রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের আগে পশ্চিমবঙ্গের আর্থিক প্যাকেজের জন্য তৎপর হলেন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহ।
জাতীয় সন্ত্রাস দমন কেন্দ্র নিয়ে মুখ্যমন্ত্রীদের সম্মেলনে যোগ দিতে আজ সন্ধ্যায় দিল্লি পৌঁছেছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ৫ মে-র ওই বৈঠকের আগে সনিয়া গাঁধী এবং মনমোহন সিংহের সঙ্গেও আলাদা বৈঠক করবেন তিনি। স্বাভাবিক ভাবেই সেখানে পশ্চিমবঙ্গের জন্য আর্থিক প্যাকেজের দাবি উঠবে। তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে আজই অর্থ মন্ত্রকের ব্যয়সচিব সুমিত বসু পশ্চিমবঙ্গের আর্থিক পরিস্থিতি নিয়ে রাজ্যের অর্থ দফতরের শীর্ষ কর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন। রাজ্যের রাজস্ব আয় বাড়ানোর জন্য কী কী পদক্ষেপ করা হয়েছে, তা রাজ্যের আমলাদের কাছে জানতে চাওয়া হয়। সরকারি সূত্রের খবর, পশ্চিমবঙ্গের অর্থ সচিব এইচ কে দ্বিবেদীর নেতৃত্বে রাজ্যের আমলারা যে বিশদ ব্যাখ্যা দিয়েছেন, তাতে সন্তোষ প্রকাশ করেছেন অর্থ মন্ত্রকের কর্তারা। যার ফলে পশ্চিমবঙ্গের জন্য আর্থিক সাহায্যের সম্ভাবনা কিছুটা উজ্জ্বল হয়ে উঠেছে। |
রাজধানীতে মমতা। ছবি: রমাকান্ত কুশওয়াহা |
রাষ্ট্রপতি নির্বাচন থেকে শুরু করে বাংলাদেশের সঙ্গে তিস্তা চুক্তির রূপায়ণ সব ক্ষেত্রেই শরিক তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সহযোগিতা প্রয়োজন। আবার রাজ্যের আর্থিক পরিস্থিতির কথাও কেন্দ্রীয় সরকারের অজানা নয়। সমস্যা হল, কোনও একটি রাজ্যের জন্য বিশেষ সাহায্য দেওয়ার ক্ষেত্রে সাংবিধানিক বাধা রয়েছে। শুধু পশ্চিমবঙ্গ নয়, কেরল এবং পঞ্জাবকেও ঋণগ্রস্ত রাজ্য বলে ঘোষণা করা হয়েছে। এই তিনটি ঋণগ্রস্ত রাজ্যকে কী ধরনের সাহায্য দেওয়া যেতে পারে, তা দেখতে অর্থ মন্ত্রকের ব্যয়সচিবের অধীনে কমিটি তৈরি করে দিয়েছেন অর্থমন্ত্রী প্রণব মুখোপাধ্যায়। তবে প্রধানমন্ত্রী নিজে হস্তক্ষেপ করে সমস্যার সমাধান করতে চাইছেন। কিন্তু শুধু পশ্চিমবঙ্গের জন্য আর্থিক প্যাকেজ ঘোষণা করা হলে অন্য আঞ্চলিক দলগুলি শোরগোল করতে পারে। সে ক্ষেত্রে ২২ মে সংসদের চলতি অধিবেশন শেষ হওয়ার পরেই এই ঘোষণা হতে পারে।
রাজ্যের মোট ঋণের পরিমাণ প্রায় দু’লক্ষ কোটি টাকা। সুদ-আসল মেটাতে বছরে রাজ্যে প্রায় ২২ হাজার কোটি টাকা মেটাতে হয়। মমতা চাইছেন, আগামী তিন বছর রাজ্যকে যেন এই টাকা দিতে না হয়। এ ছাড়া আংশিক ঋণ মকুব করে, সুদের হার কমিয়ে এবং ঋণ পরিশোধের মেয়াদ বৃদ্ধি করে ঋণের কাঠামোটাই ঢেলে সাজার দাবিও তুলেছেন তিনি। এ দিন দিল্লি যাওয়ার আগে কলকাতায় এ নিয়ে প্রশ্ন করা হলে দৃশ্যতই রেগে যান মমতা। বলেন, “আমি ভিক্ষা নেওয়া অপছন্দ করি। এটা মনে করবেন না, কেন্দ্র আমাদের দয়া করছে। এটা তাদের দায়িত্বের মধ্যেই পড়ে। অর্থ কমিশন তো বলেই দিয়েছে আর্থিক সঙ্কটের দিক থেকে পশ্চিমবঙ্গ এখন এক নম্বরে।” তাঁর প্রশ্ন, “একই কারণে এর আগে পঞ্জাবকে যখন ছাড় দেওয়া হয়েছিল, আমাদের কেন দেওয়া হবে না?”
অর্থ মন্ত্রকের বরাবরের যুক্তি ছিল, পুরোপুরি কেন্দ্রীয় সাহায্যের উপর নির্ভরশীল না হয়ে পশ্চিমবঙ্গ নিজের রাজস্ব বাড়ানোর বন্দোবস্ত করুক। আজ রাজ্যের তরফে জানানো হয়েছে, সিগারেট, বিলিতি মদের উপর আগেই কর বাড়ানো হয়েছে। ই-গভর্ন্যান্স চালু করেও দীর্ঘমেয়াদে কর আদায়ের পরিমাণ বাড়ানোর চেষ্টা চলছে। অর্থমন্ত্রী অমিত মিত্র যে বাজেট পেশ করেছেন, সেখানেও বিলাসপণ্যের উপর কর বসানো হয়েছে। প্রশ্ন উঠেছে, যুক্ত-মূল্য কর (ভ্যাট)-এর হার কেন ৪% থেকে বাড়িয়ে ৫% করা হচ্ছে না? রাজ্যের আমলারা যুক্তি দিয়েছেন, এর ফলে গরিব মানুষ ধাক্কা খাবেন।
রাজ্যের অর্থসচিব দ্বিবেদী এবং বিশেষ সচিব (বাজেট) এ আর চক্রবর্তী যুক্তি দিয়েছেন, বাজেটের কর প্রস্তাবে যে সব ছোট ছোট সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে, তা থেকেই রাজস্ব আদায় অনেকটাই বাড়তে পারে। যেমন, শুধু প্রবেশ কর থেকেই বাড়তি দু’হাজার কোটি টাকা আদায় হতে পারে। উৎপাদন শুল্ক থেকেও বিপুল পরিমাণ আয় বাড়বে। প্রতি বোতল মদের উপরে নির্দিষ্ট পরিমাণ কর বসানোর বদলে মদের দামের উপর কর বসানো হয়েছে। যার ফলে মদের দাম বাড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে কর আদায়ের পরিমাণও বাড়বে।
এই পরিস্থিতিতে আর্থিক প্যাকেজ নিয়ে আজ প্রধানমন্ত্রীর কাছে তৃণমূলের তরফে লিখিত দাবি পেশ করা হয়। এ দিনই রাজ্যসভায় তৃণমূল সাংসদ সুখেন্দুশেখর রায় রাজ্যের জন্য কয়লা বাবদ ৫ হাজার কোটি টাকা বকেয়া রয়্যালটির দাবি তুলেছেন। আগামিকাল ও পরশু, প্রধানমন্ত্রী এবং ইউপিএ-র সভানেত্রীর সঙ্গে বৈঠকেও সেই সব দাবিই তুলতে চলেছেন মমতা। তার আগে আজকের বৈঠক তাৎপর্যপূর্ণ। অর্থ মন্ত্রকের কর্তারা অবশ্য আজকের বৈঠকের সঙ্গে রাজনৈতিক যোগসূত্র টানতে নারাজ। তাঁদের বক্তব্য, শুধু পশ্চিমবঙ্গ নয়, কেরল এবং পঞ্জাবের সঙ্গেও এই বৈঠক হবে। সুমিত বসুর নেতৃত্বাধীন কমিটির কাজই হল এই রাজ্যগুলিতে আর্থিক সুরাহা দেওয়ার উপায় খোঁজা। |