দ্বিচারিতা করছে মোর্চা, অভিযোগ বিরোধীদের
হাকরণে দাঁড়িয়ে ‘পাহাড়ে শান্তি’র কথা বলে পর্যটকদের আশ্বস্ত করার চেষ্টা করলেন গোর্খা জনমুক্তি মোর্চা নেতৃত্ব। কিন্তু ডুয়ার্সে সভা করতে দেওয়ার দাবিতে আজ, বৃহস্পতিবার থেকে তরাই-ডুয়ার্সে অনশনে বসার কর্মসূচিতেও অনড় থাকছে মোর্চা। এই পরিস্থিতিতে বিরোধী শিবির ‘রাজনৈতিক দ্বিচারিতা’র অভিযোগ তুলছে গোর্খা জনমুক্তি মোর্চার বিরুদ্ধে।
সোমবার মহাকরণে মোর্চার প্রচার সচিব তথা কালিম্পঙের বিধায়ক হরকাবাহাদুর ছেত্রী দাবি করেন, “ভুল বোঝাবুঝির কারণে পাহাড়-তরাই-ডুয়ার্সে কিছু বিক্ষিপ্ত গোলমাল হলেও এখন পরিস্থিতি স্বাভাবিক। দার্জিলিং এখন পর্যটকদের পক্ষে সম্পূর্ণ নিরাপদ। গোলমালের আশঙ্কায় যাঁরা বুকিং বাতিল করেছেন, তাঁদের বলছি, আপনারা নিশ্চিন্তে পাহাড়ে যেতে পারেন। কোনও ভয় নেই। পাহাড়ের তিন বিধায়ক রয়েছেন। যে কোনও সময়ে দরকার পড়লে তাঁদের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারেন।”
মহাকরণে সাংবাদিক বৈঠকে হরকাবাহাদুর ছেত্রী। নিজস্ব চিত্র
গ্রীষ্মের পর্যটন মরসুমের ঠিক আগেই পাহাড়-ডুয়ার্স ‘তেতে’ ওঠায় ‘উদ্বেগ’ বাড়ছিল নানা মহলের। সেই ‘বার্তা’ যে, তাঁদের অজানা নয়, এ দিন বুঝিয়ে দেন মোর্চার প্রচার সচিব। বলেন, “পাহাড়ের অর্থনীতি যে পর্যটনের উপরে অনেকটা নির্ভরশীল তা আমরা বুঝি। পাহাড়ে গোলমাল হোক তা আমরাও চাই না। ওদলাবাড়ি, বাগরাকোটে যে গোলমাল হয়েছিল, তা নিয়ে দুশ্চিন্তার কিছু নেই।”
ঘটনা হল, এ দিনই দুপুরে প্রায় একই সময়ে ডুয়ার্সের বাগরাকোটে বসে মোর্চার পশ্চিম ডুয়ার্স কমিটির সভাপতি বিনোদ ঘাটানি জানিয়ে দেন, নাগরাকাটায় মোর্চা নেতৃত্বাধীন সংগঠনগুলির ‘যৌথ মঞ্চ’-এর সভার অনুমতির দাবিতে বৃহস্পতিবার থেকে ডুয়ার্স ও তরাইয়ের কয়েকটি থানা, ব্লক অফিস ও চা-বাগান এলাকায় ‘রিলে অনশন’ হবে। বাগরাকোট, জয়গাঁ, কালচিনি, বানারহাট, নাগরাকাটা-সহ কয়েকটি এলাকায় ওই কর্মসূচি পালিত হওয়ার কথা।
বস্তুত, ‘যৌথ মঞ্চ’-এর সভা করার ওই দাবিকে ঘিরেই মোর্চার বিরুদ্ধে তোপ দেগেছে আদিবাসী বিকাশ পরিষদের নেতৃত্বাধীন ‘তরাই-ডুয়ার্স জয়েন্ট অ্যাকশন কমিটি’। আদিবাসী বিকাশ পরিষদের রাজ্য সভাপতি বিরসা তিরকের অভিযোগ, “পাহাড়ে শান্তি বজায় রেখে তরাই-ডুয়ার্সে অশান্তির চেষ্টা করছে মোর্চা। এটা রাজনৈতিক দ্বিচারিতারই সামিল।” তাঁর ঘোষণা, “মোর্চা নেতৃত্ব আমাদের (তরাই-ডুয়ার্সের) জল, জমি নেওয়ার জন্য অনশন আন্দোলন করলে মানুষ তাদের বিরুদ্ধে দাঁড়াবেন।” এই পরিস্থিতিতে ভুক্তভোগী সমতলবাসী তো বটেই, পুলিশ-প্রশাসনেও অনেকের ধারণা, অশান্তি জিইয়ে রাখার চেষ্টা হচ্ছে।
মোর্চা নেতৃত্ব অবশ্য দাবি করেছেন, ‘রাজনৈতিক দ্বিচারিতা’র অভিযোগ পুরোপুরি ভিত্তিহীন। মোর্চার কেন্দ্রীয় কমিটির এক নেতার কথায়, “আমরা তরাই-ডুয়ার্স নিয়ে অবস্থান বদলাইনি বলেই আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছি।” তবে আন্দোলনের সময়ে বিরোধী মনোভাবাপন্নেরা অশান্তি ছড়ানোর চেষ্টা করছেন বলে মোর্চা নেতাদের অভিযোগ। পাহাড়ে রাজনীতির পর্যবেক্ষকদের একাংশের অবশ্য ধারণা, মোর্চার সাম্প্রতিক ‘ভূমিকা’য় মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ‘বিরক্ত’ বুঝতে পেরেই মোর্চা নেতারা ‘পাহাড়ে শান্তি আছে’ বলে মহাকরণে দাঁড়িয়ে বার্তা দিতে বাধ্য হয়েছেন। ‘একই কারণে’ সামসিংয়ের সাম্প্রতিক দলীয় সভায় মোর্চা সভাপতি বিমল গুরুঙ্গ রাজ্য সরকারের বিরোধিতার পরিবর্তে পাহাড়ে উন্নয়নের প্রসঙ্গ তুলেছিলেন বলেও মনে করা হচ্ছে।
পাশাপাশি, দলীয় কর্মী-সমর্থকদের মনোবল ধরে রাখার স্বার্থে সমতলে আন্দোলন জারি রেখে মোর্চা রাজ্য সরকারকে চাপে রাখার রাস্তায় হাঁটছে বলেও রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের অনুমান। দার্জিলিং পাহাড়ে মে দিবস উদ্যাপনে সিপিএমের ঘরোয়া সভা এবং সিপিআরএমের জনসভায় চোখে পড়ার মতো ভিড় হয়েছে বলে দাবি করে সিপিএম নেতা অশোক ভট্টাচার্যের ‘কটাক্ষ’, “পাহাড়-তরাই-ডুয়ার্স নিয়ে ভুল অবস্থান নেওয়ায় মোর্চা যে ক্রমশ জনবিচ্ছিন্ন হচ্ছে, দু’টি বামপন্থী দলের সভায় উপস্থিতের সংখ্যা তারই প্রমাণ।”



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.