নিজস্ব সংবাদদাতা • শিলিগুড়ি |
সরকারি তরফে লাগাতার আবেদন করা সত্ত্বেও এসএমএস-এ মাধ্যমে জল-দূষণের গুজব ছড়ানোর অভিযোগে দুই যুবককে পুলিশ গ্রেফতার করেছে। মঙ্গলবার দুপুরে শিলিগুড়ি থানা এলাকায় ঘটনাটি ঘটেছে। ধৃতদের বিরুদ্ধে গুজব রটিয়ে শান্তিভঙ্গের অভিযোগ ও তথ্য-প্রযুক্তি আইনে মামলা রুজু হয়েছে। পুলিশ জানায়, ধৃতদের নাম অংশুমান অগ্রবাল এবং কুণাল রায়। অংশুমান শিলিগুড়ির শালবাড়ি এলাকার একটি স্কুলের দ্বাদশ শ্রেণির ছাত্র। তাঁর বাড়ি শিলিগুড়ি থানার পাশে দেশবন্ধুপাড়া এলাকায়। একটি বহুজাতিক টেলিভিশন বিক্রির দোকানের কর্মী কুণালের বাড়ি শহরের গুরুংবস্তি এলাকায়। শিলিগুড়ির অতিরিক্ত মুখ্য বিচার বিভাগীয় আদালতের বিচারক মধুমিতা বসু ধৃতদের দু’দিন পুলিশ হেফাজতে রাখার আর্জি মঞ্জুর করেছেন। প্রাথমিক তদন্তে পুলিশের সন্দেহ, গুজব রটানোর পিছনে কোনও ষড়যন্ত্র রয়েছে। ওই ঘটনায় আরও কেউ যুক্ত কি না সেই ব্যাপারে নিশ্চিত হতে ধৃতদের জেরা করছে পুলিশ। শিলিগুড়ির অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সৈয়দ ওয়াকার রাজা বলেন, “প্রাথমিক ভাবে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য মিলেছে। ধৃতদের জেরা করে আরও বিশদে জানার চেষ্টা হচ্ছে।” |
বৃহস্পতিবার শিলিগুড়ি আদালতে দীপঙ্কর ঘটকের তোলা ছবি। |
এদিন আদালত চত্বরে দাঁড়িয়ে কুণাল দাবি করেন, অংশুমানই তাঁকে ওই এসএমএস পাঠান। তাঁর অভিযোগ, সেটি পেয়ে তিনি ফোন করলে অংশুমান নিজেকে ‘পুরকর্মী অভিজিৎ সরকার’ হিসেবে দাবি করে ওই এসএমএস শহরে ছড়িয়ে দেওয়ার পরামর্শ দেন। পক্ষান্তরে, অংশুমান আদালত চত্বরে দাঁড়িয়ে জানান, তাঁর বন্ধুরা জল-দূষণের কথা বলায় তিনি এসএমএসটি তৈরি করে পাঠান। কিন্তু, কুণালের নম্বর অংশুমান কোথায় পেলেন ও কেনই বা নাম ভাঁড়ালেন তার ব্যাখ্যা পুলিশকে তিনি এখনও দিতে পারেনি। ঘটনা হল, সোমবার দুপুর থেকে শিলিগুড়িতে জল-দূষণের গুজব রটে যায়। পুরসভার মূল জলাধারে পচাগলা দেহাংশ রয়েছে বলে গুজব ছড়ালে আতঙ্কিত হয়ে শহরবাসীরা অনেকেই মিনারেল ওয়াটার সংগ্রহ করতে ব্যস্ত হয়ে পড়েন। পুরসভার মেয়র গঙ্গোত্রী দত্ত বিষয়টি জানতে পেরে পুরবাসীদের নানা ভাবে আশ্বস্ত করেন। তাতে কিছুটা কাজ হয়। কিন্তু, মঙ্গলবার সকালে শহরবাসীদের অনেকের কাছে জল-দূষণের গুজব সংক্রান্ত এসএমএস পৌঁছে যায়। পুরসভার জল সরবরাহ বভাগের প্রাক্তন মেয়র পারিষদ তথা সিপিএম নেতা মুকুল সেনগুপ্ত এসএমএস পেয়ে তা বর্তমান মেয়র পারিষদ অরিন্দম মিত্রকে পাঠান। সেটি পান পুরসভার পূর্ত বিভাগের মেয়র পারিষদ কৃষ্ণ পালও। ইতিমধ্যে এসএমএস-এ গুজব রটানোর চেষ্টার খবর পৌঁছে যায় মহাকরণে। খোদ মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বিষয়টি জানতে পেরে উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েন। উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী গৌতম দেবও অরিন্দমবাবুকে দ্রুত এফআইআর করার পরামর্শ দেন। রাজ্য পুলিশের ডিজি নপরাজিত মুখোপাধ্যায় দার্জিলিং রেঞ্জের ডিআইজি আনন্দ কুমারকে দ্রুত যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ দেন। সঙ্গে সঙ্গেই পুলিশ-প্রশাসনের কর্তারা মামলা রুজু করে অভিযুক্তদের ধরার উপরে জোর দেন। বেলা ৩টের মধ্যেই এসএমএস-এর সূত্র ধরে পুলিশ প্রথমে কুণাল ও পরে অংশুমানকে গ্রেফতার করে। পুরসভা সূত্রে খবর, গুজব রটনার ফলে দুদিনে শহরে মিনারেল ওয়াটারের বিক্রি বেড়েছে বলে পুর অফিসার-কর্মীরা জানতে পেরেছেন। স্বভাববতই ওই ঘটনার আড়ালে কোনও চক্র সক্রিয় কি না তাও পুলিশকে খতিয়ে দেখতে বলেছে পুরসভা। পাশাপাশি, রাজ্য সরকারকে বিপাকে ফেলতেও কোনও চক্রান্ত হয়েছে কি না তা নিয়েও পুলিশ তদন্তে নেমেছে। সরকারি আইনজীবী সুদীপ রায় বসুনিয়া বলেন, “যে ভাবে পরিকল্পনা মাফিক শহরে গুজব ছড়ানো হয়েছে তা আতঙ্কিত হয়ে পড়ার পক্ষে যথেষ্ট। সেই জন্যই এই ঘটনায় আর কারা জড়িত তা প্রকাশ্যে আনা দরকার। পুলিশি তদন্তে নিশ্চয়ই সব পরিস্কার হবে।” শিলিগুড়ির মেয়রও মনে করেন, শহরে গুজব ছড়ানোর ঘটনায় যাঁরাই জড়িত হোন না কেন, প্রত্যেকের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া দরকার। মেয়র বলেন, “শহরের পানীয় জল সরবরাহ ব্যবস্থা অত্যন্ত স্বাস্থ্যসম্মত। মানুষের মনে আতঙ্ক সৃষ্টির জন্যই গুজব ছড়ানো হয়েছিল। আশা করছি, পুলিশ ওই চক্রান্ত ফাঁস করতে সক্ষম হবে।” পুলিশের এক আধিকারিক বলেন, “এসএমএস করার পরে কুণাল সেটি ডিলিট করে দেয়। তবে ওই মোবাইল সংস্থার কল লিস্ট ঘেঁটে এসএমএসের তথ্য উদ্ধার হয়। কেন কুণাল এসএমএসটি ডিলিট করে দেয় তাও খতিয়ে দেখা হচ্ছে।” এদিন আদালতে অভিযুক্তদের আইনজীবী অখিল বিশ্বাসের দাবি, “ধৃত দু’জনই পানীয় জল সম্পর্কে শহরে ছড়িয়ে পড়া গুজবে আতঙ্কিত হয়ে এসএমএস করে। এরা গুজব ছড়াননি।” আদালতে জেরায় অংশ নেন পুরসভার মেয়র পারিষদ অরিন্দম মিত্রের আইনজীবী সুনীল সরকারও। তিনি বলেন, “ধৃতদের একজন শহরেরএমন একজন পূর্বতন মেয়র পারিষদকে এসএমএস করেন যিনি আগে পানীয় জল সরবরাহ বিভাগের দায়িত্ব ছিলেন। অন্য কোনও মেয়র পারিষদকে কেন এসএমএস করা হল না। এই বিষয়টিও খতিয়ে দেখা দরকার।” এই ব্যাপারে মুকুলবাবু বলেন, “আমি গুজব ছড়াইনি। বরং পুরসভাকে সতর্ক করেছি যাতে জল নিয়ে এ ধরনের গুজব ছড়ানো বন্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়।” |