সম্পাদকীয় ১...
একটি যুগের অবসান
বশেষে মায়ানমারের বিরোধী নেত্রী অঙ সান সু চি সাংসদ হিসাবে শপথ গ্রহণ করিলেন। নির্বাচনে জয়লাভ করিলেও তাঁহার ও ন্যাশনাল লিগ ফর ডেমোক্রাসির ৪৪ জন জয়ী সাংসদের পার্লামেন্টে যোগদান লইয়া সংশয় সৃষ্টি হইয়াছিল। সংশয়ের কারণ ছিল শপথবাক্যে সংবিধানকে ‘সুরক্ষিত’ করার সঙ্কল্পের উচ্চারণ। সু চি ও তাঁহার দলের বক্তব্য-- এই সংবিধান দেশের ফৌজি শাসকদের রচিত, ইহাতে এক চতুর্থাংশ সংসদীয় আসন সেনাবাহিনীর জন্য সংরক্ষিত এবং দেশ-শাসনেও সেনাবাহিনীর আধিপত্যের সুস্পষ্ট, দ্ব্যর্থহীন অনুমোদন। গণতন্ত্রী হিসাবে এমন বিধান তাঁহাদের পক্ষে শিরোধার্য করা সম্ভব নয়, যেহেতু তাঁহারা এই ‘ফৌজি সংবিধান’ সংশোধন ও পরিবর্তন করিতেই প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। অন্য দিকে শাসক ফৌজি জুন্টাও শপথবাক্যের বয়ান পাল্টাইতে নারাজ। যখন সু চি ও তাঁহার দলের পার্লামেন্টে অভিষেকই অনিশ্চিত হইয়া ওঠে, তখন শুভবুদ্ধি ও সুপরামর্শের প্রণোদনায় সিদ্ধান্ত বদল। অতঃপর শপথ লইয়া সু চি-র পার্লামেন্টে প্রবেশ।
ইহার ফলে মায়ানমারের রাজনীতি একটা সঙ্কটময় যুগ উত্তীর্ণ হইল। সু চি সহ গণতন্ত্রীদের শাসনপ্রণালীর শরিক করিতে ফৌজি একনায়কদের তাগিদ প্রবল। তাঁহারা জানেন, পশ্চিমের বিনিয়োগ ও প্রযুক্তি ছাড়া দেশের বর্তমান দুর্দশা ঘুচিবার আশা নাই, আর গণতন্ত্রীদের কোণঠাসা করিয়া পশ্চিমের সহযোগিতা পাওয়ারও আশা দূরপরাহত। এ জন্যই প্রেসিডেন্ট থাইন সেইন ধাপে-ধাপে মায়ানমারে ফৌজি স্বৈরাচারের বজ্র-আঁটুনি শিথিল করিয়া গণতান্ত্রিক সংস্কারের সুপবন প্রবাহিত করার সিদ্ধান্ত লইয়াছেন। তাঁহার একের পর এক সংস্কারের সিদ্ধান্ত (যাহার মধ্যে সু চি ও তাঁহার দলকে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করিতে দেওয়াও পড়ে) পশ্চিমী বিশ্বকে মায়ানমারে গণতন্ত্রের ভবিষ্যৎ সম্পর্কে আশাবাদী করিয়াছে এবং ইউরোপীয় ইউনিয়ন ইতিমধ্যেই আর্থিক নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করিয়া মায়ানমারের সহিত বাণিজ্য, বিনিয়োগ ও প্রযুক্তি হস্তান্তরের জন্য প্রস্তুত হইতেছে। ব্রিটেন ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রও পিছাইয়া নাই। এই অবস্থায় সু চি-র শপথগ্রহণে অস্বীকার এবং পার্লামেন্টে প্রবেশে অসম্মতি নূতন করিয়া সংশয় ও জটিলতা সৃষ্টি করিতে পারিত। সু চি সেই অস্বস্তি হইতে ফৌজি শাসকদের বাঁচাইয়া দিয়াছেন। তিনি যে ফৌজি শাসকদের মতো গোঁড়া ও অনমনীয় নন, তাহার প্রমাণ ইতিপূর্বেও দিয়াছেন। ব্যক্তিগত অহমিকা নয়, দেশ ও দেশবাসীর বৃহত্তর স্বার্থই যে তাঁহাকে রাজনীতিতে চালিত করে, বিগত ২৩ বছর ধরিয়া নিরবচ্ছিন্নভাবে তাহার প্রমাণ দিয়াছেন। তাঁহার অনুরোধেই পশ্চিমী বিশ্ব মায়ানমারের বিরুদ্ধে জারি করা অর্থনৈতিক অবরোধ তুলিয়া লইতেছে। সেনাবাহিনী ও গণতান্ত্রিক রাজনীতির মধ্যে একটা সমন্বয়, একটা জাতীয় ঐকমত্য গড়ার নিরন্তর প্রয়াস তাঁহার রহিয়াছে।
এই অবস্থায় ফৌজি শাসকদেরও গণতান্ত্রিক নমনীয়তা দেখাইতে হইবে। তাঁহারা যদি ভাবিয়া থাকেন, সু চি-র মতো গণতন্ত্রীদের পার্লামেন্টে শামিল করিয়া তাঁহারা নিজেদের সামরিক স্বৈরাচারকে জনচক্ষে ‘বৈধ’ ও ‘বিশ্বাসযোগ্য’ করিয়া তুলিবেন, তবে তাঁহারা ভ্রান্ত। দেশবাসী যে ফৌজি শাসনব্যবস্থার বিকল্পে গণতন্ত্রীদেরই চায়, উপনির্বাচনের ফলাফলে তাহার পর্যাপ্ত প্রমাণ উপস্থিত। বর্তমান জাতীয় পার্লামেন্টের মাত্র আট শতাংশ সু চি-র দলের দখলে। ২০১৫-র নির্বাচনে অবাধ প্রতিযোগিতার সুযোগ পাইলে সু চি যে বিপুল গরিষ্ঠতা লইয়া সংবিধান সংশোধন করার মতো জনপ্রতিনিধিত্ব লইয়া পার্লামেন্টে হাজির হইবেন, সে বিষয়ে ফৌজিরা নিশ্চিত। যে-কোনও উপায়ে সেই সম্ভাবনা বানচাল করার প্রলোভন যদি থাইন সেইন ও তাঁহার ফৌজি উপদেষ্টারা সংবরণ করিতে না পারেন, তবে মায়ানমার আবার বিশৃঙ্খলা ও অনিশ্চয়তার অন্ধকারে নিমজ্জিত হইবে।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.