বিদেশমন্ত্রী এস এম কৃষ্ণকে পাশে নিয়ে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে তীব্র আক্রমণ শানালেন মার্কিন বিদেশসচিব হিলারি ক্লিন্টন। গত কাল সন্ধ্যা থেকে আজ সকাল পর্যন্ত ভারতীয় শীর্ষ নেতৃত্বের সঙ্গে দফায় দফায় বৈঠকের পরে হিলারি দ্ব্যর্থহীন ভাষায় জানিয়ে দিলেন, মুম্বই হামলার পিছনে লস্কর-ই-তইবা নেতা হাফিজ সইদই যে ‘অন্যতম প্রধান মস্তিষ্ক’, তা বিশ্বাস করার ‘যথেষ্ট কারণ’ রয়েছে। পাকিস্তান যে তার মাটিকে সন্ত্রাসবাদের ‘লঞ্চিং প্যাড’ হিসেবে ব্যবহার করেছে, দিল্লির মাটিতে দাঁড়িয়ে সে কথাও স্পষ্ট করে জানালেন।
রাজধানীর কূটনৈতিক শিবিরের বক্তব্য, সাম্প্রতিক অতীতে ভারতের মাটিতে দাঁড়িয়ে পাকিস্তানের প্রতি এতটা আক্রমণাত্মক হতে দেখা যায়নি আমেরিকাকে। সূত্রের বক্তব্য, ভারত-পাকিস্তান-আফগানিস্তান-সহ গোটা অঞ্চলের ভূকৌশলগত পরিস্থিতি এতটাই জটিল হয়ে রয়েছে যে, হোয়াইট হাউসের রক্তচাপ ক্রমশ বেড়ে চলেছে। আফগানিস্তান থেকে মার্কিন সেনা প্রত্যাহারের সময় এগিয়ে আসছে, কিন্তু তালিবানের সঙ্গে শান্তি প্রক্রিয়া এখনও বিশবাঁও জলে। মার্কিন গোয়েন্দাদের রিপোর্ট অনুযায়ী, পাক মদতপুষ্ট হক্কানি-গোষ্ঠী শান্তি আলোচনার যাবতীয় উদ্যোগ ভেস্তে দিতে চাইছে। হিলারির কথায়, “আমেরিকা, আফগানিস্তান এবং আফগানিস্তানের মিত্রদের বিরুদ্ধে যারা প্রতিনিয়ত আঘাত হানছে, তাদের ধরার জন্য আমরা প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। এ ব্যাপারে ভারতের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ ভাবে কাজ করছি, কারণ তাদের বিরুদ্ধেও আঘাত আসছে।” একই সঙ্গে তিনি আজ জানিয়ে দেন, আফগানিস্তান থেকে ২০১৪ সালে সেনা সরিয়ে নেওয়া হলেও সে দেশের নিরাপত্তা এবং উন্নয়নে যাতে বিঘ্ন না ঘটে, সে জন্য ‘কাজ করে যাবে’ আমেরিকা। এ বিষয়ে নিরাপত্তা সংক্রান্ত একটি চুক্তিও কাবুলের সঙ্গে করবে ওয়াশিংটন। দক্ষিণ পশ্চিম এশিয়ার এই সার্বিক নিরাপত্তা পরিস্থিতিতে আজ বিশেষ করে পাকিস্তানের ভূমিকার কড়া সমালোচনা করেছেন মার্কিন বিদেশসচিব। তাঁর স্পষ্ট বক্তব্য, “সন্ত্রাসবাদীরা যাতে তাদের মাটিকে আক্রমণের উৎসস্থল হিসেবে গড়ে তুলতে না পারে, সে জন্য পাকিস্তানকে আরও বেশি সক্রিয় হতে হবে।” |
মঙ্গলবার বৈঠকের আগে কেন্দ্রীয় বিদেশমন্ত্রী এস এম কৃষ্ণের সঙ্গে
বিদেশসচিব হিলারি ক্লিন্টন। নয়াদিল্লিতে। ছবি: রয়টার্স |
হিলারি যে দিন দিল্লিতে বসে সন্ত্রাস প্রশ্নে ফের তাঁর দিকে আঙুল তুললেন, সে দিনই লাহৌরে পাক প্রধানমন্ত্রী ইউসুফ রাজা গিলানির নাকের ডগায় দাঁড়িয়ে ফের ভারতের বিরুদ্ধে তোপ দাগলেন হাফিজ সইদ। এ দিন লাহৌরে ভারত-পাক বাণিজ্য প্রতিনিধিদের একটি সম্মেলন ছিল। কিছু দূরেই জনসভায় হাফিজ পাক ব্যবসায়ীদের বলেন, তারা যেন ভারতের বদলে চিনের সঙ্গে ব্যবসা করে।
ইরান-প্রশ্নে অথবা পরমাণু-ব্যবসার ক্ষেত্রে ভারতকে পাশে পাওয়াটাও জরুরি আমেরিকার। আজকের বৈঠকে দু’দেশের মধ্যে বাণিজ্য বাড়ানো, ভারতের পরমাণু দায়বদ্ধতা বিলকে আমেরিকার বাণিজ্য সংস্থাগুলির পক্ষে আরও সুবিধাজনক করে তোলা, ইরানের সঙ্গে বাণিজ্য সম্পর্ক কমিয়ে আনার মতো বিষয়গুলির উপরে ফের জোর দিয়েছেন হিলারি। কাল কলকাতাতেই তিনি জানিয়ে দিয়েছিলেন যে, আমেরিকা আশা করে ইরানের উপর নির্ভরতা কমাবে ভারত। আজ তার পুনরাবৃত্তি করে তিনি জানান, ইরানকে দর-কষাকষির টেবিলে বসানোর জন্য চাপ বাড়ানো জরুরি। তাঁর কথায়, “ইরানের পরমাণু অস্ত্র সম্প্রসারণ আটকাতে যে বৃহত্তর আন্তর্জাতিক প্রয়াস চলছে, সেখানে আমরা ভারতকে অংশীদার হিসেবে দেখতে চাই।.....ভারত যে ইরান থেকে তেল আমদানি কমানোর প্রক্রিয়া শুরু করেছে, তাকে স্বাগত জানাচ্ছি।” ভারত অবশ্য ইরান প্রশ্নে আমেরিকাকে কোনও প্রতিশ্রুতি দিতে চায়নি। তবে কৃষ্ণ এ দিন বলেন, “ইরানের পরমাণু অস্ত্র সংক্রান্ত বিষয়টি যাতে শান্তিপূর্ণ ভাবে সমাধান করা যায়, তা নিয়ে হিলারির সঙ্গে কথা বলেছি। আমাদের বক্তব্য হল, পরমাণু সম্প্রসারণ বিরোধী চুক্তিতে স্বাক্ষর করা একটি দেশ হিসেবে ইরানের যেমন কিছু অধিকার রয়েছে, তেমনই এই চুক্তির অধীনে সমস্ত শর্তগুলি তাদের মেনে চলতেই হবে।” |