কলেজের পরিচালন সমিতির সরকার মনোনীত প্রতিনিধি তথা আরামবাগের এক তৃণমূল নেতার বিরুদ্ধে বিভিন্ন অভিযোগ জানিয়ে শিক্ষামন্ত্রী ও মুখ্যমন্ত্রীকে চিঠি দিলেন অধ্যক্ষ।
২১ এপ্রিল পাঠানো ওই চিঠিতে আরামবাগ গার্লস কলেজের অধ্যক্ষ সাজিদুল ইসলাম জানিান, সরকারি প্রতিনিধি তথা তৃণমূলের আরামবাগ ব্লক সভাপতি স্বপন নন্দী কলেজের নানা উন্নয়নমূলক কাজে ‘অসহযোগিতা’ করছেন। ফলে ইউজিসি তহবিলের ২১ লক্ষ টাকার ‘সদ্ব্যবহার’ করা যাচ্ছে না। ‘অনায্য দাবি-দাওয়া’ নিয়ে আন্দোলনে মদতও দিচ্ছেন স্বপনবাবু। অভিযুক্ত তৃণমূল নেতার দাবি, তিনি কলেজে নানা ‘দুর্নীতি’র প্রতিবাদ করছেন। সে কারণেই তাঁকে ‘অপদস্থ’ করার চেষ্টা চলছে। এর আগে এই কলেজের পরিচালন সমিতির সভাপতি ছিলেন সিপিএম নেতা অনিল বসু। কলেজের একটি অংশ বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে ভাড়া দেওয়ার ঘটনাকে কেন্দ্র করে তাঁর সঙ্গে বিবাদ বাধে অধ্যক্ষের। সে সময়ে তৃণমূল অধ্যক্ষের ‘পাশে’ দাঁড়িয়েছিল। কলেজের সাম্প্রতিক সমস্যা স্থানীয় তৃণমূল নেতৃত্বের অজানা নয়। তাঁদের একাংশের বক্তব্য, ‘সিপিএম-ঘনিষ্ঠ’ কিছু কলেজ-কর্মীকে সঙ্গে নিয়ে ‘সমস্যা’ তৈরি করতে চাইছেন স্বপনবাবু। ‘নজর রাখছে’ দল। এ নিয়ে অশান্তি বরদাস্ত করা হবে না। রাজ্যে রাজনৈতিক পালা বদলের পরে বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে সরকার মনোনীত প্রতিনিধিদের সরিয়ে নেয় বামেরা। মাস ছ’য়েক আগে আরামবাগ গার্লস কলেজের ওই পদে সিপিএম নেতা গোপাল কচের স্থলাভিষিক্ত হন স্বপনবাবু। কলেজ কর্তৃপক্ষ জানান, ইউজিসি-র নির্দেশিকা অনুযায়ী, যে সব দুঃস্থ পড়ুয়ার হাজিরা ৭০%, তাঁরা কলেজে যাতায়াত বাবদ বিশেষ অনুদান পাবেন। দেখা যায়, এই কলেজের সব ছাত্রীই ওই অনুদানের জন্য আবেদন করেছেন। যদিও এঁদের অনেকেরই হাজিরা ৭০%-র কম। ভাড়ার হিসেবেও গরমিল আছে কিছু ক্ষেত্রে। কারা অনুদানের টাকা পাবেন, তার একটি তালিকা প্রকাশ করেন কলেজ কর্তৃপক্ষ।
এর বিরুদ্ধে ১০ এপ্রিল বিক্ষোভ দেখায় তৃণমূল ছাত্র পরিষদ। কলেজ সূত্রের খবর, বিক্ষোভের নেতৃত্বে ছিলেন স্বপন নন্দী ও তাঁর অনুগামী ‘বহিরাগত’ কিছু যুবক। আবেদনকারী সমস্ত ছাত্রীকেই অনুদান দিতে হবে বলে দাবি তোলেন তাঁরা। অধ্যক্ষ-সহ কয়েক জন শিক্ষককে ‘নিগ্রহ’ করা হয় বলেও অভিযোগ। সে কথা মানতে চাননি স্বপনবাবু। তাঁর পাল্টা অভিযোগ, “শিক্ষকেরাই এখানে নিয়মিত আসেন না। কলেজ দুর্নীতিতে ডুবে গিয়েছে। ঘুঘুর বাসা ভাঙতে চাইছি। তাই ক্ষিপ্ত হয়ে কেউ কেউ মিথ্যা অভিযোগ করছে।” অধ্যক্ষ এবং তৃণমূল নেতার চাপান-উতোর সম্প্রতি গড়িয়েছে জেনারেটর কেনা নিয়েও। সংশ্লিষ্ট সংস্থার টাকা মেটানো হয়নি। অধ্যক্ষ ও পরিচালন সমিতির সরকার মনোনীত প্রতিনিধির যুগ্ম ভাবে সই করার কথা চেকে। স্বপনবাবু সই করতে রাজি হচ্ছেন না বলে অভিযোগ অধ্যক্ষের। স্বপনবাবুর বক্তব্য, “জেনারেটরের কর্মক্ষমতা পরীক্ষা করা হয়েছে কিনা, তা জানানো হয়নি। ওয়ারেন্টির কাগজ আছে কিনা, তা-ও জানি না।” |