হজে ভর্তুকি বন্ধ করার নির্দেশ সুপ্রিম কোর্টের
জযাত্রীদের জন্য সরকারি ভর্তুকি ১০ বছরের মধ্যে ধাপে ধাপে তুলে দেওয়ার নির্দেশ দিল সুপ্রিম কোর্ট। শীর্ষ আদালতের বক্তব্য, সেই টাকা বরং মুসলিমদের শিক্ষা এবং সামাজিক উন্নয়নে খরচ করা হোক। সেই সঙ্গে আফতাব আলম এবং রঞ্জনা প্রকাশ দেশাইয়ের বেঞ্চ আজ জানিয়ে দিয়েছে, তাঁরা কেন্দ্রীয় এবং রাজ্য হজ কমিটির কাজ বিশেষত কমিটি কী ভাবে হজযাত্রীদের বাছাই করে, তা খতিয়ে দেখবেন।
হজযাত্রীদের সংখ্যা প্রতি বার নির্দিষ্ট করে দেয় কেন্দ্র। যেমন এ বছর সংখ্যাটা ১ লক্ষ ১৪ হাজার। তবে হজযাত্রীদের ক্ষেত্রে কেন্দ্র শুধু বিমান ভাড়ায় অনুদান দেয়। হজযাত্রীদের সৌদি আরবে নিয়ে যায় এয়ার ইন্ডিয়া। ভর্তুকির টাকা দেওয়া হয় তাদেরই। ফলে বিমানভাড়ায় বড় রকমের ছাড় পান যাত্রীরা। যেমন কেন্দ্রীয় হজ কমিটির সদস্য ফুয়াদ হালিম জানান, কলকাতা থেকে জেড্ডা যাতায়াতের জন্য মাথাপিছু ভাড়া গড়ে ৩০ হাজার টাকা। হজ কমিটি হজযাত্রীদের থেকে বিমান ভাড়া বাবদ নেয় মাথা পিছু ১৬ হাজার টাকা। বাকি ১৪ হাজার টাকা কেন্দ্র ভর্তুকি দেয়।
সম্প্রতি হজযাত্রীদের ব্যবস্থাপনা নিয়ে বম্বে হাইকোর্টের এক নির্দেশকে চ্যালেঞ্জ করে সুপ্রিম কোর্টে যায় বিদেশ মন্ত্রক। কিন্তু শীর্ষ আদালত শুধু সেই বিষয়েই সীমাবদ্ধ না থেকে হজযাত্রীদের সরকারি ভর্তুকির নীতিটিরই বৈধতা বিচার করেছে। এ দিন রায়ের সপক্ষে কোরান থেকে উদ্ধৃতি দেন বিচারপতিরা। বলেন, আদালত দেশের সব মুসলিমের প্রতিনিধি নয়। মুসলিমদের জন্য কোনটা ভাল, কোনটা ঠিক ধর্মাচরণ, তা বলার অধিকারী নয় আদালত। তবু আদালতের মনে হয়, হজযাত্রীদের বড় অংশ জানেন না, সরকার তাঁদের যাত্রায় ভর্তুকি দেয়। জানলে বিব্রতই হবেন। আদালত এ-ও বলেছে, বহু ধর্মীয় উৎসবে সরকার সাহায্য করে ঠিকই। তবু হজে ভর্তুকি বন্ধ করা উচিত বলেই তাঁদের মনে হয়।

ভর্তুকি রায়
• ১০ বছরের মধ্যে ধাপে ধাপে ভর্তুকি বন্ধ
• ভর্তুকি বাবদ টাকা মুসলিমদের শিক্ষা ও সামাজিক উন্নয়নে খরচ হোক
• সরকারি প্রতিনিধিদল পাঠানো বন্ধ হোক
• বিভিন্ন রাজ্যের হজ কমিটির কাজ পর্যালোচনা হবে
• হজযাত্রীদের বাছাই পদ্ধতি জানাতে হবে
• হজযাত্রীদের থেকে কত টাকা নেওয়া হচ্ছে, আর কী সুবিধা দেওয়া হচ্ছে, জানাতে হবে

সংখ্যাতত্ত্ব ভর্তুকির পরিমাণ
• ২০১১: হজযাত্রীর সংখ্যা ১ লক্ষ ২৫ হাজার • ৬৮৫ কোটি টাকা (বিমানভাড়া বাবদ)

সূত্র: পিটিআই

হজযাত্রীদের সঙ্গে সরকারি খরচে প্রধানমন্ত্রীর শুভেচ্ছা-দূত হিসেবে প্রতিনিধিদল পাঠানোর তীব্র সমালোচনা আগেই করেছিল সুপ্রিম কোর্ট। আজ বেঞ্চ এই প্রতিনিধিদল পাঠানো বন্ধ করার নির্দেশ দিয়ে বলেছে, হজযাত্রীদের সঙ্গে বড়জোর দু’জন প্রতিনিধিকে পাঠাতে পারে সরকার। শুধু তা-ই নয়, যে ভাবে ওই প্রতিনিধিদল গঠন করা হয়, তাতেও ‘পাইয়ে দেওয়ার’ নীতিই দেখতে পেয়েছে শীর্ষ আদালত। আদালতের বক্তব্য, ১৯৬৫ সালে যুদ্ধের পর পাকিস্তান হজযাত্রীদের মধ্যে ভারত-বিরোধী প্রচারের চেষ্টা করত। তখন পাল্টা প্রচারের জন্য সরকারি প্রতিনিধিদল পাঠানোর প্রয়োজন ছিল। কিন্তু এখন আর তার দরকার নেই।
কেন্দ্রীয় সংখ্যালঘু উন্নয়ন বিষয়ক মন্ত্রী সলমন খুরশিদ রায়কে স্বাগত জানিয়েছেন। তাঁর বক্তব্য, কেন্দ্র হজযাত্রীদের ভর্তুকি তুলতে ৪ বছর ধরে আলোচনা করছে। তবে হজযাত্রীদের উপর যাতে আর্থিক চাপ না বাড়ে, তা-ও সরকার দেখবে। ২০১২ সালে এই ভর্তুকি বাবদ কেন্দ্র কত টাকা খরচ করছে, তা জানতে চেয়েছিল সুপ্রিম কোর্ট। সরকারের তরফে বলা হয়েছে, হজযাত্রীরা ভারতে ফিরলে তবেই পূর্ণাঙ্গ হিসেব দেওয়া সম্ভব।
এই ভর্তুকি তুলে দিতে সম্প্রতি সংসদে সওয়াল করেন মজলিস-ই ইত্তেহাদুল মুসলিমিন প্রধান আসাদুদ্দিন ওয়াইসি। তাঁর বক্তব্য, সৌদি আরবের সঙ্গে চুক্তি অনুযায়ী শুধু এয়ার ইন্ডিয়া এবং সৌদি এয়ারলাইন্স হজযাত্রীদের নিয়ে যাতায়াত করে। সরকার বরং এই চুক্তি পর্যালোচনা করুক, বিমানসংস্থা ঠিক করতে টেন্ডার ডাকা হোক, তাতে ভাড়া কমবে। কংগ্রেসের সাংসদ সৈফুদ্দিন সোজও বলেছেন, তিনি আগেই ২০ জন মুসলিম সাংসদকে সঙ্গে নিয়ে কেন্দ্রের কাছে এই ভর্তুকি বন্ধ করতে অনুরোধ করেছিলেন। বরং মালয়েশিয়ার আদলে হজযাত্রীদের জন্য একটি নিগম তৈরি করা হোক, যাতে হজযাত্রীরা সরাসরি কিছু সুবিধা পেতে পারেন।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.