নিজস্ব সংবাদদাতা • শিলিগুড়ি |
শিলিগুড়ি শহরের উন্নয়ন কাজ স্তব্ধ হয়ে রয়েছে অভিযোগ তুলে আন্দোলনে বাসিন্দাদের পাশে পেতে সই সংগ্রহ অভিযানে নামল বামফ্রন্ট। বুধবার হাসমিচক থেকে শুরু ওই সই সংগ্রহ অভিযানে ছিলেন প্রাক্তন পুরমন্ত্রী অশোক ভট্টাচার্যও। ছিলেন সিপিআই-এর দার্জিলিং জেলা সম্পাদক উজ্জ্বল চৌধুরী-সহ বামফ্রন্টের শরিক দলের অন্যান্য নেতাদের অনেকেই। ছিলেন বাম কাউন্সিলরদের একাংশও। প্রায় ১ মাস ধরে বিভিন্ন ওয়ার্ডে দলের কর্মী সমর্থকেরা বাড়ি বাড়ি গিয়ে বাসিন্দাদের সই সংগ্রহ করবেন। ওয়ার্ডে জনসভা করা হবে। ১৯ মে দীনবন্ধু মঞ্চে সভা করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। অন্তত ১ লক্ষ সই সংগ্রহ হলে শহরে উন্নয়নে বিভিন্ন দাবি জানিয়ে পুরসভার মেয়রকে তাঁরা স্মারকলিপি দেবেন। মেয়রের মাধ্যমে রাজ্য এবং কেন্দ্র সরকারকেও তারা বিষয়টি জানাতে চান। বছর দু’কে আগে শিলিগুড়ি পুর নির্বাচনে কংগ্রেস-তৃণমূল জোটের কাছে হেরে যান বামেরা। বাসিন্দাদের সমর্থন পেয়ে ক্ষমতায় আসে কংগ্রেস-তৃণমূল জোট। তবে মেয়র নির্বাচনে সিপিএমের সমর্থনে কংগ্রেস কাউন্সিলর গঙ্গোত্রী দত্ত মেয়র হন। তাতে তৃণমূল কাউন্সিলররা বোর্ডে অংশ নেননি। |
শহরের উন্নয়নের দাবিতে শিলিগুড়িতে সই সংগ্রহ অভিযানে অশোক ভট্টাচার্য। ছবি: দীপঙ্কর ঘটক। |
পরে তৃণমূলের দাবি মতো বামেদের সংশ্রব ছেড়ে কংগ্রেস বেরিয়ে এসে তৃণমূল কংগ্রেসকে নিয়ে বোর্ড গঠন করে। বামেদের দাবি, ‘মেয়র’ পদ নিয়ে জটিলতায় বোর্ড গঠনের দেরি হচ্ছিল। তাই বাসিন্দাদের স্বার্থে মেয়রকে তারা বাইরে থেকে সমর্থন করেছিলেন। অথচ সেই থেকে দু বছর পেরিয়ে গেলেও শহরের উন্নয়নে পুর কর্তৃপক্ষ সদর্থক ভূমিকা নিতে পারেনি। অশোকবাবুর অভিযোগ, “যে আশা নিয়ে বাসিন্দারা বর্তমান পুর কর্তৃপক্ষকে ক্ষমতায় এনেছেন তা পূরণ হচ্ছে না। বাম কাউন্সিলররা উন্নয়ন কাজে সমস্ত সহযোগিতার কথা জানিয়ে এত দিন অপেক্ষা করেছে। অথচ উন্নয়ন কাজ স্তব্ধ হয়ে গিয়েছে। শহরের রাস্তাঘাট ঠিক মতো মেরামত হচ্ছে না। বস্তি উন্নয়ন প্রকল্পে অনেকেই টাকা দিলেও তাঁদের বাড়ি তৈরি করে দেওয়া হয়নি। জলপাইগুড়ি জেলার অধীনে থাকা শিলিগুড়ি পুরসভার সংযোজিত ১৪ টি ওয়ার্ডের প্রশাসনিক কাজের জন্য আদালা কেন্দ্র তৈরির আশ্বাস দেওয়া হয়েছিল। সে কাজ হয়নি। বাসিন্দাদের দাবি নিয়ে তাই আমরা সই সংগ্রহ করছি। এর পর পুর কর্তৃপক্ষরে স্মারকলিপি দেওয়া হবে। মেয়রের মাধ্যমে রাজ্য এবং কেন্দ্রীয় সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে চাই।” মেয়র গঙ্গোত্রী দত্ত অবশ্য বামেদের এই আন্দোলনকে আমল দিতে চান না। তিনি বলেন, “শহরের উন্নয়নে আমরা বদ্ধ পরিকর। সেই মতো কাজও এগোচ্ছে। দীর্ঘদিন পুর বোর্ডে থেকেও বামেরা শহরের ডাম্পিং গ্রাউন্ড, পার্কিংয়ের মতো সমস্যা নিয়ে কিছুই করতে পারেনি। আমরা সে সব মেটাতে সচেষ্ট হয়েছি দেখেই তারা উল্টো দোষারোপ করতে চাইছেন।” পুরসভার বিরোধী দল নেতা মুন্সি নুরুল ইসলাম এ দিন অভিযোগ করেন, পুরসভার ৪৩ নম্বর ওয়ার্ডে হিমালি শহিদনগর এলাকার রাস্তা দীর্ঘদিন ধরে বেহাল। কাউন্সিলর বারবার মাসিকসভায় তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। এখনও সেই কাজ হয়নি। উল্টে এখন বলা হচ্ছে কাউন্সিলর ওই রাস্তা সারানোর প্রয়োজনীয়তার কথা পুরসভায় জানাননি। মিথ্যে অভিযোগ তুলে অপদস্থ করার চেষ্টা হচ্ছে বলে অভিযোগ তোলেন এলাকার কাউন্সিলর রাগিণী সিংহ। মঙ্গলবার এবং বুধবার ওই রাস্তা সংস্কারের দাবিতে পথ অবরোধ করে আন্দোলনে নামেন বাসিন্দাদের একাংশ। এ দিন স্কুলের ছেলেমেয়েদের নিয়ে ওয়ার্ড লাগোয়া জাতীয় সড়ক অবরোধ করেন তাঁরা। বিরোধী দলনেতা জানান, শহরে যানজট সমস্যা দূর করা, ডাম্পিং গ্রাউন্ডের দূষণ নিয়ন্ত্রণ, অবৈধ নির্মাণ কাজ বন্ধের মতো বিভিন্ন দাবি জানানো হয়েছে। অন্যান্য বিষয়ের মধ্যে রয়েছে, দীর্ঘদিন ধরে রেলের জায়গা বা খাস জমিতে বসবাসকারীদের পাট্টা দেওয়া, সমস্ত গরিব পরিবারগুলিকে বিপিএল তালিকাভুক্ত করা, জলপাইগুড়ি জেলার অন্তর্ভুক্ত সংযোজিত ওয়ার্ডগুলির জন্য আলাদা প্রশাসনিক ভবন তৈরির মতো দাবি। |