সম্পাদকীয় ২...
নীরব ঘাতক
পুষ্টি এক নীরব ঘাতক। অপুষ্ট শিশুদের জন্য যে কোনও সাধারণ সংক্রমণও মারাত্মক হইয়া ওঠে। তাহার মেধার বিকাশ, শারীরিক বৃদ্ধি ব্যহত হয়। শিশুদের অপুষ্টির প্রতিফলন ঘটে দেশের আর্থিক বৃদ্ধিতেও। উজ্জ্বল, স্বাস্থ্যবান তরুণ-তরুণী কর্মজগতে প্রবেশ করিলে দেশের অর্থনীতির যে উন্নতি হইতে পারিত, স্বল্প-শিক্ষিত, দুর্বল কর্মীদের দ্বারা তাহা সম্ভব হয় না। তাই অপুষ্টি কেবল সামাজিক অন্যায় নহে, তাহা দেশের উন্নয়নের পরিপন্থী। অথচ এ রাজ্যে শিশু অপুষ্টির সমস্যা ব্যাপক ও গভীর হইলেও, সে বিষয়ে সরকারি দফতরগুলি উদাসীন। দরিদ্রের শিশু তো রোগা হইবেই, হালকা হইবেই, ইহা যেন সরকারি কর্তারা ধরিয়াই লইয়াছেন। তাই রাজ্যে অপুষ্ট শিশুর সংখ্যা কত, কোন অঞ্চলগুলিতে অপুষ্টির প্রকোপ সর্বাধিক, এবং কী করিয়া তাহা কমানো যাইতে পারে, সে বিষয়ে কোনও স্পষ্ট চিত্র তাঁহারা তৈরি করেন নাই। সম্প্রতি সংবাদে তাহাই প্রকাশিত হইয়াছে। ইহা আশ্চর্য নহে-- চিত্রটি প্রকাশিত হইলে তাহা স্বস্তিদায়ক হইবে না। শিশু পুষ্টির জন্য দুটি প্রধান সরকারি প্রকল্প চলিতেছে। একটি অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রে ছয় বৎসরের কম শিশুদের এবং গর্ভবতী মহিলাদের খাওয়াইবার প্রকল্প। অপরটি স্কুলের ছাত্র-ছাত্রীদের জন্য মিড ডে মিল। দ্বিতীয়টি গত দশকে শুরু হইয়াছে, কিন্তু প্রায় গোটা রাজ্যেই নিয়মিত স্কুলগুলিতে দ্বিপ্রাহরিক ভোজনের আয়োজন হইতেছে। স্কুল খোলা রহিয়াছে কিন্তু ভাত খাওয়া হয় নাই, এমন দৃষ্টান্ত খুব বেশি নাই। অথচ অঙ্গনওয়াড়ি প্রকল্পটি আজও খোঁড়াইয়া চলিতেছে, তাহার কর্মী নাই, কেন্দ্রগুলির মাথার উপর ছাদ নাই, চাল-ডালের সংস্থান অনিয়মিত, এবং প্রাক-প্রাথমিক শিক্ষা কার্যত প্রহসনে পর্যবসিত হইয়াছে। বৈজ্ঞানিক দৃষ্টিতে শিশুর জীবনের প্রথম বৎসরগুলি তাহার মেধা ও স্বাস্থ্যের বিকাশের জন্য সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ। এই সময়ে অপুষ্টি নিবারণ অত্যন্ত প্রয়োজন। সমাজ কল্যাণ দফতরের ত্রুটির জন্য প্রতি বৎসর রাজ্যের কয়েক লক্ষ শিশু সুস্থ জীবনের উত্তরাধিকার হইতে বঞ্চিত হইতেছে।
এই সমস্যার প্রতিকার কেবল কিছু অঙ্গনওয়াড়ি কর্মীর উপরে চাপাইলে তাহা অন্যায় হইবে। একাধিক প্রকল্প, এবং তাহার দায়িত্বপ্রাপ্ত একাধিক দফতর শিশু-অপুষ্টির মহামারীর জন্য দায়ী। মাতৃস্তন্য পানের হার বাড়াইবার বিষয়টি স্বাস্থ্য দফতরের একটি প্রধান কর্তব্য। কিন্তু সরকারি হাসপাতালগুলিতেও স্তন্যপান উপেক্ষিত, কৃত্রিম দুগ্ধ পানে উৎসাহ দিবার বিষয়ে চিকিৎসকদের সতর্ক করিতেও স্বাস্থ্য দফতর ব্যর্থ। ফলে অতি বাল্যেই বহু শিশু অপুষ্টিতে আক্রান্ত হইতেছে। কৃমি সংক্রমণের বাহুল্য এবং শুদ্ধ পানীয় জলের অভাব ও নিকাশি ব্যবস্থার অভাবে পেটের রোগ অপুষ্টিকে আরও তীব্র করিতেছে। তথ্য ও সংস্কৃতি বিভাগ অপুষ্টি-সহ নানা সমস্যার বিষয়ে সচেতনতা তৈরির জন্য বরাদ্দ পাইয়া থাকে। যে ধরনের প্রচার করিলে দরিদ্র মাতা শিশুর জন্য সামান্য খরচেও সুষম আহারের ব্যবস্থা করিতে পারিতেন, তাহা হইয়া ওঠে না। সর্বোপরি গ্রাম পঞ্চায়েতগুলি এ বিষয়ে উদাসীন। মহিলা সদস্যরা যদি অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রগুলি পরিদর্শন করিতেন, নিয়মিত ওজন হইতেছে কি না দেখিতেন, অতি-দরিদ্র পরিবারগুলিতে শিশুর কী অবস্থা তাহা নজর রাখিতেন, তাহা হইলেও পরিস্থিতির যথেষ্ট উন্নতি হইত। কিন্তু তাহা ঘটে না। অপুষ্টির হার কমাইতে নানা দফতরের মধ্যে যে সমন্বয় প্রয়োজন, তাহার চিহ্ন নাই। অতএব অপুষ্টির প্রকোপ কমিবে, এমন সম্ভাবনা ক্ষীণ।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.