নৌকাডুবি নিয়ে তদন্ত কমিটি গগৈয়ের
রাজ্যের ইতিহাসে বৃহত্তম নৌকাডুবির আটচল্লিশ ঘণ্টা পরেও মৃত ও নিখোঁজের সংখ্যা নিয়ে কোনও নির্দিষ্ট তথ্য দিতে পারল না প্রশাসন বা পুলিশ। সরকারি তথ্যেও বিস্তর গরমিল। স্থানীয় প্রশাসন সরকারিভাবে যে তথ্য জানিয়েছে, সেখানে বলা হয় ২১টি দেহ উদ্ধার ও ময়না তদন্ত করা হয়েছে। নিখোঁজ হওয়া সংক্রান্ত মাত্র ৪২টি অভিযোগ জমা পড়েছে। অন্তর্দেশীয় জলপথ পরিবহণ নিগমের তরফে জানানো হয়েছে, ২০৭ জন যাত্রী আগাম টিকিট কেটে নৌকায় উঠেছিলেন। তবে তার চেয়ে অনেক বেশি যাত্রী নৌকায় ছিলেন। শিশু ও মালবাহক ব্যবসায়ীদের কাছ থেকেও টিকিট নেওয়া হয়নি। নৌকাতেই টিকিট নিতেন তাঁরা।
এই সেই নৌকা। গোয়ালপাড়ার বুড়াবুড়ি গ্রামের কাছে। উজ্জ্বল দেবের তোলা ছবি।
জেলাশাসক কুমুদ কলিতা জানান, এখন অবধি যা খবর মিলেছে, তা থেকে মনে হয় নৌকায় প্রায় তিনশো যাত্রী ছিলেন। জীবন্ত উদ্ধার করা হয়েছে ৭০ থেকে ৮০ জনকে। নৌকার মালিক, লিজমালিককে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ডেকে পাঠানো হয়েছিল। জখম চালক ও কন্ডাকটরের জবাবও নথিবদ্ধ করা হয়েছে। এ দিকে, মৃতদেহ উদ্ধার নিয়ে এলাকায় বিভ্রান্তির সৃষ্টি হয়েছে। পুলিশ ও প্রশাসনের তরফে ২১টি দেহ উদ্ধারের কথা বলা হলেও স্থানীয় বাসিন্দাদের দাবি সোমবার রাতে অন্তত ৪০টি দেহ উদ্ধার হয়। পরিবারের লোকজন নিজেদের চেষ্টায় ওই সমস্ত দেহ উদ্ধার করে পুলিশ ও প্রশাসনকে না জানিয়ে বাড়িতে নিয়ে যান বলে অভিযোগ। বিভ্রান্তির সৃষ্টি হয়েছে নিখোঁজ যাত্রীদের সংখ্যা নিয়েও। ধুবুরির সার্কেল অফিসার মৃগাঙ্কনারায়ণ বরুয়া বলেন, “৩৪ জন নিখোঁজ যাত্রীর নাম পাওয়া গিয়েছে।” যদিও সাঁতরে পাড়ে উঠে আসা কয়েকজন যাত্রী প্রশাসনের ওই দাবি উড়িয়ে দিয়েছেন। তাঁরা জানান, ২৮০ জন টিকিট কেটে ওই লঞ্চে উঠেছিলেন। এ ছাড়াও ছিল টিকিট না কাটা অন্তত ৫০ জন যাত্রী। প্রশ্ন উঠেছে তলিয়ে যাওয়া বাকি যাত্রীরা কোথায় গেলেন তা নিয়ে। প্রশাসনের কর্তাদের একাংশের আশঙ্কা, কিছু দেহ বাংলাদেশে চলে যেতে পারে। কারণ, যে এলাকায় ওই লঞ্চডুবি হয়েছে সেখান থেকে কাছেই বাংলাদেশ সীমান্ত। মৃতদেহ বাংলাদেশে ভেসে গেলে উদ্ধারের জন্য সীমান্ত রক্ষী বাহিনীর মাধ্যমে বাংলাদেশ রাইফেলসের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়েছে।
নৌকার মালিক আলহাজ সইয়দ আলি ধুবুরির মণিরচরের বাসিন্দা। ১৯৯৬ সালে নৌকাটি অন্তর্দেশীয় জলপথ পরিবহণ নিগমে নথিভুক্ত হয়। তবে নৌকাটি তিনি নিজে চালাতেন না। জমাদারহাটের আবদুল জলিলকে লিজে নৌকাটি চালাতে দিয়েছিলেন তিনি। ১৯৯৬ সালের পর থেকে নৌকার ফিটনেস সার্টিফিকেট বা লাইসেন্স নবীকরণও হয়নি। নৌকাটির দৈর্ঘ্য ছিল ২৪ মিটার, প্রস্থ ৪ মিটার, গভীরতা ১.৩৮ মিটার। নথিভুক্ত পরিবহণ ক্ষমতা ছিল ৮ টন। তবে ১২ টন অবধি মানুষ ও পণ্য বহন করত নৌকাটি। ঘটনার সময় নৌকায় ৭ জন কর্মী ছিলেন। নৌকা চালাচ্ছিলেন গোলাপউদ্দিন। কন্ডাকটর ছিলেন শহিদুর রহমান। দুইজনই জখম হয়েছেন।
এনডিআরএফ জানাচ্ছে, ঘটনার পরে ৪৮ ঘণ্টা কেটে গিয়েছে, কারও বাঁচার আশা নেই। আইজি বিএসএফ পি কে বেহ্ল বলেন, “বাংলাদেশের দিকে সন্ধান চালাতে হবে। স্রোতের টানে ঘটনাস্থলের কয়েক কিলোমিটারের মধ্যে আর কোনও দেহ থাকার সম্ভাবনা কম।” ডিআইজি বিএসএফ মোহনলাল উদ্ধারকাজে নেতৃত্ব দিচ্ছেন। তিনি জানান, “মেদারটারি এলাকায় উদ্ধারকাজ ও দেহ সন্ধান বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। বিএসএফ জওয়ানরা সীমান্ত বরাবর নৌকায় তল্লাশি চালাচ্ছেন।” মেটারটারিতে দুটি হেলিকপ্টার, ১২জন সেনা ডুবুরিকে কাজে লাগানো হয়েছে। অসমর্থিত সূত্রে খবর, সীমান্তের ওপারে, বাংলাদেশে আরও ৪টি দেহ উদ্ধার হয়েছে।
মুখ্যমন্ত্রী তরুণ গগৈ জানান, অতিরিক্ত মুখ্য সচিব জিতেশ খোসলার নেতৃত্বে একটি তদন্ত কমিটি গড়া হয়েছে। কমিটি তিরিশ দিনের মধ্যে নৌকাডুবির তদন্ত রিপোর্ট জমা দেবে। নৌকাটির অবস্থা, বহনক্ষমতা, কতজন মানুষ উঠেছিলেন সেখানে, কর্তৃপক্ষের গাফিলতি রয়েছে কী না, নৌকাটির লাইসেন্স বৈধ ছিল কী না ইত্যাদি দিকগুলি যাচাই করে দেখবে কমিটি। সেইসঙ্গে জাতীয় দুর্যোগ মোকাবিলা বাহিনীর ক্ষমতা ও পরিকাঠামো যাচাই করে দেখা হবে। প্রাকৃতিক দুর্যোগের বিষয়ে আগাম সতর্কবাণী দেওয়ার ব্যবস্থা করা যায় কী না তাও খতিয়ে দেখা হবে। মুখ্যমন্ত্রী জানিয়েছেন, বাংলাদেশ সরকারের কাছে উদ্ধার কাজের জন্য সাহায্য চাওয়া হয়েছে।
মেদারটারি ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে অন্তর্দেশীয় জলপথ পরিবহণ নিগমের তরফে রাজ্যের সবক’টি ফেরিঘাটের কর্মীদের সতর্ক করা হয়েছে, বহনক্ষমতার অধিক যাত্রী যেন কোনও অবস্থায় ফেরিতে না ওঠে। রাজ্যের ব্যস্ততম ফেরিঘাট---নিমাতিঘাটে যাত্রীদের উপরে নজর রাখার জন্য হোমগার্ড নিয়োগ করা হচ্ছে। নিমাতি থেকে মাজুলির কমলাবাড়ি অবধি দিনে মাত্র ৪টি ফেরি চলে। মাজুলি যাওয়ার সড়কপথ না থাকায় সবক’টিতেই যাত্রীদের অতিরিক্ত চাপ থাকে। সরকারি নির্দেশের জেরে বহু মানুষ আজ পারাপার করতে পারেননি বলে অভিযোগ। অগপ ও এআইইউডিএফ তাদের বিধায়কদের এক মাসের বেতন দুর্ঘটনা ত্রাণে ব্যয় করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এআইইউডিএফ সভাপতি তথা স্থানীয় সাংসদ বদরুদ্দিন আজমল নিহতদের জন্য ৫ লক্ষ টাকা করে ক্ষতিপূরণ দাবি করেছেন। রাজ্য সরকারের তরফে এক লক্ষ ও প্রধানমন্ত্রীর তরফে দু’লক্ষ টাকা ক্ষতিপূরণ দেওয়ার কথা ঘোষণা করা হয়েছে।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.