পুলিশ কমিশনের সুপারিশ ছিলই। সেই মতো নীতীশ সরকার কিছুদিন আগেই সিদ্ধান্ত নেয় পুলিশের কাজকে দু’টি ভাগে ভাগ করার। একটি অংশ আইন-শৃঙ্খলা রক্ষার দায়িত্বে থাকবে, অন্যটি সামলাবে তদন্তের কাজ। প্রশাসনিক ঢিলেমিতে ওই সিদ্ধান্ত এতদিন কার্যকর হয়ে ওঠেনি। কিন্তু হালে বিহারে অপরাধমূলক ঘটনা বাড়তে থাকায় নানা মহল থেকেই প্রশ্ন ওঠে নীতীশের ‘সুশাসন’ নিয়ে। তাই আর দেরি না করে ওই সিদ্ধান্ত কার্যকর করলেন মুখ্যমন্ত্রী নীতীশ কুমার। গত কাল পুলিশের কাজ দু’ ভাগ করার ব্যবস্থার আনুষ্ঠানিক সূচনা করেন তিনি। পটনার ২৩টি থানা এলাকায় আজ থেকেই দু’ ভাগে কাজ করার ব্যবস্থা চালু হয়েছে।
বিগত বিধানসভা অধিবেশনেই বিহারের স্বরাষ্ট্র দফতর পরিসংখ্যান দিয়ে জানিয়েছিল, রাজ্যে অপরাধের সংখ্যা বাড়ছে। এমনকী জামিন-অযোগ্য অপরাধের সংখ্যা চোখে পড়ার মতো। উল্লেখ্য, স্বরাষ্টর দফতরের দায়িত্ব মুখ্যমন্ত্রী নীতীশের হাতেই। বিহারের নানা স্থানে পরের পর অপরাধের ঘটনায় বিরোধীরাও বলতে শুরু করে, আইন-শৃঙ্খলা বেহাল বলেই রাজ্যে বিনিয়োগ আসছে না। এই অবস্থায় ভাবমুর্তি উদ্ধারে পুলিশের কাজকে দু’ ভাগ করার সিদ্ধান্ত কার্যকর করে নীতীশ কুমার বলেন, “আশা করছি এতে কাজ করতে পুলিশের সুবিধা হবে। পাশাপাশি পুলিশের প্রতি মানুষের আস্থাও বাড়বে।”
ডিজিপি অভয়ানন্দ বলেন, “প্রথমে পটনায় এই কাজ শুরু হল। পটনার অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়ে ধীরে ধীরে রাজ্যের অন্য জেলাগুলিতেও দু’ ভাগে কাজ করবে থানাগুলি। এ বার থেকে বিজ্ঞানসম্মত পদ্ধতিতে অপরাধের তদন্ত করা যাবে।” মুখ্যমন্ত্রী আগেই জানিয়ে দিয়েছিলেন এই কাজের জন্য অতিরিক্ত পুলিশের প্রয়োজন হতে পারে। সে ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় পুলিশ নিয়োগ করা হবে। প্রতিটি থানাকে দেওয়া হবে উন্নত মানের যন্ত্রপাতি, যা তদন্তের কাজে আসবে।
কিছুদিন আগে বিষয়টি নিয়ে অভয়ানন্দের নেতৃত্বে এক বৈঠকে স্থির হয়, প্রতিটি থানার ওসি-র নেতৃত্বে পুলিশের এই দু’টি বিভাগ কাজ করবে। আইন-শৃঙ্খলা যারা দেখবেন তাঁদের প্রথম কাজ হবে ঘটনার পরেই যতটা দ্রুত সম্ভব ঘটনাস্থলে পৌঁছনো। ঘটনাস্থল চিহ্নিত করে দ্রুত সংগ্রহ করতে হবে তথ্য ও প্রমাণ। দেখতে হবে যাতে প্রমাণ কোনও ভাবে লোপাট বা বিনষ্ট না হয়।
ঘটনাস্থলে ভিডিও ক্যামেরার মাধ্যমে ছবিও সংগ্রহ করে রাখতে হবে। আঙুলের ছাপের প্রয়োজন হলে তা-ও সংগ্রহ করতে হবে। এর জন্য যাবতীয় সামগ্রী পুলিশের কাছে থাকবে। ঠিক হয়েছে, আইন-শৃঙ্খলা দেখার দায়িত্বে যাঁরা থাকবেন, তাঁদের কাজ শেষ হলে তদন্তকারী দলের কাজ শুরু হবে। তাঁদের কাছেও তদন্তের জন্য যা প্রয়োজন তেমন যাবতীয় সামগ্রী রাখা থাকবে। বিহারে ইতিমধ্যে খুন, ডাকাতির পাশাপাশি বেড়ে গিয়েছে সাইবার-অপরাধও। বৃদ্ধি পাচ্ছে মেয়ে পাচার ও জাল নোটের ব্যবসাও। অপরাধীদের এমন বাড়বাড়ন্তে পুলিশও উদ্বিগ্ন। |