মুর্শিদাবাদের ইতিহাস নিয়ে আলোচনাসভা গ্রান্টহলে
সুবে বাংলার রাজধানী ছিল যে শহর, তার ইতিহাস চর্চা কেবল আঞ্চলিক স্তরেই সীমাবদ্ধ থাকে না, তার সঙ্গে যোগ হয়ে যায় দেশের ইতিহাসও। শশাঙ্কের সময়ে কর্ণসুবর্ণ ছিল পূর্ব ভারতের এক বিস্তৃত ভূখণ্ডের রাজধানী। এই জেলারই রক্তমৃত্তিকা মহাবিহারে পড়তে আসতেন সারা ভারতের বিদ্যার্থীরা। হিউয়েন সাং এই এলাকার কথা জানিয়েছেন তাঁর ভ্রমণ বৃত্তান্তে।
বহরমপুরের গ্রান্টহলে মঙ্গলবার পয়লা মে ‘মুর্শিদাবাদ জেলা ইতিহাস চর্চা কেন্দ্র’-এর প্রতিষ্ঠা দিবসের অনু্ষ্ঠানে এক আলোচনাসভায় উঠে এল এই সব প্রসঙ্গই। তবে মুর্শিদাবাদের নবাবদের নিয়ে বিস্তারিত গবেষণা করেছেন বিখ্যাত ইতিহাসবিদেরা। সিরাজ, আলিবর্দিদের নিয়ে সেই সব গবেষণায় তাঁদের সমসময়ও উঠে এসেছে। কিন্তু এখনও সেই প্রসঙ্গেই মুর্শিদাবাদের সেই সময়ের জনজীবনের বহু দিক নিয়ে আলোচনা অসম্পূর্ণ। নানা ছবি ও কাহিনিতে যে জনজীবনের কথা রয়েছে, তা গবেষণার কাজে যথেষ্ট ব্যবহার করা হয়েছে কি না, তা নিয়েও স্থানীয় গবেষকদের সংশয় রয়েছে। মুর্শিদাবাদের বিভিন্ন পুরাভবনের স্থাপত্যরীতি নিয়েও পর্যাপ্ত কাজ এখনও হয়নি বলে মনে করেন তাঁরা।
ওই আলোচনাসভাকে প্রায় কাব্যের পর্যায়ে উন্নীত করেন বহরমপুর কৃষ্ণনাথ কলেজের ইতিহাস বিভাগের প্রধান রাজর্ষি চক্রবর্তী। গাদা খানেক মুখস্ত করে, পরীক্ষার খাতায় বিস্তর উগরে দেওয়া আসলে ইতিহাস পাঠ করা নয়। এ কথা জানিয়ে রাজর্ষিবাবুর দাবি, “উপমা, গল্প, উদাহরণ, তুলনা ও মানচিত্রের সাহায্যে স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ে ইতিহাস পড়ালে পড়ুয়ারা আগ্রহী হয়ে উঠে।” জেলার ইতিহাস গবেষক অশীতিপর বিজয়কুমার বন্দ্যোপাধ্যায় ‘আঞ্চলিক ইতিহাস’-এর ধারণাটাই নস্যাৎ করতে চাইলেন। তিনি বলেন, “নিছক আঞ্চলিক ইতিহাস বলে কিছু হয় না। দ্রাবিড় সভ্যতা থেকে ব্রিটিশ আমল পর্যন্ত ইতিহাসের স্মারক ছড়িয়ে রয়েছে মুর্শিদাবাদ জুড়ে। ফরাক্কা ফিডার ক্যানাল খুঁড়তে গিয়ে পাওয়া যায় হরপ্পা-মহেঞ্জোদরোর সময়সাময়িক সভ্যতার। দ্বিতীয় শত্যব্দী থেকে অষ্টম শতাব্দী পর্যন্ত বৌদ্ধ সভ্যতার নিদর্শন পাওয়া গিয়েছ কর্ণসুবর্ণে। হিউয়েন সাং এসেছিলেন কর্ণসুবর্ণে। এত কিছুর পরেও মুর্শিদাবাদের ইতিহাসকে আঞ্চলিক ইতিহাস কী ভাবে বলা যায়?” বিজয়বাবু বলেন, ‘‘এ জেলার বহরমপুর-কাশিমবাজারে আর্মেনিয়াম, ডাচ, ফরাসিরা এসেছেন নবাব-বাদশার আমলে। ফলে এখানকার ইতিহাস আন্তর্জাতিক।”
আলোচনাসভার মুখবন্ধে বহমপুরের বি এড ট্রেনিং কলেজের অধ্যক্ষ তথা আয়োজক সংস্থার সভাপতি সসীম কবিরাজ ঠাকুর বলেন, “মূলত স্কুল-কলেজের ইতিহাসের শিক্ষক, ইতিহাস মনস্ক ও ইতিহাস অনুরাগী মানুষদের নিয়ে ওই সংস্থা গড়া হয়েছে এ জেলার ইতিহাস চর্চার উদ্দেশ্যে।” অথচ আজ এ জেলার পথে প্রান্তরে প্রাচীন ইতিহাসের স্মারক অবহেলায় নষ্ট হচ্ছে বলে আক্ষেপ করেন মুর্শিদাবাদের লোকসংস্কৃতির গবেষক পুলকেন্দু সিংহ। পুলকেন্দুবাবু বলেন, “জিয়াগঞ্জে যে সংগ্রহশালা রয়েছে তার কোনও প্রচার নেই। অনেক জায়গায় উৎখননের কথা ছিল। কিন্তু তা হচ্ছে না।” স্মারক পত্রিকায় মুর্শিদাবাদ নিয়ে বিশিষ্টজনদের লেখা ২৬টি প্রবন্ধের সংকলন গ্রন্থ এ দিনের অনুষ্ঠানে প্রকাশ করেন স্বামী বিশ্বময়ানন্দজী মহারাজ।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.