ঝাড়খণ্ডে রাজ্যসভা ভোটে শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত ‘টান টান উত্তেজনা’ জিইয়ে রাখলেন বাবুলাল মরান্ডি। বিজেপি, জেএমএম বা কংগ্রেস কারও অঙ্কই মেলাতে দিলেন না ঝাড়খণ্ড বিকাশ মোর্চার (জেভিএম) প্রধান। তাঁর দলের ১১ জন বিধায়কের ভোট কংগ্রেস প্রার্থীর সমর্থনে পড়বে, নাকি আগের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী তাঁরা শেষ পর্যন্ত ভোট দানে বিরতই থাকবেন, তা এখনও স্পষ্ট নয়। জেভিএম পরিষদীয় দলের নেতা প্রদীপ যাদব জানিয়েছেন, “এখনও আমরা নতুন সিদ্ধান্ত নিইনি। আগামিকাল ভোট গ্রহণ শুরুর আগে দলের বিধায়কদের নিয়ে বৈঠকে বসা হবে। তখনই ঠিক হবে দলের অবস্থান।”
আসলে জেভিএমের ভোট দেওয়া না-দেওয়ার উপরেই নির্ভর করছে কংগ্রেস, বিজেপি এবং জেএমএম এই তিন দলের তিন প্রার্থীর ভাগ্য। রাজ্যসভার আসন সংখ্যা দু’টি। জেভিএম ভোট দানে বিরত থাকলে কংগ্রেস প্রার্থী তথা প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি প্রদীপ বালমুচু জিতবেন না। উল্টো দিকে, মরান্ডির ১১ বিধায়ক কংগ্রেসকে সমর্থন করলে কে হারবে, বিজেপি না জেএমএম, তা এখনও স্পষ্ট নয়।
পাশাপাশি, রাজ্য-রাজনীতিতে এই ভোট আরও গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে বিজেপি-জেএমএম টানাপোড়েনে। কারণ, প্রথম থেকেই বিজেপি-কে প্রার্থী না-দেওয়ার অনুরোধ জানিয়ে আসছিল জেএমএম। কিন্তু বিজেপি সেই অনুরোধ না-রাখায় রাজ্যের শাসক জোটের দুই শরিকের সম্পর্কে তিক্ততা তৈরি হয়েছে। আজও জোটধর্ম পালনের জন্য বিজেপি-র প্রতি আবেদন জানিয়েছেন জেএমএম নেত্ৃত্ব। পাশাপাশি, দলের প্রধান শিবু সোরেনকে ‘অমর্যাদা’ করার অভিযোগও আজ তোলা হয়েছে বিজেপি-র বিরুদ্ধে। এখন জেভিএম বিধায়কেরা যদি কংগ্রেস প্রার্থীকে ভোট দেন, তা হলে সরকারের ‘সুস্থিতি’ নিয়েই প্রশ্ন উঠে যাবে। অর্থাৎ এই ভোটের সঙ্গে জড়িয়ে গিয়েছে মুখ্যমন্ত্রী অর্জুন মুন্ডার ভাগ্যও। রাজ্যসভার নির্বাচনকে ঘিরে জোট সরকারের ‘সুস্থিতি’ নড়বড়ে হলে তার দায়ও বিজেপি-র ঘাড়ে আগাম চাপিয়ে দিয়েছে জেএমএম-এর একাংশ।
যদিও অর্জুন মুন্ডা প্রকাশ্যে সমস্যা সমাধানের ব্যাপারে আশাবাদী। তাঁর কথায়, “রাজনীতিতে সম্ভাবনার কোনও শেষ নেই। সম্ভাবনা নিয়ে আলোচনা করতে করতেই তো সঠিক পথের দিশা মেলে।” রাজ্যসভার ভোট প্রসঙ্গে মুন্ডা বলেন, “সমস্যা তো কিছু হয়েছেই। আশা করছি রাজ্য সরকারের জোট-সঙ্গীদের সঙ্গে শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত আলোচনা চালিয়ে সমাধানের পথ বেরিয়ে আসবে।”
বস্তুত, জেভিএম শেষ পর্যন্ত কী করে তা না-দেখে ভোট ভাগাভাগির অঙ্কটাই মেলাতে পারছে না বিজেপি। ঠিক এই কারণেই আজ সকাল থেকে দফায় দফায় বৈঠক করেও চূড়ান্ত সিদ্ধান্তটি ঝুলিয়ে রেখেছেন বিজেপি নেতৃত্ব। দলের রাজ্য সভাপতি দীনেশানন্দ গোস্বামী আজ সন্ধ্যায় বলেন, “সরকারের জোট-সঙ্গী এবং নির্দল বিধায়কদের সঙ্গে আলোচনা চলছে। প্রয়োজন হলে ভোটগ্রহণ পর্যন্ত আলোচনা জারি রাখা হবে।” তবে সরকারের জোট-সঙ্গী এবং জনা দুয়েক নির্দল সদস্যের সমর্থন পাওয়ার প্রতিযোগিতায় বিজেপি-র তুলনায় এই মুহূর্তে সামান্য এগিয়ে জেএমএম। বিশেষত, সরকারের জোট-সঙ্গী আজসুর পাঁচ বিধায়কের সমর্থন পেতে শেষ লগ্নে জেএমএম ‘জাতীয় দলের (পড়ুন বিজেপি) দাদাগিরি রুখতে আঞ্চলিক দলের জোট’ গড়ার ডাক দিয়েছে। |