আসছে পুরভোট। ফিরছে রাজনীতির লড়াই। কিন্তু কেমন আছে দুর্গাপুর?
ওয়ার্ডে ঘুরে-ঘুরে খোঁজ নিচ্ছে আনন্দবাজার। |
তিনি বলছেন, দলমত নির্বিশেষে সকলের জন্য কাজ করেছেন।
বিরোধীরা বলছেন, দলমত পরের কথা। কাজই হয়নি।
তিনি সিপিএমের কাউন্সিলর। এ বার দল তাঁকে আর টিকিট দেয়নি। কিন্তু তাঁর কৃতকর্ম যে দলের ঘাড়েই বর্তাবেই, সে বিষয়ে সন্দেহ নেই।
পুরষা গ্রামের একাংশ, জিতেননগর, অর্জুনপুর, ডিটিপিএস কলোনি, এফএস বস্তি, আরসি বস্তি এবং মায়াবাজারের কিছুটা নিয়ে ৩৭ নম্বর ওয়ার্ড। কাউন্সিলর সুবোধ সামন্তের দাবি, “এলাকায় ধারাবাহিক উন্নয়ন হয়েছে। তবে আরও কিছু কাজ বাকিও রয়েছে।”
কী রকম?
কৃতকার্যের তালিকা বলছে: আড়াই কিলোমিটার নতুন রাস্তা হয়েছে। সাড়ে ৯ কিলোমিটার পিচ রাস্তার সংস্কার, সাড়ে তিন কিলোমিটার কংক্রিট রাস্তা হয়েছে। বস্তি এলাকায় অলিতে-গলিতে কংক্রিট। নর্দমা-কালভার্ট সংস্কার করা হয়েছে। পাইপ দিয়ে জলের সংযোগ দেওয়া হয়েছে পাড়ায়-পাড়ায়। দু’টি অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রের পাকা বাড়ি, ৯টি কমিউনিটি শৌচাগার, অঙ্গদপুর স্বাস্থ্যকেন্দ্রের বাড়ির সংস্কার করা হয়েছে। দুঃস্থদের জন্য বিএসইউপি প্রকল্পে ৬৫টি বাড়ি নির্মাণ করা হয়েছে। তবে তিনি এ-ও মেনে নেন, “নিকাশি নালার কাজ কিছুটা বাকি। এফএস বস্তি ও আরসি বস্তিতে বিদ্যুৎ যায়নি। ডিভিসি অনুমতি দেয়নি।”
ওয়ার্ডের বাসিন্দারা অবশ্য বলছেন, বহু কাজ বাকি। অঙ্গদপুর গ্রামের অশোক দত্তের অভিযোগ, “আমাদের এলাকায় স্বাস্থ্যকেন্দ্র বেহাল। নিয়মিত জঞ্জাল সাফাই হয় না। আঁস্তাকুড় নেই। কীটনাশক স্প্রে করা হয় না। |
৩৭ নম্বরে পুরষায় কমিউনিটি শৌচাগার। |
৩৬ নম্বরে তেঁতুলতলা কলোনির একমাত্র পুকুর। |
|
দূষণ নিয়ন্ত্রণের ব্যাপারে কাউন্সিলর কিছুই করেন না। বিপিএল ও জেএনএনইউআরএম প্রকল্পে ব্যাপক কারচুপি হয়েছে। বিপিএল তালিকায় অনিয়ম রয়েছে।”
পুরষা গ্রামের বাদ্যকরপাড়ার কালীপদ দাঁ বলেন, “কমিউনিটি শৌচাগার গড়া হয়েছে বহু টাকা খরচে। কিন্তু ব্যবহারের উপযোগী নয়।” ওই গ্রামেরই সুব্রত মুখোপাধ্যায় বলেন, “ডিভিসি-ডিটিপিএস বর্জ্য ছাই দামোদরের ধারে ফেলে। তা সারা বছর বাতাসে উড়ে গ্রামে ঢোকে। কাউন্সিলরের কোনও হেলদোল নেই।” সুভাষপল্লির শৈলেন দাস ও জিতেন নগরের বলরাম দে জানান, রাস্তাঘাট ভাঙা। নব পুরষা বস্তির অঞ্জলি বাউরি ও লাখপতি যাদব জানান, তাঁদের এলাকায় সিমেন্ট উঠে গিয়েছে কংক্রিটের রাস্তা থেকে। পাথর বেরিয়ে গিয়েছে। কমিউনিটি শৌচাগারের দরজা ভাঙা। অভিযোগ, বিভিন্ন প্রয়োজনে কাউন্সিলরের কাছে গিয়ে তাঁকে পাওয়া যায় না। কাগজপত্রে সই করাতে অন্য কাউন্সিলরের কাছে যেতে হয়।
তৃণমূল নেতা গোরাচাঁদ বুট বলেন, “বহু সম্পন্ন পরিবার বিপিএল তালিকায় রয়েছে। অথচ দুঃস্থরা নেই। স্বজনপোষণ হয়েছে।” সুবোধবাবুর কৈফিয়ত, “আমার মোটরবাইক-গাড়ি নেই। অন্যের গাড়িতে পাড়ায় পাড়ায় ঘুরি। তার পরেও কেউ যদি এমন অভিযোগ আনেন, তা হলে বলতে হবে তা উদ্দেশ্যপ্রণোদিত।”
গত বার কংগ্রেসের জেতা তিনটি ওয়ার্ডের একটি ৩৮ নম্বর। জোটের অবস্থা ঘেঁটে থাকলেও কাউন্সিলর আলো সাঁতরা এ বারও মনোনয়ন দাখিল করেছেন। কিন্তু ভোটারেরা কি তাঁর প্রতি সন্তুষ্ট?
তেঁতুলতলা দক্ষিণাঞ্চল, তেঁতুলতলা কলোনি, রাতুরিয়া গ্রাম, রাতুরিয়া হাউসিং, ডিসিএল কলোনি, ঘোষপাড়া বস্তি, রবীন সেন পল্লি, আরএন দত্ত ক্যাম্প, ইস্ট ইন্ডিয়া বস্তি, হাউসিং বস্তি নিয়ে ৩৮ নম্বর। তেঁতুলতলা কলোনির গৌতম দত্তের ক্ষোভ, “এলাকায় একটি মাত্র পুকুর। আবর্জনায় মজে গিয়েছে।” ডিসিএল কলোনির সমীর বসুর আক্ষেপ, “ডিসিএল কলোনি বস্তিতে রাস্তা, বিদ্যুৎ, নিকাশির কোনও কাজ হয়নি।” রাতুরিয়া গ্রামের শ্যামল বাউরির খেদ, “কারখানার দূষণ দিন দিন বাড়ছে। কাউন্সিলরের হেলদোল নেই।”
বিরোধী নেতা, সিপিএমের সত্যবান ঘোষকে এ বার মনোনয়ন দিয়েছে তাঁর দল। তাঁর অভিযোগ, নিয়মিত নর্দমা, জঞ্জাল সাফাই হয় না। ওষুধ স্প্রে হয় না। এলাকার শিশুরা বিভিন্ন জলবাহী রোগে ভুগছে। বিপিএল তালিকা, বেকারদের ঋণ দান, বিধবা ভাতা ও বার্ধক্যভাতা নিয়ে স্বজনপোষণ হয়েছে। তাঁর কটাক্ষ, “নিজেদের দলীয় কোন্দলের চোটেই কাউন্সিলর এলাকার কাজকর্ম দেখে উঠতে পারেননি।”
আলোদেবী অবশ্য দাবি করছেন, তেঁতুলতলা দক্ষিণাঞ্চলের সমস্ত রাস্তা ও অলিগলি পাকা। প্রয়োজন অনুযায়ী নর্দমা গড়া বা সংস্কার করা হয়েছে। ঘোষপাড়ায় একশো শতাংশ রাস্তা পাকা। ওয়ার্ডের প্রায় সর্বত্র বিদ্যুৎ ও পানীয় জল এসেছে। রবীন সেন পল্লিতে দামোদরের দু’টি ঘাট বাঁধানো হয়েছে। বস্তি এলাকায় মোট ১২টি কমিউনিটি শৌচাগার গড়া হয়েছে। রাতুরিয়ায় কমিউনিটি হল নির্মাণের কাজ শুরু হয়েছে। তেঁতুলতলা কলোনিতে গড়া হয়েছে শিশু উদ্যান। কাউন্সিলরের আরও দাবি, “সদর থেকে রাতুরিয়া গ্রামে ঢোকার প্রধান রাস্তা কংক্রিটের করে দেওয়ায় বহু মানুষ উপকৃত হয়েছেন। বিএসিউপি প্রকল্পে দুঃস্থদের জন্য ৯৩টি বাড়ি তৈরি করা হয়েছে। বার্ধক্য ভাতা পান ৩০ জন, বিধবা ভাতা পান ১৪ জন, প্রতিবন্ধী ভাতা পান ৬ জন। বিপিএল তালিকায় নাম আছে ৪৩৫ জনের। তাঁরা নিয়মমাফিক সুবিধা পেয়ে থাকেন।”
ওয়ার্ডে গেলেই কিন্তু দেখা যায়, শিল্পাঞ্চলের প্রধান রাস্তা হ্যানিম্যান সরণি দীর্ঘদিন ধরে সংস্কারের অভাবে বেহাল। শিল্প সংস্থার পাশাপাশি ভুগছেন এলাকার বাসিন্দারাও। আলোদেবী অবশ্য দাবি করেন, “ওই রাস্তা সংস্কারের ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট সব পক্ষের সঙ্গে বহু বৈঠক করেছি। যে কয়েক বার সংস্কার হয়েছে তার পিছনেও আমারই ভূমিকা আছে।” দ্রুত রাস্তার আমুল সংস্কার করা হবেও বলে তিনি আশ্বাস দিয়েছেন।
গরম বেড়েছে খুব।
শুধু কথায় কি চিঁড়ে ভিজবে?
|
নজরে নগর |
ওয়ার্ড ৩৭ |
ওয়ার্ড ৩৮ |
• বিপিএল তালিকায় গরমিল
• পানীয় জলের সঙ্কট
• কারখানার নিয়ন্ত্রণহীন দূষণ |
• কল-কারখানার লাগাতার দূষণ
• বেহাল হ্যানিম্যান সরণি
• ডিসিএল কলোনি লাগোয়া বস্তি বঞ্চিত |
অন্যের গাড়ি ভরসা, তাতেই পাড়ায়
পাড়ায় ঘুরে দেখভাল করি।
সুবোধ সামন্ত, সিপিএম কাউন্সিলর |
সিপিএম কাউন্সিলরগোটা এলাকা জুড়েই প্রচুর
উন্নয়নমূলক
কাজ হয়েছে।
আলো সাঁতরা, কংগ্রেস কাউন্সিলর |
ওঁকে পাওয়া যায় না,
ভোটারেরাই জবাব দেবেন।
গোরাচাঁদ বুট, তৃণমূল নেতা |
উন্নয়ন নিয়ে শুধু রাজনীতি
হয়েছে, কাজ হয়নি।
সত্যবান ঘোষ, সিপিএম নেতা |
|