|
|
|
|
স্কুলে গ্রন্থাগার গড়লেন গ্রামের ছেলে |
নিজস্ব সংবাদদাতা • নানুর |
স্কুল ফাইনাল পরীক্ষার পরেই গ্রাম ছেড়ে ছিলেন। কর্মসূত্রে ঘুরে বেড়িয়েছেন আমেরিকা, কানাডা, জার্মানি, ফ্রান্স প্রভৃতি দেশ। কিন্তু কখনও নিজের গ্রামকে ভোলেননি। নানুর থানার রানিবাজারের ভূমিপুত্র চাঁদকুমার মণ্ডল নিজের অভিজ্ঞতায় উপলব্ধি করেছেন, শিক্ষাই মানুষকে প্রকৃত সমৃদ্ধ করে তোলে। তাই জমি কিনে গ্রামের জুনিয়র হাইস্কুলের জন্য তৈরি করে দিয়েছেন একটি গ্রন্থাগার।
১৯৯৬ সালে ‘রানিবাজার বিদ্যাসাগর বিদ্যাতীর্থ’ জুনিয়র হাইস্কুল স্থাপিত হয়। কিন্তু ওই স্কুলে এতদিনেও কোনও গ্রন্থাগার ছিল না। ফলে পাঠ্যবইয়ের পরিপূরক বই কিংবা গল্পের বই পড়ার তেমন সুযোগ মেলেনি পড়ুয়াদের। এ বার সেই অভাব দূর করে দিলেন গ্রামেরই কৃতি সন্তান চাঁদকুমারবাবু। ১৯ শতক জায়গা কিনে বাবা প্রয়াত স্বাধীনতা সংগ্রামী মন্মথ মণ্ডলের নামে দু’টি ঘরের একটি গ্রন্থাগার স্কুল কর্তৃপক্ষকে তৈরি করে দিয়েছেন। দিয়েছেন দেড় হাজার বই-ও। সেই হিসাব অনুযায়ী সব মিলিয়ে খরচ পড়েছে প্রায় সাড়ে ৬ লক্ষ টাকা। সম্প্রতি আনুষ্ঠানিক
|
চাঁদকুমার মণ্ডল।
ছবি: সোমনাথ মুস্তাফি। |
ভাবে ওই গ্রন্থাগারের উদ্বোধন হয়। অনুষ্ঠানে হাজির ছিলেন স্থানীয় বিধায়ক গদাধর হাজরা এবং কেতুগ্রামের বিধায়ক শেখ সাহানেওয়াজ। আপ্লুত দুই বিধায়ক বলেন, “চাঁদকুমারবাবুর উদারতায় আমরা অভিভূত। তাঁর দানে এই স্কুল সমৃদ্ধ হবে।” খুশি পড়ুয়ারাও। অষ্টম শ্রেণির ছাত্রী স্বর্ণালী ঘোষ, ষষ্ঠ শ্রেণির চন্দন মণ্ডলদের উচ্ছ্বাস, “এতদিন পাঠ্য বইয়ের বাইরে অন্য কোনও বই পড়ার সুযোগ ছিল না। এ বার আমরা গ্রন্থাগার থেকে ইচ্ছেমত বই পড়তে পারব!” স্কুলের প্রধান শিক্ষক জয়দীপ মিত্র বলেন, “স্কুলের একটা বড় সংখ্যক ছাত্রছাত্রীই দুঃস্থ পরিবারের। অনেকের পাঠ্যবই কেনারও সামর্থ্য নেই। এমন পড়ুয়াদের জন্য গ্রন্থাগারে পাঠ্যবই রাখার ব্যবস্থা হয়েছে।” এখানেই থেমে নেই চাঁদকুমারবাবু। হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ চাঁদকুমারবাবু বর্তমানে বর্ধমানের রানিগঞ্জের বাসিন্দা। প্রতিমাসের শেষ রবিবার নিজের গ্রামের বাড়িতে এসে বিনামূল্যে তিনি স্থানীয়দের চিকিৎসা করেন। স্থানীয় বাসিন্দা শান্তিরাম ঘোষ, রশিদ খান, গিরিধারী পালরা বলেন, “বিনামূল্যে চিকিৎসা করে চাঁদকুমারবাবু আমাদের যে উপকার করছেন তা কোনও ভাবেই শোধ করা যায় না।” চাঁদবাবু বলেন, “আমাদের ছেলেবেলায় গ্রন্থাগার তো দূরের কথা, আমাদের পড়তে যেতে হত বর্ধমানের মঙ্গলকোট স্কুলে। কিন্তু অভিজ্ঞতায় বুঝেছিলাম, প্রকৃত পড়াশোনার জন্য বিভিন্ন বিষয়ের বই পড়া দরকার। গ্রামের ছেলেমেয়েদের সেই সুযোগ করে দিতেই আমার এই উদ্যোগ।” তিনি আরও বলেন, “যে মাটিতে জন্মেছি, বড় হয়েছি, ডাক্তার হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিসেখানকার মানুষদের পাশে থাকাটা আমার কর্তব্য বলেই মনে করি।” |
|
|
|
|
|