মহেশতলা
পিসি-ভাইঝির নলিকাটা দেহ উদ্ধার
বাড়ির সদর দরজা ভেজানো। তার তলা দিয়ে গড়িয়ে আসছে রক্তের ধারা। মঙ্গলবার বিকেলে মহেশতলা থানার হায়াতপুরের একটি বাড়িতে ওই দৃশ্য দেখে চাঞ্চল্য ছড়িয়ে পড়ে এলাকায়। পুলিশ ঘরে ঢুকে দেখে, ভিতর পড়ে আছে পিসি ও ভাইঝির গলার নলি কাটা দেহ। পাশে পড়ে একটি রক্তমাখা ছুরি।
পুলিশ জানায়, স্থানীয়দের কাছে খবর পেয়ে অন্তরা নাহা (২৩) ও শিবানী দে (৬০) নামে ওই দুই মহিলার দেহ উদ্ধার করা হয়। ঘরের মধ্যে রক্তমাখা ছুরি ও তার খাপ ছাড়াও পাওয়া গিয়েছে, শিয়ালদহ-নুঙ্গির একটি ট্রেনের টিকিট ও একটি চিনা রেস্তোরাঁর খাবারের বিল। নুঙ্গিতে অন্তরার বিবাহিতা দিদি, তনিমা কর্মকার থাকেন বলে জানিয়েছে পুলিশ।
পুলিশ সূত্রের খবর, ওই বাড়িটিতে অন্তরা, তাঁর মা সন্ধ্যা নাহা এবং অন্তরার পিসি শিবানীদেবী থাকতেন। বছর দেড়েক আগে বেঙ্গালুরুতে নার্সিং পড়তে চলে যান অন্তরা। মাস খানেক আগে বাড়িতে ফিরেছিলেন তিনি।
সন্ধ্যাদেবীকে জিজ্ঞাসাবাদ করে পুলিশ জেনেছে, মঙ্গলবার দুপুর দু’টো নাগাদ তিনি বাড়ি থেকে বেরোন। সাড়ে পাঁচটা নাগাদ প্রতিবেশীদের কাছ থেকে ফোনে ঘটনাটি জানতে পারেন। হায়াতপুরেই অন্তরার মামাবাড়ি। খবর পেয়ে চলে আসেন তাঁরাও।
পুলিশ জানায়, সরু গলির ভিতরে অন্তরাদের একতলা বাড়ি। সদর দরজা দিয়ে ঢুকে দু’দিকেই একটি করে ঘর। মাঝে সরু এক ফালি জায়গা। বাঁ দিকের ঘরের বিছানায় অন্তরার দেহ পড়েছিল। শিবানীদেবীর দেহ মিলেছে ওই ঘরের সামনে সরু জায়গাটিতে। ছুরিটি মিলেছে ওই ঘর থেকেই। কাছেই পড়েছিল ট্রেনের টিকিট এবং ছুরির খাপ। বেসিনের কলটি খোলা ছিল। কলের গায়ে রক্তের দাগ মিলেছে। তদন্তকারীরা জানিয়েছেন, দু’জনকেই গলার নলি কেটে খুন করা হয়েছে।
প্রাথমিক তদন্তে পুলিশ জানিয়েছে, দুই মহিলার শরীরে আর কোনও ক্ষতচিহ্ন মেলেনি। ঘর থেকেও কিছু উধাও হয়নি। আততায়ীরা যে খুনের উদ্দেশ্যেই আসে, সে ব্যাপারে নিশ্চিত পুলিশ। স্থানীয়েরা পুলিশকে জানান, ওই দিন দুপুরে দু’টি ছেলেকে ওই গলি থেকে বেরোতে দেখেন তাঁরা। তাঁদের বয়ান অনুযায়ী, ওই যুবকদের ছবি আঁকাচ্ছে পুলিশ। তবে আততায়ীরা কী ভাবে বাড়ির ভিতরে ঢুকল ও কেনই বা অন্তরা ও শিবানীদেবী চিৎকার করলেন না, তা ভাবাচ্ছে পুলিশকে। তদন্তকারীদের সন্দেহ, আততায়ীরা ওই মহিলাদের পরিচিত ছিল। তাই সহজে তারা বাড়িতে ঢুকতে পেরেছিল। আক্রমণের সময়েও চিৎকার করার সুযোগ পাননি ওই দুই মহিলা। দক্ষিণ ২৪ পরগনার জেলা পুলিশ সুপার প্রবীণ ত্রিপাঠী বলেন, “ঘটনাস্থল থেকে বেশ কিছু সূত্র মিলেছে। সেগুলি খতিয়ে দেখা হচ্ছে।”
পুলিশ জেনেছে, বেঙ্গালুরু যাওয়ার আগে অন্তরা কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে প্যারামেডিক্যাল কোর্স পড়তেন। সেখানে সন্তোষ নামের এক যুবকের সঙ্গে তাঁর পরিচয় হয়েছিল। পরে অবশ্য তাঁদের মধ্যে বন্ধুত্ব ছিল না। সন্ধ্যাদেবী পুলিশকে জানিয়েছেন, ওই যুবক প্রায়ই ফোন করলেও অন্তরা তাঁকে এড়িয়ে চলতেন। পুলিশ খোঁজ নিয়ে জেনেছে, আদতে উত্তরপ্রদেশের বাসিন্দা সন্তোষ এখন উত্তর কলকাতায় থাকেন। এক তদন্তকারী অফিসার জানান, অন্তরার মোবাইলের কললিস্ট পরীক্ষা করা হচ্ছে। ওই যুবক এই ঘটনার সঙ্গে জড়িত থাকতে পারেন বলেও সন্দেহ পুলিশের।
দেহগুলি দেখে পুলিশের অনুমান, খুনিরা প্রথমে অন্তরার ঘরে ঢুকেছিল। সেখানে তাঁর সঙ্গে ধস্তাধস্তি হয়। বিছানা থেকে তার কিছু প্রমাণ মিলেছে। পরে অন্য ঘর থেকে শিবানীদেবীকে নিয়ে এসে খুন করা হয়েছে। কিন্তু আততায়ীরা খুন করার অস্ত্র ফেলে গেল কেন? এক অফিসার বলেন, “সম্ভবত খুনিরা পেশাদার নয়। তাই অস্ত্র ফেলে গিয়েছে।” তবে তদন্তের অভিমুখ অন্য দিকে ঘোরানোর জন্য এমন পরিকল্পনা কি না, খতিয়ে দেখছেন গোয়েন্দারা।
 
 
 


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.