প্রাপ্তে তু ষোড়শে বর্ষে, আর নহে। আঠারো। সাবালক হইবার, বিধি-সম্মত, বয়ঃক্রম আঠারো। অতঃপর জানা গিয়াছে, অষ্টাদশ বৎসরের নীচে কোনও কিশোর বা কিশোরী যদি যৌনসম্পর্ক স্থাপন করেন, তাহা ‘অপরাধ’ বলিয়া গণ্য হইতে পারে। কেন্দ্রীয় সরকার এই মর্মে রাজ্যসভায় একটি বিল আনিয়াছেন। বিল অনুযায়ী, এমনকী, পারস্পরিক সম্মতিতেও যদি অ-প্রাপ্তবয়স্কদের ভিতরে সেই যৌনসম্পর্ক হয়, তাহাও ‘অপরাধ’। অর্থাৎ, কৈশোরক যৌনতা আর চলিবে না। আইনের রক্তচক্ষু বলিতেছে, চলিবে না। বাস্তব কী বলিতেছে? চলিবে। যেমন, এখন চলিতেছে, তেমনই চলিবে। শুধু, ‘অপরাধ’-এর কালিমার ভয়ে, ধরা পড়িলে শাস্তির খাঁড়ার ভয়ে তাহা আরও গোপনে, আরও ধূসর, অস্বাস্থ্যকর পথে সরিয়া যাইবে। আইন নড়িবে না। সমস্ত বিষয়টি এক ধরনের বিকৃতির দিকে চলিয়া যাইতে পারে। এই পরিস্থিতিতে একটি মৌলিক প্রশ্নের প্রতি আরও এক বার ফিরিয়া তাকানো উচিত। আইন এবং সমাজের ভিতর পারস্পরিক সম্পর্কটি কী রকম হওয়া বাঞ্ছনীয়?
উত্তরটি দিবার জন্য স্থান এবং পাত্রের বিচার করিতে বসিলে কাল-কেও বাদ রাখিলে চলিবে না। একবিংশ শতকে গণমাধ্যম-এর বিস্ফোরণ ঘটিয়াছে বিশ্বময়। ভারতও ব্যতিক্রম নহে। সিনেমা এবং টেলিভিশন-এ তো বটেই, ‘ইন্টারনেট’-এও যৌনতার যে অভূতপূর্ব প্রসার দেখা গিয়াছে, তাহা কোনও ভাবেই সমাজেই বহির্বর্তী কোনও বায়ুভূত নিরালম্ব বস্তু নহে। বরং, বাস্তব। তাহার কত দূর ভাল, কত দূর মন্দ, সুফল কী, কুফলই বা কী কী, সেই হিসাব চলিতেই পারে। বাস্তব কাহারও অপছন্দ হইতেই পারে, কিন্তু সেই অপছন্দের দরুন তাহার বাস্তবতাকে অস্বীকার করিবার কোনও যুক্তি নাই। সর্বোপরি, গণমাধ্যম ক্রমশই আরও বেশি করিয়া ব্যক্তিসাপেক্ষ হইয়া পড়িতেছে। পরিভাষায় যাহাকে ‘টার্গেট কনজিউমার’ বলে, এই মুহূর্তে ‘ব্যক্তি’ই সেই অভিলক্ষ্য। তাহারই সন্তুষ্টি বিধানের জন্য সমূহ আয়োজন। ফলে, ‘আন্তর্জাল’ এখন দিব্য মোবাইল ফোনে পাওয়া যায়। টেলিভিশনও সেই পথে ঢুকিয়া পড়িতেছে। একদা বাড়ির গুরুজনদের সহিত বসিয়া টেলিভিশন-এ যৌনতার স্বাদ লওয়া কঠিন ছিল। এক্ষণে, প্রযুক্তির কল্যাণে, সেই বাধা দূরীভূত। আইন করিয়া তাহাকে রোধ করা অসম্ভব। বাড়ির ভিতরেও ‘আঠারো হয় নাই, তাই হাতে মোবাইল দিব না’, এমন হুকুমনামা জারি করিলে গৃহশান্তি ক্ষুণ্ণ হইবার শঙ্কা প্রবল। পরিণামে, যৌনতার সেই নিরন্তর প্রবাহকে শুধুমাত্র শাস্তির জুজু দেখাইয়া রোধ করা যাইবে, এমন একটি ভাবনা, আর যাহাই হউক, বাস্তবসম্মত নহে।
সুতরাং, এমন একটি বিচিত্র আইন শেষ পর্যন্ত কৈশোরক যৌনতা কত দূর আটকাইতে পারিবে, তাহা ভাবিয়া দেখা দরকার। যৌনশিক্ষা যখন পাঠক্রমের অঙ্গ হিসাবে বিবেচিত, যখন যথাযথ তথ্য সরবরাহের মাধ্যমে সম্পূর্ণ বিষয়টিকে যত দূর সম্ভব ‘স্বাভাবিক’ করিয়া তুলিবার আয়োজন চলিতেছে, তখন প্রস্তাবিত বিলটির যৌক্তিকতা লইয়াই প্রশ্ন ওঠা উচিত। উঠিতেছেও। ইতিমধ্যেই বিভিন্ন মহল হইতে প্রতিবাদ উঠিয়াছে। নিতান্ত জ্যাঠামহাশয়-সুলভ অভিমানে এই বিষয়ে কোনও অনড় অবস্থান গ্রহণ করা উচিত নহে। বরং, নমনীয়তা কাম্য। চিন্তার নমনীয়তা। কার্যের নমনীয়তা। বাস্তবকে গ্রহণ করিবার নমনীয়তা। |