মৃত বধূর স্বামী পতিতপাবন সরকার মঙ্গলবার বলেন, “চুমকির দিদা অসুস্থ। তাই ছেলেকে নিয়ে ওঁকে দেখতে আমার শ্বশুরবাড়ি সদাইপুরের হাজরাপুরে গিয়েছিলাম। আগুন লাগার খবর পেয়ে ছুটে আসি।” পতিতপাবনবাবুর আরও অভিযোগ, “আমারই গ্রামের ছেলে অসীমের সঙ্গে আমার স্ত্রীর বিবাহ বহির্ভূত সম্পর্ক গড়ে উঠেছিল বলে জেনেছিলাম। গত রাতে আমাদের বাড়ি না থাকার সুযোগ নিয়ে অসীম এসেছিল। লোকজানাজানি হতেই আমার স্ত্রীকে আগুন লাগিয়ে দেয় পালানোর মতলবে ছিল অসীম। কিন্তু সে-ও পুড়ে যায়। আমি অসীমের নামে রাজনগর থানায় অভিযোগ দায়ের করব।” এলাকাবাসীর একাংশ অবশ্য প্রশ্ন তুলেছেন, কেন স্ত্রীকে একা বাড়িতে একা রেখে তাঁরই দিদাকে দেখতে শ্বশুরবাড়ি গিয়েছিলেন পতিতপাবনবাবু।
পুলিশের দাবি, অগ্নিদগ্ধ অসীম তাদের জানিয়েছেন, গ্রামবাসীদের হাতে ধরা পড়ার পরেই কেরোসিন তেল ঢেলে নিজের গায়ে প্রথমে নিজের গায়ে আগুন লাগান চুমকি। পরে যন্ত্রণায় অসীমকে জড়িয়ে ধরলে তাঁর গায়েও আগুন লাগে। জ্বলন্ত অবস্থায় কোনও রকমে পিছনের দরজা খুলে বাইরে বেরিয়ে আসতে সমর্থ হন অসীম। কিন্তু চুমকি চিলেকোঠার ঘরে গিয়ে মারা যান।
পুলিশ এই দাবি করলেও সিউড়ি হাসপাতালের বিছানায় শুয়ে অসীমের পাল্টা বক্তব্য, “বাড়ি থেকে পাশের কুন্ডীরা গ্রামে কীর্তন শুনতে যাওয়ার পথে চুমকিদের মুদির দোকানে বসে কিছুক্ষণ গল্প করছিলাম। তখনই গ্রামের জনা দশেক লোক এসে আমাকে মারধর করে। আমাদের দু’জনকে ঘরের ভিতরে ঢুকিয়ে গায়ে কেরোসিন ঢেলে আগুন লাগিয়ে দিয়ে বাইরে থেকে দরজা বন্ধ করে দেয়। আমি পিছনের দরজা খুলে বাইরে আসতে পারলেও চুমকি পারেনি।” অসীমের স্ত্রী হাসু মণ্ডল তাঁর স্বামীর সঙ্গে চুমকির বিবাহ বহির্ভূত সম্পর্কের অভিযোগের কথা মানতে চাননি, তিনিও বলেন, “আমার স্বামী সন্ধ্যার পর বাড়ি থেকে বের হন না। গত রাতেই শুধু কীর্তন শুনতে গিয়েছিলেন। যাদের জন্য আমার স্বামীর এই অবস্থা, তাদের বিরুদ্ধে রাজনগর থানায় অভিযোগ করব।”
বীরভূমের পুলিশ সুপার হৃষিকেশ মিনা বলেন, “ওই বধূর মৃত্যু সন্দেহজনক। মঙ্গলবার দুপুর পর্যন্ত কোনও পক্ষই অভিযোগ করেনি। কিন্তু, কী ভাবে আগুন লাগল, এটা খুন না আত্মহত্যা, সব দিক খতিয়ে দেখা হচ্ছে।” কে বা কারা বাইরে থেকে শিকল তুলে দিয়েছিল সেটাও তদন্ত করে দেখা হবে বলে পুলিশ সুপার জানিয়েছেন। |