া হবে না, সেই ইঙ্গিত গত কালও দিয়েছেন তিনি। অর্থবিল নিয়ে জবাবি বক্তৃতায় আজ সেই প্রসঙ্গেই বিচার ব্যবস্থাকে কড়া বার্তা দিলেন কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী তথা লোকসভার নেতা প্রণব মুখোপাধ্যায়। তাঁর কথায়, “সর্বোচ্চ আদালত কোনও বিষয়ে রায় দিতে পারে ঠিকই। কিন্তু বৃহত্তর উদ্দেশ্যে তা সংশোধনের অধিকারও আইনসভার সদস্যদের রয়েছে। ভুলে গেলে চলবে না সামাজিক আইন প্রণয়নের প্রশ্নে ইন্দিরা গাঁধী এক বার সরকার ভেঙে দিয়ে ভোটে যেতেও দ্বিধা করেননি।”
সম্প্রতি টুজি মামলার রায় নিয়ে সর্বোচ্চ আদালতের কাছে রাষ্ট্রপতির মাধ্যমে ব্যাখ্যা চেয়ে (প্রেসিডেন্সিয়াল রেফারেন্স) বিচার ব্যবস্থাকে এক প্রস্ত বার্তা দিয়েছে সরকার। কিন্তু সংসদে দাঁড়িয়ে সরকারের কোনও নেতার তরফে আদালতকে এমন বার্তা দেওয়ার নজির সাম্প্রতিক কালে ঘটেনি। রাজনৈতিক নেতাদের একটা বড় অংশ মনে করেন, গত কয়েক বছরে টুজি থেকে শুরু করে বেশ কিছু মামলায় সর্বোচ্চ আদালতের বিভিন্ন পর্যবেক্ষণ নিয়ে সরকারের মধ্যে উষ্মা তৈরি হয়েছে। বিশেষত টুজি মামলায় ডিএমকে নেতা করুণানিধির সাংসদ-কন্যা কানিমোঝির জামিন নিয়ে শীর্ষ আদালত দেরি করায় কংগ্রেস নেতারা তো বটেই বিজেপি-র নেতারাও সমালোচনা করেন। প্রণববাবুর আজকের মন্তব্যকে বিচার ব্যবস্থার ‘অতিসক্রিয়তার’ বিরুদ্ধে বার্তা হিসাবে দেখা হচ্ছে।
ব্রিটিশ সংস্থা ভোডাফোন ২০০৭ সালে হংকংয়ের হাচিসন এসার-এর ৬৭ শতাংশ শেয়ার কিনে নেয়। বিদেশের মাটিতে সেই চুক্তি সই হয়েছে, এই যুক্তি দেখিয়ে ভোডাফোন কর দিতে চায়নি। সুপ্রিম কোর্ট সম্প্রতি এ ব্যাপারে ভোডাফোনের পক্ষেই রায় দেয়। কিন্তু এ ধরনের লেনদেনে কর ফাঁকি রুখতে তার পরেই বাজেটে আয়কর আইন সংশোধনের প্রস্তাব দেয় কেন্দ্র।
অর্থবিল নিয়ে জবাবি বক্তৃতায় সেই প্রসঙ্গেই প্রণব বলেন, বিচার ব্যবস্থা কোনও বিষয়ে আইনের এক রকম ব্যাখ্যা করতে পারে। কিন্তু দেশের স্বার্থে তা শোধরানোর অধিকার রয়েছে আইনসভার সদস্যদের। সংবিধানেই এই অধিকার দেওয়া আছে তাঁদের। ১৯৫১ সালে ঠিক এই কারণেই প্রথম বার সংবিধান সংশোধন করা হয়েছিল। কারণ, তখন সর্বোচ্চ আদালতের একটি রায়ে আইনসভার মনোভাবের যথাযথ প্রতিফলন ঘটেনি। আর সেই কারণেই সংবিধান সংশোধন করেছিল আইনসভা। প্রণববাবু মনে করিয়ে দিতে বলেন “সুপ্রিম কোর্টের বিরুদ্ধে আমরা কবে লড়াই করিনি? গোলকনাথ মামলা ও কেশবানন্দ ভারতী মামলায় কি সুপ্রিম কোর্টের বিরুদ্ধে লড়াই করিনি?” তাঁর কথায়, “১৯৫০ থেকে শুরু করে ১৯৬৮ পর্যন্ত সাধারণ ধারণা ছিল যে সংসদ চাইলে সংবিধানের যে কোনও অংশ সংশোধন করতে পারে। কিন্তু গোলকনাথ মামলায় সুপ্রিম কোর্ট জানিয়ে দেয়, সংসদ নাগরিকদের মৌলিক অধিকারের পরিবর্তন করতে পারে না। সেই সঙ্গে ব্যাঙ্ক জাতীয়করণ-সহ একাধিক আইন ও সামাজিক আইন খারিজ করে দেয় শীর্ষ আদালত। কিন্তু তার বিরুদ্ধে সরব হয়ে ভোটে চলে গিয়েছিলেন ইন্দিরা গাঁধী।
শুধু শাসক জোটের সাংসদরা নন বিরোধী শিবিরের নেতারাও কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রীর এই বক্তব্যকে আজ জোরালো সমর্থন জানান। এই প্রেক্ষিতে পরে কংগ্রেসেরই এক শীর্ষ নেতা বলেন, “রাষ্ট্রপতি পদে প্রণব মুখোপাধ্যায়কে কংগ্রেস প্রার্থী করবে বলে জল্পনা চলছে ঠিকই। কিন্তু তাঁকে প্রার্থী করলে সরকার তথা কংগ্রেসের কী রকম অসুবিধায় পড়বে, আরও এক বার দেখা গেল। এ ভাবে দাপটের সঙ্গে সংসদে বক্তৃতা কংগ্রেসের আর ক’জনই বা করতে পারবেন!” |