মোহনবাগান নিজের বাড়ির মতো: ব্যারেটো
গারো বছর ধরে যে দশ নম্বর সবুজ-মেরুন জার্সি পরতেন, তা রবিবার চিরদিনের জন্য ওয়ারড্রোবে তুলে রাখবেন তিনি। ক্লাব তাঁবুতে বসে এ কথা ঘোষণার দিনেও কোনও মালিন্যই ছুঁতে পারল না হোসে রামিরেজ ব্যারেটোকে। অবিতর্কিতই রয়ে গেলেন তিনি।
নিজের ক্লাব মোহনবাগান তো বটেই, চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী ইস্টবেঙ্গল সম্পর্কেও একটিও বিতর্কিত শব্দ বেরোলো না ব্যারেটোর মুখ থেকে। উলটে ব্রাজিলীয় স্ট্রাইকার বলে দিলেন, “কলকাতায় আসার পর বহু সুখ, দুঃখের সাক্ষী আমি। কিন্তু আমার জীবনে কোনও দুঃখের দিন নেই।” পাশাপাশি সুব্রত ভট্টাচার্য না সুভাষ ভৌমিককে আপনার প্রিয় কোচ জানতে চাইলে বলে দিলেন, “দু’জনেই খুব ভাল কোচ। কোনও তুলনা করতে চাই না।”
ফেসবুক, টুইটরে উপচে পড়ছে অভিবাদন জানিয়ে। “ভগবানও অবসর নেন, পৃথিবীর তামাশায়’-এর মতো লাইন লেখা হচ্ছে তাঁকে নিয়ে। মোহনবাগানের ডাকা বুধবারের সাংবাদিক সম্মেলনে ঢোকার এবং বেরিয়ে যাওয়ার সময় তাঁকে জড়িয়ে ধরে কাঁদছেন সদস্য-সমর্থকরা। সংবাদমাধ্যমের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেওয়ার সময় মনে হল সবুজ তোতার চোখও চিকচিক করছে। “এই দিনটার জন্য তৈরি ছিলাম না। কিন্তু একটা সময় জানতাম এই দিনটা আসবে। পেশাদার জগতে যা ভবিতব্য। ব্রাজিল থেকে এসেছিলাম এখানে। এখন মনে হয় ঠিক জায়গাতেই এসেছি। মোহনবাগান আমার বাড়ির মতো হয়ে গিয়েছিল।”
ব্যারেটোকে জড়িয়ে কাঁদছেন মোহনবাগান সমর্থক। গায়ে ব্যারেটোরই ছবিসহ টি-শার্ট। ছবি: শঙ্কর নাগ দাস।
পিছনে বিশাল ফ্লেক্সে তাঁর গোল করার, দলকে জিতিয়ে ফেরার বিভিন্ন মুডের ছবি। পাশে বসে ক্লাব সচিব অঞ্জন মিত্র, অর্থ সচিব দেবাশিস দত্তরা তাঁকে ৬ মে আই লিগের ম্যাচে কী ভাবে বিদায় সংবর্ধনা জানানো হবে তা ঘোষণা করছেন। ঘোষিত হচ্ছে, রুপোর পাল তোলা নৌকো, আজীবন সদস্যপদ দেওয়ার আগে হুড খোলা জিপে পুরো পরিবার নিয়ে মাঠে ঘোরানো হবে ব্যারেটোকে। বিদেশি হলেও তিনিও যে মোহনবাগানের ‘ঘরের ছেলে’ সেটা বোঝাতে পুরস্কার তুলে দেওয়ার সময় মঞ্চে আমন্ত্রণ জানানো হচ্ছে চুনী গোস্বামী, সুব্রত ভট্টাচার্য এবং সত্যজিৎ চট্টোপাধ্যায়কে। মোহনবাগান রত্নের জন্য তাঁর নাম বিবেচিত হচ্ছে।
কর্তাদের কথা যত শুনছেন ততই ব্যারেটোসুলভ স্মিত হাসি ছড়িয়ে পড়ছে তাঁর মুখে। ম্লান মুখটা উজ্জ্বল হয়ে ওঠে, খেলার প্রসঙ্গ এলে। “ব্লাটার যে বার এখানে এসেছিলেন (পড়ুন ২০০৭) সে বার আমরা ডার্বিতে ২-১ জিতেছিলাম। আমি আর ডগলাস গোল করেছিলাম। ওটা আমার খেলা সেরা মোহন-ইস্ট ম্যাচ।” বলতে বলতেই যোগ করেন, “মোহনবাগানে আমার বহু স্মরণীয় মুহূর্ত আছে। তবে যে দিন প্রথম মোহনবাগান জার্সি পরেছিলাম, যে দিন ক্লাবের হয়ে প্রথম গোলটা করেছিলাম, যে দিন প্রথম আই লিগ জিতলাম সেই দিনগুলোর কথা ভুলি কেমন করে।”
আপনি কখনও ইস্টবেঙ্গলে খেলেননি কিন্তু ওদের সমর্থকরাও তো আপনাকে ভালবাসেন? “এটা আমার সৌভাগ্য। আমাদের সমর্থকদের মতো ওদের আবেগকেও সম্মান করি।” ব্যারেটো বলে দিলেন, “মোহনবাগান থেকে অবসর নিলেও আমি খেলব। কোথায় খেলব সেটা কয়েক দিনের মধ্যেই জানতে পারবেন। আমার পরিবার চায় আমি এখন কলকাতায় থাকি।” ইগর থেকে স্টিভন আবরোহি, চিডি থেকে ওডাফা, বাইচুং থেকে সুনীল ছেত্রীকোন ফরোয়ার্ডের পাশে খেলে বেশি আনন্দ পেয়েছেন? ব্যারেটো হাসেন, “সবাই ভাল। যদি কখনও বই লিখি সবাইকে নিয়েই লিখব।”
রবিবার ব্যারেটোর বিদায়ী ম্যাচে যুবভারতীতে কোনও টিকিট বিক্রি করবে না মোহনবাগান। ব্যারেটো-প্রেমীদের জন্য ভি আই পি বাদে খুলে রাখা হবে সব গেট। আগে কোনও ফুটবলারকে এই সম্মান দেয়নি শতবর্ষ প্রাচীন ক্লাব।




First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.