নিজস্ব সংবাদদাতা • কলকাতা |
সিঙ্গুর মামলা এখন রায়ের অপেক্ষায়।
সম্প্রতি দু’পক্ষের সওয়াল-জবাব শেষ হয়েছে। বিচারপতি পিনাকী ঘোষ এবং বিচারপতি মৃণালকান্তি চৌধুরীর ডিভিশন বেঞ্চ টাটা মোটরস এবং রাজ্য সরকারকে দু’সপ্তাহের মধ্যে তাদের বক্তব্যের সারাংশ লিখে আদালতে জমা দিতে বলে। বুধবার লিখিত সেই বক্তব্যই আদালতে জমা পড়ে। তবে ডিভিশন বেঞ্চ এ দিন রায় দান স্থগিত রাখে। সুপ্রিম কোর্ট সূত্রে খবর, বিচারপতি পিনাকী ঘোষ গ্রীষ্মকালীন অবকাশের পর (অর্থাৎ জুন মাসে) অন্য হাইকোর্টে প্রধান বিচারপতি হিসেবে দায়িত্ব নিতে চলেছেন। আইনজীবীরা তাই মনে করছেন, শীঘ্রই এই মামলার রায় দান হয়ে যাবে।
ক্ষমতায় আসার এক মাসের মধ্যে ‘সিঙ্গুর জমি পুনর্বাসন ও উন্নয়ন আইন ২০১১’ করে নতুন রাজ্য সরকার সিঙ্গুরের জমি পুনর্দখল করে। এই আইনটিকে ‘অবৈধ’ ও ‘অসাংবিধানিক’ বলে দাবি করে হাইকোর্টে মামলা করে টাটারা। বিচারপতি সৌমিত্র পালের এজলাসে মামলা শুরু হয়। তিনি ব্যক্তিগত কারণ দেখিয়ে সরে গেলে বিচারপতি ইন্দ্রপ্রসন্ন মুখোপাধ্যায়ের এজলাসে মামলা ওঠে।
গত প্রায় এক বছর ধরে প্রথমে সিঙ্গল বেঞ্চ এবং পরে ডিভিশন বেঞ্চে শুনানি চলে। গত ২৮ সেপ্টেম্বর বিচারপতি ইন্দ্রপ্রসন্ন মুখোপাধ্যায় তাঁর রায়ে জানান, আইনটি বৈধ ও সাংবিধানিক। তবে টাটা মোটরস রাজ্যের কাছে ক্ষতিপূরণ পাবে। কী ভাবে ক্ষতিপূরণ, সেই পদ্ধতি হাইকোর্টই ঠিক করে দেবে। এই রায়কে চ্যালেঞ্জ করে টাটারা হাইকোর্টের ডিভিশন বেঞ্চে আবেদন করেন।
এই এক বছর ধরে বিভিন্ন এজলাসে শুনানি চলাকালীন টাটা মোটরস-এর আইনজীবী সমরাদিত্য পালের মূল বক্তব্য ছিল, ন্যানো কারখানা করার জন্য পশ্চিমবঙ্গ শিল্পোন্নয়ন নিগম সিঙ্গুরের জমি অধিগ্রহণ করে তাঁর মক্কেলকে লিজ দেয়। ওই জমিতে টাটারা কারখানা তৈরির কাজও শুরু করেন। কারখানায় উৎপাদন শুরু হওয়ার মুখে একটি রাজনৈতিক দল ব্যাপক আন্দোলন শুরু করলে কারাখানার কর্মীরা নিরাপত্তাহীনতায় ভুগতে থাকেন। পরিস্থিতির চাপে শেষ পর্যন্ত টাটা মোটরস গুজরাতে কারখানা সরিয়ে নিতে যেতে বাধ্য হয়।
রাজ্য সরকারের পক্ষে জবাব দিতে গিয়ে অ্যাডভোকেট জেনারেল অনিন্দ্য মিত্র, আইনজীবী কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়, সরকারি আইনজীবী অশোক বন্দ্যোপাধ্যায় ও শক্তিনাথ মুখোপাধ্যায় বারবার আদালতে জানান, জনস্বার্থে সিঙ্গুরের জমি অধিগ্রহণ করে টাটা মোটরস-কে কারখানা গড়তে দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু সেখানে কারখানা হয়নি। ফলে রাজ্যে বাড়তি কর্মসংস্থানের সুযোগও তৈরি হয়নি। তাই একটা নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত অপেক্ষা করার পর টাটাদের কাছ থেকে ওই জমি ফিরিয়ে নেওয়া হয়েছে। আইন এনে ফের ওই জমি অধিগ্রহণ করা হয়নি।
দুই পক্ষের সওয়াল শোনার পরে এখন ডিভিশন বেঞ্চ কী রায় দেয়, তারই অপেক্ষা। |