বাম-মোড়কে তৃণমূল নেত্রী তথা মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় দলের সাংগঠনিক ‘চরিত্র’ বদলের চেষ্টা করছেন বটে। কিন্তু দলের মধ্যে অ-বাম ‘ঝোঁক’ ঢাকা পড়ছে না। পয়লা মে, শ্রমিক-দিবসে তা আবার স্পষ্ট হয়ে গেল। একই দিনে ‘সমান্তরাল’ শ্রমিক সমাবেশে নেমে পড়লেন দলের দুই নেতানেত্রী শোভনদেব চট্টোপাধ্যায় ও দোলা সেন।
মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশে কাল, শুক্রবার বিকেলে তৃণমূলের শ্রমিক সংগঠন (আইএনটিটিইউসি) মধ্য কলকাতায় মিছিল করবে। মিছিল-শেষে মেট্রো চ্যানেলের সমাবেশে মে-দিবসের তাৎপর্য বোঝাবেন শ্রমিক নেতা সুব্রত মুখোপাধ্যায়, শ্রমমন্ত্রী পূর্ণেন্দু বসুরা। কিন্তু সেই মিছিল-সভা ‘বয়কট’ করে একই দিন, একই সময়ে কলকাতা পুরসভার সামনে নিজের সংগঠনের কর্মীদের নিয়ে সমাবেশ করবেন আইএনটিটিইউসি-র প্রাক্তন সভাপতি তথা বিধানসভার সরকার পক্ষের মুখ্য সচেতক শোভনদেব চট্টোপাধ্যায়। সেই সমাবেশে মুখ্যমন্ত্রী, শ্রমমন্ত্রী পূর্ণেন্দু বসু বা দোলাকে আমন্ত্রণ করেননি তিনি।
পুরসভার সামনে আইএনটিটিইউসি-র ওই বার্ষিক সমাবেশে বিরোধী নেত্রী থাকাকালীন বেশ কয়েকবার প্রধান বক্তা ছিলেন মমতাই। কিন্তু এ বার তাঁকে বলা হয়নি। এমনকী, ওই সমাবেশের জন্য তাঁর অনমতিও নেননি শোভনদেব। তাঁর অবশ্য যুক্তি, “ওটা পুরসভার ইউনিয়নের নিজস্ব অনুষ্ঠান। মুখ্যমন্ত্রীর অনুমতি লাগবে কেন? মুখ্যমন্ত্রী ব্যস্ত। ওঁকে তাই আসার কথা বলে বিরক্ত করতে চাইনি।”
ঘটনাপ্রবাহে ‘বিড়ম্বিত’ দলের একাংশের অভিমত, দলনেত্রী শ্রমিক সংগঠনকে ‘ঐক্যবদ্ধ’ করতে চাইলেও এর ফলে দলের অ-বামসুলভ চেহারাটা সেই প্রকাশ্যে চলে আসছে।
দলের এক নেতার কথায়, “হাঁড়ি যখন আলাদা হয়ে গিয়েছে, তখন সেটা প্রকাশ্যে আসবেই! বামপন্থীদের ধাঁচে মে-দিবস পালন করা যায়। কিন্তু অ-বাম গুণ তো ফুটে বেরোবেই!”
আইএনটিটিইউসি-র পদ থেকে তাঁকে সরানোর পর থেকেই শোভনদেববাবুর সঙ্গে শ্রমমন্ত্রী পূর্ণেন্দুবাবু এবং আইএনটিটিউসি-র রাজ্য সভানেত্রী দোলা সেনের ‘দূরত্ব’ বেড়েছে। সংগঠনে ‘সমান্তরাল’ গোষ্ঠী তৈরি হচ্ছে স্বীকার করেই শোভনদেববাবু বলেছেন, “দোলা সভানেত্রী হওয়ার পর থেকেই সংগঠনের কোনও বৈঠকে আমাকে ডাকেন না। সংগঠনের কোর কমিটির সদস্য হওয়া সত্ত্বেও আমার সঙ্গে আলোচনা করেন না। শ্রমমন্ত্রীও কোনও আলোচনা করেন না। আমিই বা আমার সংগঠনের অনুষ্ঠানে ওঁদের ডাকব কেন?” তাঁর আরও অভিযোগ, “মে-দিবসে মেট্রো চ্যানেলে যাওয়ার জন্যও আমায় কেউ বলেনি!” মে-দিবসে শোভনদেববাবু কখনও বিডন স্ট্রিট, কখনও নিজের কেন্দ্র রাসবিহারীর বিভিন্ন এলাকায় শ্রমিক সমাবেশ নিয়ে ব্যস্ত থেকেছেন। দু’দিনের মাথায় ফের তাঁর পৃথক কর্মসূচিতে দলের অন্দরে ‘অস্বস্তি’ তৈরি হয়েছে। মাসখানেক আগে রাজ্য সরকারি কর্মীদের একটি কনভেনশনে একই ঘটনা ঘটেছিল। আয়োজকরা দোলা বা তাঁর ‘ঘনিষ্ঠ’ কোনও নেতা-মন্ত্রীকে ডাকেননি। আমন্ত্রণ পেয়েও যাননি মন্ত্রী অরূপ রায়। যান শোভনদেববাবু।
শোভনদেববাবুর নেতৃত্বে পুরসভার সামনে সমাবেশের বিষয়ে তাঁর জানা নেই বলেই শ্রমমন্ত্রী পূর্ণেন্দুবাবু জানিয়েছেন। তাঁর বক্তব্য, “ওই অনুষ্ঠানের কথা জানিই না। তবে ওই দিন মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশে ওয়েলিংটন থেকে ধর্মতলা পর্যন্ত মিছিলে আমি থাকব।” শ্রম-বিষয়ক ব্যাপারে তাঁর সঙ্গে মন্ত্রী আলোচনা করেন না শোভনদেববাবুর ওই অভিযোগের প্রেক্ষিতে পূর্ণেন্দুবাবুর বক্তব্য, “ট্রেড ইউনিয়নের বিষয়গুলি আমি অবশ্য এখন দেখি না। তাই এ বিষয়ে কিছু জানি না।” আর দোলার যুক্তি, “অনেক আগে থেকেই শোভন’দার সমাবেশের দিন ঠিক হয়েছে। মুখ্যমন্ত্রী গত রবিবার আমাদের বলেন মে-দিবসের জন্য টানা সভা-সমাবেশ করতে। শুক্রবার বিকেলের মিছিলও দিদিরই ঠিক করা। ফলে মিছিলে আমায় থাকতেই হবে। শোভন’দার সম্মেলনে যাওয়া সম্ভব নয়।” |