সর্বশেষ (২০১১) জনগণনা অনুসারে পশ্চিমবঙ্গের মোট জনসংখ্যা ন’কোটি ১১ লক্ষ। তার মধ্যে এক কোটি সাত লক্ষ লোকের রেশন কার্ডই নেই। অথচ রেশন কার্ডের সংখ্যা ন’কোটি ১৩ লক্ষ!
এই হিসেব দিয়েছেন রাজ্যের খাদ্যমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক। বুধবার তিনি বলেন, “রাজ্যে নতুন সরকার ক্ষমতায় আসার পরে প্রথম ১১ মাসে ৩৮ লক্ষ ভুয়ো রেশন কার্ড ধরা পড়েছে। এখনও রাজ্যে ভুয়ো রেশন কার্ড রয়েছে ৭০ লক্ষ।”
ভুয়ো রেশন কার্ডের চক্র ভাঙতে রাজ্য সরকার নিজেদের তহবিল থেকে আড়াই কোটি টাকা খরচ করে কলকাতার বৌবাজার, হাওড়ার সাঁকরাইল এবং উত্তর ২৪ পরগনার হাবরায় পরীক্ষামূলক ভাবে ডিজিটাল রেশন কার্ড দিচ্ছে। কিন্তু সারা রাজ্যে ন’কোটির বেশি মানুষকে ডিজিটাল রেশন কার্ড দেওয়ার জন্য ২৯১ কোটি টাকা লাগবে। কেন্দ্রীয় সরকার সেই টাকা না-দিলে রাজ্যের পক্ষে এই খাতে অত টাকা খরচ করা সম্ভব নয় বলে খাদ্যমন্ত্রী জানিয়ে দিয়েছেন।
ভুয়ো রেশন কার্ড ধরায় হাতে হাতে একটা লাভও হচ্ছে। খাদ্যমন্ত্রী জানান, ৩৮ লক্ষ ভুয়ো রেশন কার্ড ধরা পড়ায় যত খাদ্যশস্য বেঁচেছে, তা থেকেই উত্তর ও দক্ষিণ ২৪ পরগনার আয়লা-দুর্গত তিন লক্ষ ৬৮ হাজার পরিবারকে পয়লা বৈশাখ থেকে দু’টাকা কিলোগ্রাম দরে প্রতি সপ্তাহে আট কেজি চাল দেওয়া হচ্ছে। এই প্রকল্প ছ’মাস চলবে। প্রয়োজনে পরবর্তী ছ’মাস (অর্থাৎ পঞ্চায়েত নির্বাচন পর্যন্ত) এই প্রকল্প চালু রাখা যায় কি না, তা খতিয়ে দেখবে রাজ্য সরকার। পশ্চিম মেদিনীপুরের ২৪টি ব্লকে দু’টাকা কেজি দরে চাল দেওয়ার জন্য রেশন দোকান ছাড়াও ৫৭টি কেন্দ্র খোলা হয়েছিল। এই ধরনের আরও ২৩টি কেন্দ্র চালু করা হচ্ছে।
গত বছরের একই সময়ের তুলনায় চলতি বছরের এপ্রিল পর্যন্ত রাজ্যে চাল সংগ্রহের পরিমাণ চার লক্ষ টনের বেশি বেড়ে ১২ লক্ষ টন ছুঁয়েছে। সংগৃহীত চাল রাখার জন্য গুদামের অভাব থাকায় মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রস্তাবিত কিষান মান্ডিগুলিতে একটি করে চালকল এবং একটি করে গুদাম তৈরির প্রস্তাব দিয়েছে খাদ্য দফতর। এ দিন মহাকরণে অর্থমন্ত্রী অমিত মিত্রের সভাপতিত্বে এক বৈঠকে খাদ্য দফতরের তরফে ওই প্রস্তাব পেশ করা হয়।
ওই সব চালকল ও গুদাম তৈরির দায়িত্ব বেসরকারি সংস্থার হাতে দেওয়ার জন্য একটি কেন্দ্রীয় প্রকল্পকে কাজে লাগাতে চায় খাদ্য দফতর। সেই প্রকল্পে গুদাম তৈরির পরে ১০ বছর ধরে সেখানে চাল রাখার ভাড়া জোগায় কেন্দ্র। চাল রাখার জন্য কেন্দ্র প্রতি মাসে কুইন্টাল-পিছু যে-ভাড়া ধার্য করেছে, তার পরিমাণ বাড়ানোর জন্য দিল্লির কাছে আর্জি জানিয়েছে রাজ্য।
রাজ্যের কৃষি দফতরের অধীন ১৯৬টি কৃষি খামারে একটি করে কিষান মান্ডি গড়ার কথা। এ দিনের বৈঠকে কৃষি দফতর জানায়, ১২টি কৃষি খামারে কিষান মান্ডি তৈরির কাজ শুরু হয়েছে। ওই সব জায়গায় চালকল এবং গুদাম তৈরির জন্য খাদ্য দফতরকে জায়গা দেওয়া হবে। |