|
|
|
|
নতুন মুখ সমরেই ভরসা সিপিএমের |
বরুণ দে • মেদিনীপুর |
গত বিধানসভা নির্বাচনে দলের জেলা-কমিটির সদস্য হিসাবে বিনপুরে ভোট-তদারকির দায়িত্বে ছিলেন। জঙ্গলমহল এলাকার অন্য অনেক আসন হাতছাড়া হলেও বিনপুর থেকে জিতেছিলেন সিপিএম প্রার্থীই। বস্তুত, ঝাড়খণ্ডীদের দখল থেকে আসনটি পুনরুদ্ধার করে সিপিএম। সেই অর্থে, জেলা-পার্টি তাঁকে যে দায়িত্ব দিয়েছিল, তাতে ষোলো আনা সফল হয়েছিলেন। এত দিন দলের তরফে নির্বাচন পরিচালনার কাজে যুক্ত থাকা সেই যুবনেতা সমর মুখোপাধ্যায় নিজেই এ বার দাসপুর বিধানসভা কেন্দ্রের উপনির্বাচনে সিপিএম প্রার্থী। সোমবার দলের পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা সম্পাদকমণ্ডলীতে মনোনীত হওয়ার দিনেই সিপিএম রাজ্য নেতৃত্ব দাসপুরে দলের প্রার্থী হিসাবেও তাঁর নামই ঘোষণা করেছেন।
|
সমর মুখোপাধ্যায়।
নিজস্ব চিত্র। |
বিপক্ষে সদ্য-প্রয়াত তৃণমূল বিধায়ক অজিত ভুঁইয়ার স্ত্রী মমতাদেবী। দাসপুরের মতো তৃণমূলের ‘দুর্গে’ প্রার্থী হওয়াটা কি কঠিন পরীক্ষা নয়? সমরবাবুর সাফ কথা, “পার্টি দায়িত্ব দিয়েছে। কাজ করতে হবে। এটা রাজনৈতিক লড়াই। বিপক্ষে কে থাকছেন, তিনি ভাল না মন্দ, সেটা মানুষ বিচার করবেন।” নির্বাচনী প্রচারে নামার আগে, মঙ্গলবার মে-দিবসের সন্ধ্যায় সিপিএমের জেলা কার্যালয়ে বসে সমরবাবু বলেন,“দাসপুরের ঐতিহ্যই তো বামপন্থার। এক সময়ে বলা হত, ‘ঘাটাল-দাসপুর-চন্দ্রকোনা/ কংগ্রেসের কবরখানা’। মুখে মুখে ঘুরত এই স্লোগান। ‘দুর্গ’ বলে কিছু হয় না। মানুষ যাঁকে সমর্থন করবেন, তিনিই জিতবেন।”
নির্বাচনে কে জিতবেন, তা সময়ই বলবে। তবে, সিপিএমের এই যুব-প্রার্থীর ‘লড়াকু’ ইমেজ নিয়ে কোনও মহলেই সংশয় নেই। রাজনীতিতে হাতেখড়ি সেই একাদশ শ্রেণিতে পড়ার সময়েই। ১৯৯২ সালে অবিভক্ত মেদিনীপুরে এসএফআইয়ের জেলা সম্পাদক হন। ছাত্র সংগঠনের দায়িত্ব ছেড়ে ২০০০-এ যুক্ত হন ডিওয়াইএফআই-য়ে। যুব-সংগঠনের সহ-সম্পাদক ছিলেন। জেলা ভাগ হওয়ার পরে ২০০২ থেকে ২০০৬ পর্যন্ত ডিওয়াইএফআইয়ের পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা সম্পাদকের দায়িত্বও সামলেছেন। তার আগে ২০০৪-এ সম্মেলনের সময় থেকে সিপিএমের জেলা কমিটিরও সদস্য। বাড়ি দাসপুরেরই গোছাতি গ্রাম পঞ্চায়েতের রানা গ্রামে। গ্রামের প্রাথমিক স্কুলেই পড়াশোনা। সেখান থেকে সোনাখালি হাইস্কুল। স্কুলের পাঠ শেষ করে ক লকাতার বঙ্গবাসী কলেজে ভর্তি হন। নৃতত্ত্ববিদ্যা নিয়ে পড়াশোনা করেছেন। কলেজ শেষে ফের মেদিনীপুরে ফিরে বিদ্যাসাগর বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হন। সেটা ১৯৮৬ সাল। দাসপুরের উপনির্বাচনে ‘তরুণ মুখ’ তুলে আনার দাবি উঠেছিল সিপিএমের অন্দরে। সেই মতো বেশ কয়েক জনের নাম নিয়েই আলোচনা হয়। তার মধ্যে থেকে প্রার্থী হিসাবে সমরবাবুকেই বেছে নিয়েছেন জেলা ও রাজ্য নেতৃত্ব। দাসপুরের ‘ঘরের ছেলে’, এই পরিচয়টাও সমরবাবুর পক্ষে গিয়েছে।
রাজ্যে পালাবদলের আগেও পশ্চিম মেদিনীপুরের যে ক’টি এলাকা তৃণমূলের ‘দুর্গ’ বলে পরিচিত ছিল, তার মধ্যে দাসপুর অন্যতম। ২০০৮-এর পঞ্চায়েত নির্বাচনে জেলায় একমাত্র দাসপুর-২ পঞ্চায়েত সমিতিই দখল করেছিল তৃণমূল। তার আগে ২০০১-এর বিধানসভা নির্বাচনেও এই আসন থেকে জিতেছিলেন তৃণমূলের অজিত ভুঁইয়া। ২০০৬-এ অবশ্য সিপিএমের সুনীল অধিকারীর কাছে তিনি পরাজিত হন। গত বিধানসভা নির্বাচনে ২৪, ৯২৭ ভোটে সুনীলবাবুকে হারিয়েই ফের বিধায়ক হন অজিতবাবু। তৃণমূলের ঝুলিতে গিয়েছিল প্রদত্ত ভোটের ৫৪. ৭৬ শতাংশ। তৃণমূলের এ হেন ‘দুর্গ’ থেকেও জেতার আশা ছাড়ছেন না সমরবাবু। তাঁর কথায়, “আমি ঘরের ছেলে। দাসপুরের মানুষ শান্তিপ্রিয়। প্রগতিশীল চিন্তার শরিক। ভুল এবং অন্যায়ের ঝোঁককে সমর্থন করেন না। বরং প্রতিবাদ করেন। নতুন সরকারের ১১ মাসে কী হয়েছে! স্থানীয়স্তরে খোঁজ নিয়ে দেখুন, তৃণমূলের দখলে থাকা পঞ্চায়েত সমিতির কাজেও মানুষ তিতিবিরক্ত।”
বামপন্থী পরিবারেরই ছেলে। ছোটবেলায় পার্টির হয়ে পোস্টারিং করতেন। ১৯৮১ সালের ঘটনা মনে করে সমববাবু বলেন, “বামেদের ডাকা বন্ধকে সমর্থন করায় ওই বছর আমাদের স্কুলের কয়েক জন শিক্ষককে বাইরের লোকজন এসে মারধর করেন। ছাত্র হিসাবে আমরা এ ঘটনা মেনে নিতে পারিনি। ছাত্রদের নিয়ে প্রতিবাদ মিছিল করি।” রাস্তায় নেমে মিছিল করার সেই শুরু। এখন মেদিনীপুর শহরে থাকলেও মাঝেমধ্যেই দাসপুরে যান। বুধবার থেকেই প্রচারে নেমে পড়েছেন। তাঁর সমর্থনে দেওয়াল লিখনও শুরু হয়েছে। দাসপুরের মতো এলাকায় তৃণমূলকে কি সত্যিই ছাপিয়ে যেতে পারবে সিপিএম? ১৯৯২ থেকে দলের কর্মী, মধ্য চল্লিশের সমরবাবু বলছেন, “মানুষ অভিজ্ঞতা দিয়েই ভাল-মন্দ বিচার করবেন। গণতন্ত্রে তো মানুষই শেষ কথা বলেন। জেতার ব্যাপারে আমি আশাবাদী!” |
|
|
|
|
|