উত্তরপ্রদেশে বিধানসভা ভোটের সামগ্রিক দায়িত্ব তুলে নিয়েছিলেন রাহুল গাঁধী। কিন্তু সেই ভোটে ভরাডুবির কারণ খুঁজতে গিয়ে রাহুলের কোনও দোষত্রুটিই খুঁজে পায়নি অ্যান্টনি কমিটি।
উত্তরপ্রদেশ-সহ চার রাজ্যের ভোট বিপর্যয়ের কারণ সন্ধানে প্রতিরক্ষামন্ত্রী এ কে অ্যান্টনির নেতৃত্বে সম্প্রতি এই কমিটি গড়ে দিয়েছিলেন সনিয়া গাঁধী। কমিটি এখনও চূড়ান্ত রিপোর্ট পেশ না করলেও তার খসড়া ফাঁস হতে শুরু করেছে। কিন্তু অ্যান্টনি কমিটি রাহুলকে কোনও বিষয়েই দায়ী করেনি। আর তা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। তবে কংগ্রেসের এক শীর্ষ নেতা আজ বলেন, অ্যান্টনি কমিটি দলের নেতা-কর্মীদের সঙ্গে কথা বলে রিপোর্ট তৈরি করেছে। স্বাভাবিক ভাবেই সনিয়া-রাহুলের বিরুদ্ধে অভিযোগ তোলার সাহস কোনও নেতারই হয়নি। রায়বরেলী লোকসভা কেন্দ্রে কংগ্রেস যে একটি আসনও পায়নি, তার জন্যও কেউ সনিয়াকে দায়ী করেননি। অ্যান্টনি কমিটির রিপোর্টে তাই সনিয়া-রাহুলকে দায়ী করার প্রশ্নও ওঠে না। কিন্তু এ-ও ঠিক যে, জাতপাতের সমীকরণ নির্ধারণ থেকে সংখ্যালঘু সংরক্ষণের সিদ্ধান্ত বা প্রার্থী বাছাই, সব কিছুরই নেপথ্যে ছিলেন রাহুল গাঁধী। ফলে বিপর্যয়ের দায় প্রকারান্তরে রাহুলের ওপরেও বর্তাচ্ছে।
মূল্যবৃদ্ধি পরিস্থিতি যে কংগ্রেসের হারের অন্যতম কারণ ছিল, সে বিষয়ে আগেই আশঙ্কা প্রকাশ করেছিলেন সনিয়া। সেই সঙ্গে সাংগঠনিক দুর্বলতাকেও তিনি পরাজয়ের কারণ হিসাবে তুলে ধরেছিলেন। কংগ্রেস সূত্রে বলা হচ্ছিল, কমিটির রিপোর্টের ভিত্তিতে বড় ধরনের রদবদল করবেন দলনেত্রী। বিপর্যয়ের জন্য যাঁরা ‘দায়ী’, ব্যবস্থা নেওয়া হবে তাঁদের বিরুদ্ধে। সেই ইঙ্গিত আজ দিয়েছেন রাহুল গাঁধীও। উত্তরপ্রদেশ সফরে গিয়ে তিনি বলেছেন, “দলের যাত্রাভঙ্গ যাঁদের কারণে, তাঁদের রেয়াত করা হবে না।”
কংগ্রেসের এক শীর্ষ নেতা আজ বলেন, হারের জন্য কিছু নেতা অবশ্যই দায়ী। এমনকী উত্তরপ্রদেশের দায়িত্বপ্রাপ্ত দিগ্বিজয় সিংহের বিরুদ্ধেও বিস্তর অভিযোগ। চূড়ান্ত রিপোর্ট পেশ করার আগে তাই আজ দিগ্বিজয়ের সঙ্গে বৈঠক করেন অ্যান্টনি। কিন্তু সাংগঠনিক দুর্বলতা কাটানোর পাশাপাশি ভাবমূর্তি উদ্ধারও যে বড় চ্যালেঞ্জ, তা-ও দেখিয়ে দিচ্ছে ওই রিপোর্ট।
তবে সমাধানের কোনও দাওয়াই দিচ্ছে না কমিটি। বরং তা শীর্ষ নেতৃত্ব তথা সনিয়ার বিবেচনার জন্যই ছেড়ে দিচ্ছে। কমিটির মতে উত্তরপ্রদেশে পরাজয়ের মুখ্য কারণ তিনটি। এক, মূল্যবৃদ্ধি পরিস্থিতির জন্য মানুষের ক্ষোভ। আন্তর্জাতিক স্তরে পেট্রোপণ্যের মূল্যবৃদ্ধি-সহ একাধিক কারণে যে এই অবস্থা তৈরি হয়েছে, তা মানুষকে বোঝাতে পারেনি কংগ্রেস। দুই, স্পেকট্রাম কেলেঙ্কারি থেকে কমনওয়েলথ দুর্নীতির মতো একের পর এক ঘটনা কংগ্রেস সম্পর্কে নেতিবাচক ধারণা তৈরি করেছে। অণ্ণা হজারে পর্ব সেই ধারণা তৈরি করতে আরও অক্সিজেন জুগিয়েছে। তিন, জাতপাত ভিত্তিক সমীকরণের ওপর অতিরিক্ত নির্ভরতা ও সংখ্যালঘু সংরক্ষণ নিয়ে বাড়াবাড়িও মানুষ ভালো ভাবে নেয়নি। ঐতিহাসিক ভাবে কংগ্রেস জাতপাত নির্ভর দল নয়। সেই অবস্থান থেকে বিচ্যুতিকেও পরাজয়ের কারণ বলে মনে করছে কমিটি। |