খড়্গহস্ত কালনা পুর কর্তৃপক্ষ |
হাসপাতালের রোগী নার্সিংহোমে, অভিযুক্ত ডাক্তার |
সরকারি হাসপাতালে ভর্তি হওয়া রোগীকে নার্সিংহোমে পাঠানোর অভিযোগ উঠল এক চিকিৎসকের বিরুদ্ধে। কালনা মহকুমা হাসপাতালের চিকিৎসক সুদীপকুমার মণ্ডলের বিরুদ্ধে বুধবারই রাজ্যের স্বাস্থ্যমন্ত্রী, জেলা স্বাস্থ্য আধিকারিক, মহকুমাশাসক, হাসপাতালের সুপার-সহ প্রশাসনের নানা স্তরে অভিযোগ জানিয়েছে কালনা পুরসভা।
কালনা পুরসভার উপ-প্রধান দেবপ্রসাদ বাগ জানান, গত ২৬ এপ্রিল প্রসব বেদনা নিয়ে মহকুমা হাসপাতালে ভর্তি হন সিমলন গ্রামের বধূ চম্পা বৈরাগ্য। সকাল ৮টা নাগাদ তাঁকে দেখেন চিকিৎসক সুদীপবাবু। রোগীর আত্মীয়েরা পুর কর্তৃপক্ষের কাছে অভিযোগ করেছেন, ওই চিকিৎসক তাঁদের পরামর্শ দেন, প্রসূতির অবস্থা ভাল নয়। তাঁকে বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে পাঠাতে হবে। তিনি ‘রেফার সার্টিফিকেট’ও দিয়ে দেন। এর কিছু পরেই এক ব্যক্তি চম্পাদেবীকে নার্সিংহোমে ভর্তি করানোর পরামর্শ দেন বাড়ির লোকজনের কাছে। প্রসূতির অবস্থা ভাল নয় দেখে পরিবারের লোকজনও সেই পরামর্শ মতো কালনার সাহু সরকার মোড়ে একটি নার্সিংহোমে ভর্তি করেন চম্পাদেবীকে। সকাল ৯টা নাগাদ সেখানে অস্ত্রোপচার করে চম্পাদেবীর প্রসব করান সুদীপবাবুই। মা ও শিশু, দু’জনেই বর্তমানে সুস্থ রয়েছেন। |
উপ-প্রধান দেবপ্রসাদবাবু অভিযোগ করেন, বুধবার সকালে নার্সিংহোম থেকে চম্পাদেবী ও তাঁর সন্তানকে ছেড়ে দেওয়া হয়। তবে তার আগে তাঁর বাড়ির লোকজনকে ১২,৭৭৫ টাকার একটি বিল ধরিয়ে দেন নার্সিংহোম কর্তৃপক্ষ। বিপাকে পড়ে গরিব পরিবারটি। দেবপ্রসাদবাবু বলেন, “ওই পরিবারটি আমার সঙ্গে যোগাযোগ করে। ঘটনা শুনে নার্সিংহোমে যাই। চিকিৎসকের চেম্বারে গিয়ে এই অমানবিক ঘটনার প্রতিবাদ করি। তার পরেই শুধু ওষুধপত্রের দাম নিয়ে ওই বধূকে ছেড়ে দিতে রাজি হন নার্সিংহোম কর্তৃপক্ষ।” তাঁর দাবি, সরকারি হাসপাতালে অনায়াসে ওই বধূর প্রসব হতে পারত। তার বদলে নার্সিংহোমে গিয়ে ঘটি-বাটি বিক্রির পরিস্থিতি তৈরি হয়েছিল বাড়ির লোকজনের। ভবিষ্যতে যাতে অন্য কোনও চিকিৎসক এমন কাজে না জড়িয়ে পড়েন, সে জন্যই এ বিষয়ে অভিযোগ করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় বলে জানান তিনি।
অভিযুক্ত চিকিৎসক সুদীপবাবু অবশ্য তাঁর বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। তাঁর দাবি, “ওই প্রসূতির রক্তচাপ বেড়ে যাওয়ায় তাঁকে বর্ধমান মেডিক্যালে স্থানান্তর করা হয়। কিন্তু তাঁর বাড়ির লোকজন বর্ধমানে নিয়ে যেতে চাননি। পরে তাঁরা নার্সিংহোমে গেলে বিনা খরচায় অস্ত্রোপচার করে দেওয়া হয়। এমনকী নার্সিংহোম কর্তৃপক্ষ ওই রোগীর থাকার ভাড়াও নেননি।” তাঁর পাল্টা ক্ষোভ, “নিখরচায় ওই বধূর প্রসব করানো সত্ত্বেও উপ-পুরপ্রধান আমার চেম্বারে এসে গালিগালাজ করেন ও হুমকি দেন। আমি এ ব্যাপারে প্রশাসনের কাছে অভিযোগ জানাব।” দেবপ্রসাদবাবুর অবশ্য বক্তব্য, “আমি চিৎকার-চেঁচামেচি না করলে গরিব পরিবারটিকে ছাড় দিত না নার্সিংহোম কর্তৃপক্ষ।”
কালনা মহকুমা হাসপাতালের সুপার অভিরূপ মণ্ডল স্বীকার করেন, ‘রেফার’ হওয়া রোগীদের ভুল পরামর্শ দিয়ে নানা নর্সিংহোমে ভর্তি করানোর অভিযোগ তাঁরা আগেও পেয়েছেন। এ ব্যাপারে নজরদারির সিদ্ধান্তও নেওয়া হয়েছে রোগী কল্যাণ সমিতির বৈঠকে। প্রাথমিক ভাবে হাসপাতালের দুই চিকিৎসক এই চক্রে জড়িত বলেও জেনেছেন তাঁরা। সুপার এ দিন জানান, বাইরে থাকায় এ দিনের অভিযোগ তিনি দেখেননি। তবে ওই চিকিৎসকের বিরুদ্ধে যথাযথ প্রমাণ মিললে রোগী কল্যাণ সমিতির বৈঠকে তাঁকে জবাবদিহি করতে হবে। সন্তোষজনক জবাব না দিতে পারলে হাসপাতালের তরফে বিষয়টি নিয়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে অভিযোগ জানানো হবে বলে জানান সুপার। কালনার মহকুমাশাসক তথা রোগী কল্যাণ সমিতির চেয়ারম্যান সুমিতা বাগচি বলেন, “হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের কাছে পুরো বিষয়টি জানতে চাইব।” এসিএমওএইচ সুভাষচন্দ্র মণ্ডল বলেন, “অভিযোগ পেয়েছি। খতিয়ে দেখে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।” |