প্রথাগত চাষ ছেড়ে জারবেরা, বিকল্প পথ দেখাচ্ছে পূর্বস্থলী
হীরক রাজার দেশের বৈজ্ঞানিকের সেই ফুল থাকত ৬ মাস। ‘ঝরে না, মরে না’ সেই ফুল, রং যেন তার হাতে আঁকা। একেবারে ‘পাকা’-খাঁটি।
তেমনই এক ফুল সত্যিই চাষ হচ্ছে পূর্বস্থলীতে। হল্যান্ড থেকে নিয়ে আসা হয়েছিল মহারাষ্ট্রের পুণে গবেষণা কেন্দ্রে। চোখ ধাঁধানো রং। ফুলদানিতে রাখলে ছ’মাস না হোক, মাসখানেক তো থাকবেই। নাম জারবেরা। ফলে দ্রুত জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে এই ফুল। কিন্তু কে রয়েছেন নেপথ্যে?
নাম পিন্টু দেবনাথ। বাড়ি পূর্বস্থলীতে। পেশায় ফুলচাষি। দক্ষিণবঙ্গে তিনিই প্রথম জারবেরা চাষ করার সাহস দেখান। অত্যন্ত লাভজনক হয়ে উঠেছে এই চাষ। এই ফুলের চাষ যে এত লাভজনক, তা প্রমাণ করেছেন পিন্টু। তাঁর ভূমিকা স্বীকার করে নিয়েছেন কৃষি কর্তারাও। তাঁদের আশা, পিন্টুকে দেখে অন্যরাও হয়তো জারবেরা চাষে আগ্রহী হবেন। পিন্টু জানান, প্রায় একশো প্রজাতির হয় এই জারবেরা। তার মধ্যে তিনি ৮ রকমের চাষ করেন। তাঁর কথায়, “এক বার চারা পুঁতলে তিন বছর টানা ফুল ফুটবে। জারবেরা চাষ করে এত লাভ হবে, ভাবিনি।”
নিজস্ব চিত্র।
এ রাজ্যে তো বটেই, সারা দেশেই জারবেরার চাহিদা বাড়ছে। এমনকী বিদেশেও এই ফুলের বাজার বাড়ছে বলে দাবি পিন্টুর।
কী ভাবে জারবেরা চাষে এলেন পিন্টু? শ্রীরামপুর পঞ্চায়েতের বাসিন্দা পিন্টু বলেন, ‘‘১৯৯৬ সালে উচ্চমাধ্যমিক পাশ করে আর পড়াশোনার সুযোগ হয়নি। মামার সঙ্গে মহারাষ্ট্রে চলে যাই। মামা সেখানে ‘পলি হাউস’ তৈরি করতেন। সে কাজে আমিও লেগে পড়ি। তার পরে মণিপুর, নাগাল্যান্ড, মিজোরাম, অরুণাচল প্রদেশ ঘুরেছি। ২০০৪ সালে একটি সংস্থায় কাজ করতে শিলিগুড়ি যাই। সেখানে প্রথম জারবেরার জন্য পলি হাউস তৈরি করি। তখনই জারবেরা সম্পর্কে সবিস্তার জানতে পারি। ঠিক করি, বাড়ি ফিরে নিজেই চাষ করব।”
২০০৮-এ বাড়ি ফিরে ২৫০ বর্গমিটার জমিতে জারবেরা চাষ শুরু করেন পিন্টু। তিনি জানান, জারবেরার জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ এই পলি হাউস। তাঁর কথায়, “চাষের মূল খরচ ‘পলি হাউস’ তৈরিতেই। ৫০০ বর্গমিটারে লোহার পাইপ দিয়ে মূল কাঠামো তৈরি করে মাথায় পলিথিন দিয়ে ছাউনি তৈরি করতে প্রায় দু’লক্ষ টাকা খরচ। তবে আমি বাঁশের কাঠামো দিয়েই তৈরি করেছি।” তিনি আরও জানান, পলি হাউসের ভিতরে কৃত্রিম কুয়াশা তৈরির জন্য দরকার হয় ‘ফগার’ এবং প্রতিটি গাছের গোড়ায় শিশিরের মতো ফোঁটা ফোঁটা জল দেওয়ার জন্য দরকার হয় ‘ট্রিপ’। এ ছাড়াও ঠান্ডায় জারবেরা চাষ ভাল হয়। জমি যাতে জীবানুমুক্ত থাকে, সে ব্যাপারে সতর্ক থাকতে হয়। শীততাপ নিয়ন্ত্রিত গবেষণাগার থেকে চারা এনে নির্দিষ্ট তাপমাত্রায় পলি হাউসে বসাতে হয়। তবে কোনও রাসায়নিক সার ব্যবহার করা যায় না। পুণে থেকে ‘অর্ডার’ দিয়ে ওই চারা আনা হয় বলে জানালেন পিন্টু।
পূর্বস্থলী ব্লক সহ-কৃষি অধিকর্তা পার্থ ঘোষ বলেন, “জারবেরা চাষ অত্যন্ত লাভজনক। পিন্টুর সাফল্য দেখে ঠিক করা হয়েছে, উদ্যানপালন দফতরের তরফে এলাকার চার জনকে ওই চাষ করার জন্য অনুদান দেওয়া হবে। প্রত্যেককে প্রায় ৪ লক্ষ টাকা করে দেওয়া হবে। বাকি টাকা চাষিরা নিজেরা দেবেন।” পার্থবাবু আরও জানান, প্রায় সারা বছরই ফুল হওয়ায় এই চাষে লাভ বাড়বেই। পিন্টুও বলেন, “মোট দেড় লক্ষ টাকা খরচ করে আড়াইশো বর্গমিটারে ১৩০০ চারা বসিয়েছি। ২০১০-২০১১ মরসুমে আমি প্রথম ফুল বিক্রি করেছি। তাতে আমার চাষের খরচ উঠে গিয়েছে। এখনও দু’বার ফলন পাব। তাই লাভ নিয়ে সংশয় নেই।”
কোথায় বিক্রি হয় এই ফুল? পিন্টু বলেন, “হাওড়ার মল্লিকঘাট, রানাঘাট, নবদ্বীপ ও শিলিগুড়িতে আমার ফুল বিক্রি হয়। তবে চলতি মরসুমে বাজার নবদ্বীপেই এত চাহিদা, অন্য কোথাও যেতে হয়নি।”



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.