ইমামদের ২৫০০ টাকা করে মাসিক ভাতা দেওয়ার কথা ঘোষণা করেছিলেন আগেই। রাজ্যের সংখ্যালঘুদের জন্য বুধবার আরও দু’টি সিদ্ধান্তের কথা জানালেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এর মধ্যে রয়েছে মোয়াজ্জিম (মসজিদে-মসজিদে যাঁরা আজান দেন)-দের জন্য মাসিক ১০০০ টাকা করে ভাতা। তার সঙ্গে অন্যান্য অনগ্রসর শ্রেণির (ওবিসি) তালিকায় আরও ৩৩টি সংখ্যালঘু গোষ্ঠীকে অন্তর্ভুক্ত করা। পঞ্চায়েত ভোটের আগে মুখ্যমন্ত্রী তথা তৃণমূল নেত্রীর এই জোড়া ঘোষণা ‘তাৎপর্যপূর্ণ’ বলেই রাজনৈতিক শিবিরের ব্যাখ্যা।
ওবিসি-সংরক্ষণের তালিকায় আরও বেশি সংখ্যালঘু সম্প্রদায়কে নিয়ে আসতে ২০১০-এই উদ্যোগী হন তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য। তিনি সরকারি চাকরিতে ওবিসি সংরক্ষণ ৭% থেকে বাড়িয়ে ১৭% করেন। এবং জানিয়ে দেন, বাড়তি ১০% সংরক্ষিত থাকবে শুধুমাত্র অনগ্রসর সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের জন্য। ওই সিদ্ধান্ত বিধানসভায় বিল আকারে পাশ করানোর পরে গত বছর তা অনুমোদনের জন্য পাঠানো হয় তৎকালীন রাজ্যপালের কাছে। কিন্তু ভোট এসে যাওয়ায় সেই বিলে সই করেননি রাজ্যপাল।
মুখ্যমন্ত্রী অবশ্য এ দিন বলেন, “আগের সরকার মুখেই ১৭% সংরক্ষণের কথা বলেছিল। কিন্তু কিছু কাজ করেনি। বিধানসভায় বিল পাশ করালেও রাজ্যপাল তাতে সম্মতি দেননি।” যার পরিপ্রেক্ষিতে বিরোধী দলনেতা এবং বাম জমানার মন্ত্রী সূর্যকান্ত মিশ্র বলেছেন, “রঙ্গনাথ মিশ্র কমিশনের সুপারিশ জমা পড়ার এক মাসের মধ্যে আমরাই এ রাজ্যে সংরক্ষণের প্রক্রিয়া শুরু করেছিলাম। যা করেছিলাম, আইন এবং সংবিধান মেনেই হয়েছিল। বরং বর্তমান মুখ্যমন্ত্রীই এই প্রক্রিয়াটি আটকে রেখেছিলেন! এখন নতুন আইনে কী করবেন, বিলের চেহারা দেখে বুঝতে হবে। পঞ্চায়েতে মহিলা সংরক্ষণ বিলের মতো কিছু হচ্ছে কি না, বিল এলে তবেই বোঝা যাবে!” প্রসঙ্গত, পঞ্চায়েতে মহিলাদের জন্য সংরক্ষণের আইন বাম-জমানায় পাশ হওয়ার পরে মমতার সরকার আবার বিধানসভার গত অধিবেশনে নতুন বিল পাশ করিয়েছে।
সংরক্ষণের তালিকায় আরও ৩৩টি গোষ্ঠীকে অন্তর্ভুক্তির পাশাপাশি মোয়াজ্জিমদের জন্য ভাতার সিদ্ধান্তে সংখ্যালঘুদের প্রতি ‘বার্তা’ দেওয়ার চেষ্টা রয়েছে মুখ্যমন্ত্রীর তরফে। ইমাম-ভাতার যৌক্তিকতা নিয়ে প্রশ্ন তুলে জমিয়তে উলামায়ে হিন্দের রাজ্য সম্পাদক সিদ্দিকুল্লা চৌধুরী মোয়াজ্জিমদের প্রসঙ্গও তুলেছিলেন। সিদ্দিকুল্লার সঙ্গে ‘ভুল বোঝাবুঝি’ মেটাতে সম্প্রতি সক্রিয় হয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। এ বার মোয়াজ্জিমদেরও সরকারি ভাতার ঘোষণা করলেন তিনি। প্রসঙ্গত, রাজ্যের সংখ্যালঘু দফতর রয়েছে মুখ্যমন্ত্রীর হাতেই।
আগের আমলে ওবিসি-তে ১০৮টি গোষ্ঠী তালিকাভুক্ত ছিল।
তার মধ্যে সংখ্যালঘু ছিল ৬৫টি। নতুন সরকার এসে আরও ৩৫টি গোষ্ঠীর নাম ওবিসি-তে অন্তর্ভুক্ত করল। এর মধ্যে ৩৩টি সংখ্যালঘু। সব মিলিয়ে ওবিসি-র আওতাভুক্ত গোষ্ঠীর সম্প্রদায়ের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়াল ১৪৩। এর মধ্যে ৯৮টি সংখ্যালঘু গোষ্ঠী।
মুখ্যমন্ত্রীর অভিযোগ, “সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ অনুযায়ী এই ধরনের অন্তর্ভুক্তির আগে সংশ্লিষ্ট সম্প্রদায়গুলির মধ্যে আর্থ-সামাজিক সমীক্ষা চালাতে হয়। কিন্তু আগের সরকার কোনও সমীক্ষা ছাড়াই ভোটের আগে দলীয় ক্যাডারদের তুষ্ট করতে ওই ঘোষণা করে দেয়! আমরা গত ১১ মাস ধরে নমুনা সমীক্ষা করেছি। এর ফলে ৯৯% গরিব সংখ্যালঘু মানুষ ওবিসি-র তালিকায় চলে এলেন।”
সরকারের এক মুখপাত্র অবশ্য জানান, ২০১০ সালের ২৪ সেপ্টেম্বর বিজ্ঞপ্তি জারি করে নতুন ওবিসি সংরক্ষণের কথা ঘোষণা করার আগে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়কে দিয়ে সমীক্ষা করায় আগের সরকার। ‘সব চেয়ে পিছিয়ে পড়া’ এবং ‘পিছিয়ে পড়া’, এই দুই ভাগে ভাগ করে ১০৮টি গোষ্ঠীর মধ্যে সমীক্ষা চালানো হয়। এ বার ৪৭টি গোষ্ঠীর উপরে সমীক্ষা করে ৩৫টিকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। সমীক্ষা করেছে সংশ্লিষ্ট দফতর। মণ্ডল কমিশনের নির্দেশিকা মেনেই দু’টি সমীক্ষা করা হয়েছে। এর মধ্যে কোনও পার্থক্য নেই। মহাকরণের খবর, আরও সাতটি সংখ্যালঘু গোষ্ঠীকে অন্তর্ভুক্ত করা হবে। সব কাজ শেষ হলে মুসলিম জাতিগোষ্ঠীর ৯৫% মানুষ ওবিসি-র আওতায়
চলে আসবেন।
এই অবস্থায় টিপু সুলতান মসজিদের ইমাম মৌলানা নুরুর রহমান বরকতি এবং তৃণমূলের সংখ্যালঘু সেলের চেয়ারম্যান ইদ্রিশ আলি অভিযোগ করেছেন, ইমাম-ভাতা দেওয়ার কাজে সিপিএম বাধা দিচ্ছে। তাঁদের বক্তব্য, মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশে ইমামদের ভাতা দেওয়ার জন্য সরকারি স্তরে কাজ শুরু হলেও কয়েকটি সিপিএম পরিচালিত পুরসভা (যেমন পাঁশকুড়া, হলদিয়া, কাকদ্বীপ), কিছু গ্রাম পঞ্চায়েত এবং কয়েক জন ‘সিপিএম-সমর্থক বিডিও’ তাতে ‘অসহযোগিতা’ করছেন। |