নিজস্ব সংবাদদাতা • শিলিগুড়ি |
মোষের গাড়িতে ট্রাকের ভাঙা বনেট। পিছনে ক্রেনে ঝুলছে ভাঙা ট্রাক। তার পিছনে পোস্টার, ব্যানার হাটে শিলিগুড়ি-জলপাইগুড়ি সড়ক লাগোয়া এলাকার শিল্পোদ্যোগীদের মিছিল। বুধবার এমনই অভিনব বিক্ষোভ দেখা গেল শিলিগুড়িতে জাতীয় মহাসড়ক কর্তৃপক্ষের দফতরে। শিল্পোদ্যোগীদের অভিযোগ, সড়কটি বেহাল হয়ে পড়ায় বিপাকে পড়েছেন তাঁরা। মাল বোঝাই ট্রাক রোজই দুর্ঘটনায় পড়ছে। বেড়ে গিয়েছে উৎপাদন ব্যয়। পরিস্থিতি এমন যে সপ্তাহ খানেক ধরে কাঁচামাল ওই এলাকায় আনতে চাইছেন না চালকেরা। দ্রুত সড়ক মেরামতি না-হলে কারখানা বন্ধ রেখেই লাগাতার আন্দোলনে নামার হুমকি দেন ওই শিল্পোদ্যোগীরা। শিলিগুড়ি ইন্ডাস্ট্রিজ অ্যাসোসিয়েশনের সম্পাদক সুরজিৎ পাল বলেন, “শিলিগুড়ি-জলপাইগুড়ি সড়ক এখন আর রাস্তা নয়। গরু, মোষের গাড়ি ছাড়া আর কিছুই চলা সম্ভব নয়। কেন রাস্তাটিকে এ ভাবে অবহেলা করা হচ্ছে তার সন্তোষজনক জবাব পাচ্ছি না। ফলে রাস্তায় নেমে আন্দোলন ছাড়া আর কোনও বিকল্প পথ নেই।” জাতীয় মহাসড়ক কর্তৃপক্ষের শিলিগুড়ি বিভাগের প্রজেক্ট ডিরেক্টর রাজকুমার চৌধুরী বলেন, “রাস্তাটি বেহাল হয়ে পড়েছে তাতে সন্দেহ নেই। |
কিন্তু নানা কারণে ওই রাস্তাটি ফোর লেনে উন্নীত করতে সমস্যা হচ্ছে। ঊর্ধ্বতন কর্তাদের আর্জি জানিয়ে ৬ কোটি টাকা আপাতত মঞ্জুর করানো হয়েছে। বরাদ্দ টাকায় দেড় মাসের মধ্যে সবচেয়ে বেহাল অংশের মেরামত করা হবে।” এ দিন ব্যবসায়ীরা অবশ্য সাফ জানান, দেড় মাসের মধ্যে রাস্তা মেরামত না-হলে ফের পথে নামবেন তাঁরা। জটিয়াকালী এলাকার একটি সাবান প্রস্তুতকারক সংস্থার মালিক অভিজিৎ সাহা বলেন, “প্রতিযোগিতার বাজার। অন্যদের সঙ্গে প্রতিদিন দাম কমানোর লড়াই করতে হয়। অথচ রাস্তা বেহাল হয়ে পড়ায় এথেলবাড়ি থেকে কাঁচা মাল আনতে টন পিছু ২৬০ টাকা বাড়তি গুনতে হচ্ছে। উৎপাদন ব্যয় বেড়ে যাচ্ছে। এভাবে চললে প্রতিযোগিতা থেকে ছিটকে যাব। রাস্তা মেরামতির দাবিতে শেষ পর্যন্ত লড়াই করব।” বেহাল রাস্তার জন্য আর এক শিল্পোদ্যোগী তথা শিলিগুড়ি ইন্ডাস্ট্রিজের যুগ্ম সম্পাদক রমেশ অগ্রবালের সংস্থায় অন্য সমস্যা তৈরি হয়েছে। কর্মীরা কাজ ছেড়ে দিতে চাইছেন। তিনি বলেন, “আগে আমার কারখানায় কর্মীদের অটোয় যাতায়াত করতে ১০ টাকা করে ভাড়া গুনতে হত। এখন অটো চালকেরা মাথা পিছু ২৫ টাকা না-পেলে আসতে চান না। কর্মীরা যাতায়াত ভাড়া দাবি করছেন। উৎপাদন ব্যয় বেড়ে যাচ্ছে।” বিক্ষোভে অংশ নেওয়া বহু ব্যবসায়ী এদিন অভিযোগ করেন, অসম থেকে কয়লা কেউই সরাসরি কারখানায় আনতে পারছেন না। কয়লা সরবরাহকারী সংস্থাগুলি বীরপাড়া পর্যন্ত কয়লা পৌঁছে দিচ্ছেন। সিমেন্ট প্রস্তুকারক সংস্থার মালিক নরেশ চৌধুরী বলেন, “বীরপাড়া থেকে জিপসাম আনার ট্রাক মিলছে না। রাস্তায় ট্রাক বেহাল হয়ে পড়লে আমাদের কাছে মেরামতির খরচ দাবি করা হচ্ছে।” জাতীয় মহাসড়কের প্রজেক্ট ডিরেক্টর বলেন, “২০০৬ সাল থেকে তিন দফায় রাস্তার নকশা তৈরি করা হয়েছে। এখনও নানা সমস্যা রয়েছে। তবু আমরা দ্রুত রাস্তা তৈরির কাজ শেষ করতে চাই। তার আগে প্রাথমিক সংস্কারের কাজ দেড় মাসে শেষ করা হবে।” |