নিজস্ব সংবাদদাতা • কলকাতা |
রাজ্যে কোথাও তারা ‘অতি সক্রিয়’, কোথাও ‘নিষ্ক্রিয়’। কোথাও ব্যঙ্গ-চিত্র পাঠানোর অভিযোগ পাওয়া মাত্রই অভিযুক্তকে গ্রেফতার করে হাজতে পুরছে পুলিশ। কোথাও আবার শ্লীলতাহানির অভিযোগ পাওয়ার পরে অভিযুক্তকে ধরেও ছেড়ে দিচ্ছে। এমন অভিযোগ এ বার হাওড়া সিটি পুলিশের বিরুদ্ধেও।
অভিযোগ, গত শনিবার মালিপাঁচঘরা থানার এক তদন্তকারী অফিসার স্বামীর হাতে নির্যাতিতা এক মহিলাকে নির্দেশ দিয়েছিলেন স্বামীকে খুঁজে এনে তাঁদের হাতে তুলে দিতে। এ বার ‘তোলাবাজি’ ও ‘খুনের’ হুমকি দেওয়ায় অভিযুক্ত এক ব্যক্তিকে ধরে আনা দূরে থাক, সেই ঘটনার ঠিকমতো তদন্তই শুরু না করার অভিযোগ উঠল লিলুয়া থানার পুলিশের বিরুদ্ধে।
লিলুয়ার রবীন্দ্র সরণির বাসিন্দা, পেশায় প্রোমোটার প্রবীণকুমার কৌশিক বেশ কয়েক মাস ধরে ভট্টনগরের অরবিন্দনগরে একটি বহুতল তৈরি করছেন। তাঁর অভিযোগ, গত ৯ এপ্রিল অভিষেক ঘোষ নামে স্থানীয় এক যুবক তাঁকে মোবাইলে ফোন করে ‘তোলা’ দাবি করে। তিনি বলেন, “ওই এলাকায় শান্তিপূর্ণ ভাবে কাজ করতে চাইলে আমাকে ৫০ হাজার টাকা দিতে হবে বলে দাবি করে অভিষেক। না দিলে কাজ বন্ধ করে দেওয়ার ও প্রাণে মারার হুমকিও দেয়।”
ওই প্রোমোটারের আরও অভিযোগ, এই ঘটনার কয়েক দিন আগেই তাঁর ব্যবসার এক অংশীদার সুমন্ত সরকারের কাছেও টাকা চেয়ে হুমকি-ফোন করেন স্থানীয় তৃণমূল নেতা সুবীর রাউত। সুবীরবাবু হাওড়া জেলা তৃণমূলের সহ-সভাপতি। প্রবীণবাবু বলেন, “টাকা দিতে রাজি না হওয়ায় আমাদের মিথ্যা মামলায় ফাঁসানোর ভয় দেখাতে শুরু করেন সুবীর রাউত। এমনকী, বিষয়টি কাউকে জানালে খুনের হুমকিও দেওয়া হয়। তখনই পুলিশ ও অন্যান্য স্তরে লিখিত ভাবে বিষয়টি জানিয়েছিলাম।”
প্রবীণবাবু জানান, গত ১০ এপ্রিল বিকেলে সুবীর রাউত ও অভিষেক স্থানীয় কিছু দুষ্কৃতীকে নিয়ে তাঁদের নির্মীয়মাণ বাড়ির সামনে আসেন। তাঁর অভিযোগ, “ওরা এসে কাজ বন্ধের হুমকি দিয়ে আমাদের মারধর করে। সেই সময়ে এক দুষ্কৃতী আমার সোনার হার ছিনিয়ে নিয়ে পালায়।” এই ঘটনার পরে প্রবীণবাবু মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং হাওড়া সিটি পুলিশের কমিশনার ও হাওড়া তৃণমূলের জেলা সভাপতি তথা রাজ্যের কৃষি বিপণন মন্ত্রী অরূপ রায়কে বিষয়টি লিখিত ভাবে জানান। কিন্তু ওই প্রোমোটারের অভিযোগ, “এফআইআর হওয়ার ১২ দিন পরেও ওই তৃণমূল নেতাকে থানায় ডেকে জিজ্ঞাসাবাদ পর্যন্ত করা হয়নি।” যদিও হাওড়া সিটি পুলিশের ডেপুটি কমিশনার (সদর) নিশাদ পারভেজের দাবি, “অভিযুক্ত ব্যক্তিকে থানায় ডাকা হয়েছিল। তিনি আসেননি। তবে ওই ঘটনার তদন্ত চলছে। অভিযোগ প্রমাণিত হলেই ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
অভিযুক্ত তৃণমূল নেতা অবশ্য পুলিশের এই দাবি উড়িয়ে দিয়ে নিজেই ঘটনার পুলিশি তদন্তের দাবি তুলেছেন। তাঁর দাবি, “থানা থেকে আমাকে ডেকে এ বিষয়ে কোনও জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়নি। তা ছাড়া, যে প্রোমোটার এই সব অভিযোগ করেছেন, তাঁকে আমি চিনিই না। তবে বিষয়টি নিয়ে তদন্ত হওয়া অবশ্যই দরকার। তা হলেই বোঝা যাবে সত্যিটা কী।”
তৃণমূলের হাওড়া জেলা সভাপতি অরূপ রায় বলেন, “পুলিশ নিরপেক্ষ তদন্ত করছে। কেউ দোষী প্রমাণিত হলে অবশ্যই ব্যবস্থা নেওয়া হবে।” |