আল-কায়দা তথা তালিবানি শক্তি এবং পাকিস্তানি জঙ্গিরা সম্মিলিত ভাবে, নতুন উদ্যমে পশ্চিমবঙ্গে ঢোকার চেষ্টা করছে বলে জানতে পেরেছেন গোয়েন্দারা। পশ্চিমবঙ্গ তথা ভারতের ক্ষেত্রে সেই ‘তালিবানিকরণ’ যাতে না হয়, সে জন্য মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে কথা বলেছেন হিলারি ক্লিন্টন। গত কালের বৈঠকে মুখ্যমন্ত্রীও হিলারিকে জানিয়ে দিয়েছেন, পশ্চিমবঙ্গের মাটিকে জঙ্গিরা যাতে ব্যবহার করতে না পারে, তা সুনিশ্চিত করতে তিনি বদ্ধপরিকর।
পশ্চিমবঙ্গে মৌলবাদী শক্তি খুব সামান্য হলেও রয়েছে। তাদের মাধ্যমেই সাম্প্রদায়িক কালে রাজ্যে হিংসা ছড়াতে চাইছে পাকিস্তান এবং আল-কায়দা। এবং তার সঙ্গে নাশকতামূলক কার্যকলাপকে জড়িয়ে দিতে চাইছে। বাংলাদেশের সঙ্গে ভারতের সম্পর্ক খারাপ হলে এই মৌলবাদী শক্তি মাথাচাড়া দেবে বলেই মনে করছে আমেরিকা। মমতা দ্ব্যর্থহীন ভাষায় হিলারিকে জানিয়েছেন, তিনিও সেটা বোঝেন। মৌলবাদী শক্তিকে তিনি মাথাচাড়া দিতে দেবেন না। প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে তাঁর এ নিয়ে কথাও হয়েছে বলে জানিয়েছেন মমতা।
তৃণমূল সূত্র বলছে, মমতার সঙ্গে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের সম্পর্ক ভাল। বাঙালি ও উর্দুভাষী, রাজ্যের দুই সংখ্যালঘু সম্প্রদায়কেই মমতা কাছ থেকে জানেন। তাই তাঁর পক্ষে এর মোকাবিলা করা সহজ। কারণ তিনি মৌলবাদী শক্তিকে সহজেই চিহ্নিত করে বিচ্ছিন্ন করতে পারেন। এ বার কলকাতায় কিছু ব্যক্তি হিলারির সঙ্গে বৈঠক না করার জন্য মমতার কাছে আর্জি জানিয়ে বিবৃতি দিয়েছিলেন। কিন্তু মমতা তাতে কান দেননি। কারণ তিনি মনে করেছেন, রাজ্যের উন্নয়নের জন্যই হিলারির সঙ্গে বৈঠক প্রয়োজন।
মার্কিন বিদেশসচিবের কাছে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী এই বার্তা-ও দিয়েছেন, হাসিনার সঙ্গে তাঁর সম্পর্ক ভাল। তিনি তা আরও ভাল করতে চান। তিস্তা-চুক্তির বিষয়টি আলাদা। সেখানে পশ্চিমবঙ্গ যাতে বঞ্চিত না হয়, তিনি সেটাই দেখছেন। তার মানে এই নয় যে, তিনি পুরোপুরি তিস্তা-চুক্তির বিরোধী বা বাংলাদেশ সরকারের বিরুদ্ধে। পাক মদতে পুষ্ট নাশকতা দমন করতে পশ্চিমবঙ্গ সরকার ঢাকার সঙ্গে সমন্বয় আরও বাড়াবে বলেই তিনি জানান।
কিছু দিন আগে ইজরায়েলের রাষ্ট্রদূতও মমতার সঙ্গে দেখা করে জানিয়েছিলেন, তাদের গুপ্তচর সংস্থা মোসাদ নিরাপত্তার প্রশ্নে গোয়েন্দা-তথ্য দিয়ে সব সাহায্য করবে। কাল হিলারির সঙ্গে বৈঠকেও বাণিজ্য-লগ্নির পাশাপাশি নিরাপত্তার বিষয়টিও গুরুত্ব পেয়েছে। কারণ তালিবান এবং পাক জঙ্গিদের নতুন পরিকল্পনা নিয়ে উদ্বিগ্ন দু’পক্ষই।
ঠিক কী করতে চাইছে তালিবান ও পাক-জঙ্গিরা? তাদের প্রথম উদ্দেশ্য, বাংলাদেশকে ব্যবহার করা। ভারত-বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক সীমান্তের দৈর্ঘ্য ৪,০৯৬ কিলোমিটার। এর মধ্যে পশ্চিমবঙ্গের সঙ্গেই বাংলাদেশের সীমান্তের দৈর্ঘ্য সব থেকে বেশি। হাসিনা-সরকার আসার আগে দীর্ঘ দিন ধরে বাংলাদেশকে ব্যবহার করে ভারতে জঙ্গি-অনুপ্রবেশের কাজ হয়েছে।
এক দিকে মায়ানমার থেকে জঙ্গিরা চট্টগ্রাম দিয়ে বঙ্গোপসাগর হয়ে ভারতে ঢুকেছে। মাদক ও অস্ত্র পাচার করেছে। আর একটা হয়েছে সীমান্ত পেরিয়ে। সুন্দরবন দিয়েও মৎস্যজীবীর ছদ্মবেশে অনুপ্রবেশ হয়েছে। জঙ্গিরা যখন বাংলাদেশ থেকে কলকাতায় ঢোকে, তখন তারা যে শুধু কলকাতায় নাশকতার জন্য আসে, এমন নয়। কলকাতা দিয়ে ঢুকে তারা দিল্লি-সহ অন্য জায়গায় ছড়িয়ে পড়ার সুযোগও পায়।
১৯৯৩ সালে দাউদ ইব্রাহিমের চক্রান্তে মুম্বইয়ে ধারাবাহিক বিস্ফোরণের পর পাক-মদতে পুষ্ট জঙ্গি কার্যকলাপ পশ্চিম উপকূলবর্তী এলাকা থেকে অনেকটাই সরে আসে পূর্ব উপকূলবর্তী এলাকায়। কারণ
পশ্চিমে ভারত এবং মার্কিন গোয়েন্দাদের নজরদারি
বেড়ে গিয়েছিল।
পাক সেনা-গোয়েন্দারা দফায় দফায় বাংলাদেশকে ব্যবহার করে আলফা এবং পাক-জঙ্গিদের রীতিমতো প্রশিক্ষণ দিয়ে ভারতে ঢুকিয়েছে। ভারতের মাটিতে ওই জঙ্গিরা একাধিক হামলা চালিয়েওছে। বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের আমলে মার্কিন তথ্যকেন্দ্রে হামলার পিছনেও পাক-মদতপুষ্ট জঙ্গিদের হাত ছিল বলে তদন্তে ধরা পড়েছিল।
শেখ হাসিনা আসার পরে শক্ত হাতে এর মোকাবিলা করেন। হাসিনা ও দীপু মণি বারবার বলেছেন,
বাংলাদেশের মাটিকে জঙ্গি-কার্যকলাপে ব্যবহার হতে দেবেন না। এ বারও হিলারি হাসিনার সঙ্গে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করেছেন।
৯/১১ এবং ২৬/১১-র পরে আমেরিকা বিশ্ব জুড়ে সন্ত্রাসবাদ-বিরোধী মঞ্চ তৈরি করতে চাইছে। হাসিনাও সন্ত্রাস-বিরোধী অবস্থানই নিয়েছেন। গত কালের বৈঠকে সন্ত্রাস দমনে বাংলাদেশের সঙ্গে সমন্বয় আরও বাড়িয়েই কাজ করার বার্তা দিয়েছেন মমতাও। |