হিলারি আসার আগে মহাকরণ-দর্শন
মুখ্যমন্ত্রীর ঘর কোথায়, ঢোকেন কোন পথে, খোঁজ নিল মার্কিন দল
হাকরণে তাঁর আসতে চার দিন বাকি। তার আগে প্রস্তুতি শুরু করতে গিয়ে বৃহস্পতিবার অসংখ্য প্রশ্নের সামনে পড়তে হল রাজ্য সরকার ও কলকাতা পুলিশকে।
এ দিনই সরকারি ভাবে মার্কিন বিদেশসচিব হিলারি ক্লিন্টনের কলকাতা সফরের কথা জানানো হয় রাজ্য প্রশাসনকে। প্রশাসন সূত্রে বলা হচ্ছে, তা-ও অসমাপ্ত একটি সফরসূচি এসে পৌঁছেছে মহাকরণে। তার মধ্যেই এ দিন সকালে সরেজমিনে ঘুরে গেলেন মার্কিন প্রতিনিধিদল, যাঁদের সঙ্গে ছিলেন সে দেশের ডিপ্লোম্যাটিক সিকিওরিটি সার্ভিসের অফিসারেরাও।
পুলিশ-প্রশাসনের কাছে তাঁরা জানতে চান, মহাকরণে মুখ্যমন্ত্রীর ঘর কোথায়? তাঁর অফিসে কে কে বসেন? তাঁদেরই বা ঘর কোথায়? মুখ্যমন্ত্রী কোন পথে ঢোকেন? ওই একই পথেই কি বের হন? কোন লিফট ব্যবহার করেন তিনি? লিফট ছাড়া বিকল্প পথ কোথায়? যাতায়াতের পথে কত জন মুখ্যমন্ত্রীর নিরাপত্তায় থাকেন? কী ধরনের প্রশিক্ষণ আছে ওই নিরাপত্তাকর্মীদের?
হিলারির সফরের আগে মহাকরণে মার্কিন প্রতিনিধিরা। ছবি: রাজীব বসু
প্রশাসন সূত্রে জানানো হয়েছে, হিলারির যে সফর সূচি মহাকরণে এসে পৌঁছেছে, সেখানে বলা হয়েছে, মার্কিন বিমান বাহিনীর বিশেষ বিমানে ৬ মে বিকেল ৪টে নাগাদ মার্কিন বিদেশসচিব কলকাতায় পৌঁছবেন। ওই রাতে তিনি দক্ষিণ কলকাতার একটি হোটেলে থাকতে পারেন বলে জানা গেলেও রাজ্য প্রশাসনের কোনও কর্তা এই নিয়ে মুখ খুলতে চাননি। রাজ্য স্বরাষ্ট্র দফতরের এক কর্তা বলেন, “হিলারি ক্লিন্টনের কলকাতা সফরের পুঙ্খানুপুঙ্খ সূচি এখনও জানতে পারিনি। যেটুকু জেনেছি তা-ও শেষ মুহূর্তে বদলে যেতে পারে।”
এমনকী, মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে দেখা করতে হিলারি পরের দিন, অর্থাৎ ৭ মে কখন মহাকরণে যাবেন, তা-ও এ দিন রাত পর্যন্ত স্পষ্ট হয়নি বলে স্বরাষ্ট্র দফতরের এক কর্তা জানিয়েছেন। এখনও জানা যায়নি, সেখানে তিনি কত ক্ষণ থাকবেন এবং কোন ঘরে মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে তাঁর বৈঠক হবে। তবে প্রাথমিক ভাবে তিনটি ঘর তৈরি করে রাখছেন পূর্ত দফতরের অফিসারেরা। তার একটি মুখ্যমন্ত্রীর নিজের ঘর, দ্বিতীয়টি তাঁর একান্ত কক্ষ (অ্যান্টি চেম্বার) এবং অন্যটি বড় কনফারেন্স রুম। কলকাতা পুলিশের এক কর্তা বলেন, “মার্কিন বিদেশসচিবের নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকে ফেডারেল ব্যুরো অফ ইনভেস্টিগেশন (এফবিআই)। তাদের সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত। তাদের তরফে কোনও বার্তা আসেনি এখনও।”
তার আগে এ দিন সকালে মার্কিন বিদেশ দফতরের স্পেশ্যাল অ্যাসিস্ট্যান্ট জেনি করডেলের নেতৃত্বে কনসাল জেনারেলের একটি প্রতিনিধিদল মহাকরণ ঘুরে দেখল। সঙ্গে ছিলেন মার্কিন ডিপ্লোম্যাটিক সিকিওরিটি সার্ভিসের অফিসারেরাও। রাজ্যের পুলিশ-প্রশাসনের কর্তাদের কাছে তাঁরা জানতে চান, মহাকরণে ঢোকার মুখে ভিআইপি-দের গাড়ি কোথায় দাঁড়ায়, কোন লিফটে তাঁরা দোতলায় সংরক্ষিত এলাকায় পৌঁছন, সেখানে আর কাদের ঢোকার অধিকার আছে? মুখ্যমন্ত্রীর অফিসের কর্মী-সংখ্যা কত, নানা কাজে রোজ কত জন বাইরের লোক সেখানে আসেন, কী ভাবে তাঁদের অনুমতি দেওয়া হয়, কারাই বা দেন, এ সবেরও খোঁজ নেন তাঁরা।
এ ছাড়াও সংরক্ষিত এলাকার বিদ্যুৎ পরিষেবা কেমন, অগ্নিরোধক ব্যবস্থাই বা কতটা শক্তিশালী, মহাকরণের নিরাপত্তায় কত জন পুলিশ থাকে, কর্মীরা অফিসে ঢুকতে কোন কোন দরজা ব্যবহার করে, সাধারণ ভাবে কখন তাঁরা অফিসে আসেন, এ সব খুঁটিনাটিও জানতে চান ডিপ্লোম্যাটিক সিকিওরিটি সার্ভিসের অফিসারেরা। মহাকরণ সূত্রের খবর, মুখ্যমন্ত্রীর ঘর, তাঁর একান্ত কক্ষ ও কনফারেন্স রুমের আলো আরও তীক্ষ্ন করা হচ্ছে। ঘষেমেজে পরিষ্কার করা হচ্ছে সিঁড়ি দিয়ে ঢোকার রাস্তাও। বিকেলের দিকে দফতরের ইঞ্জিনিয়ারদের নিয়ে এই সব ব্যবস্থাপনা ঘুরে দেখেন পূর্তমন্ত্রী সুদর্শন ঘোষ দস্তিদার। রাজ্য প্রশাসনের এক কর্তা বলেন, “মার্কিন বিদেশসচিব যে হেতু সোমবার, অফিসের দিনে মহাকরণে আসবেন, তাই সে দিন কর্মীদের চলাফেরার উপরেও নিষেধাজ্ঞা থাকবে।”
মহাকরণ ঘুরে দেখার পাশাপাশি ডিপ্লোম্যাটিক সিকিওরিটি সার্ভিসের অফিসারেরা এ দিন বৈঠক করেন লালবাজারেও। কলকাতার পুলিশকর্তাদের তাঁরা জানিয়েছেন, কয়েক ঘণ্টার সফরে মার্কিন বিদেশসচিব মহাকরণ ছাড়া ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়াল এবং হো চি মিন সরণিতে ইন্ডিয়ান কাউন্সিল অফ কালচারাল রিলেশনস-এ যাবেন। সেই মতো এ দিন রাত থেকেই পুলিশি ব্যবস্থার তোড়জোড় শুরু করে দিয়েছে লালবাজার। এ নিয়ে আজ, মহাকরণে ফের বৈঠকে বসবেন পুলিশ-প্রশাসনের কর্তারা।

মমতার সঙ্গে দেখা করতে উৎসুক হিলারি
‘প্রভাবশালী’ ও ‘সক্রিয়’ মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে সাক্ষাতের জন্য মুখিয়ে আছেন মার্কিন বিদেশসচিব হিলারি ক্লিন্টন। বিদেশসচিবের কলকাতা সফরের মুখে আজ এ কথা জানান ওবামা প্রশাসনের এক শীর্ষ অফিসার। ৫ থেকে ৮ মে হিলারির বাংলাদেশ ও ভারত সফর। বিদেশসচিব হওয়ার পরে এই প্রথম তিনি কলকাতায় যাচ্ছেন। মার্কিন অফিসারটি আজ বলেন, “এই সফরটিকে বিদেশসচিব একটি গুরুত্বপূর্ণ সুযোগ হিসেবে দেখছেন। তিনি প্রভাবশালী মহিলা মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করে বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনা করতে চাইছেন।” কী কী বিষয়ে দু’জনের আলোচনা হতে পারে? হিলারি-ঘনিষ্ঠ এক কূটনীতিকের কথায়, “মমতার আমলে পশ্চিমবঙ্গে কী অগ্রগতি হয়েছে, হিলারি মুখ্যমন্ত্রীর কাছে সেটাই জানতে চাইবেন। তা ছাড়া, পশ্চিমবঙ্গে ব্যবসার পরিবেশ কী রকম, তা-ও জানার ইচ্ছে রয়েছে তাঁর। শেখ হাসিনা প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পরে ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের উন্নতি প্রসঙ্গেও দু’জনের কথা হতে পারে।”
 
 
 


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.