সল্টলেকে ফের চুরি
অপরাধ নিয়ন্ত্রণে দিশাই পাচ্ছে না পুলিশ
বিধাননগরে অপরাধ নিয়ন্ত্রণ দূর অস্ত্, কার্যত দিশাই পাচ্ছে না পুলিশ।
গত সোমবার শেষ রাতে বিধাননগরে এডি ব্লকের ১২৫ নম্বর বাড়িতে ডাকাতির ঘটনায় দুষ্কৃতীরা ধরা পড়েনি এখনও। এমনকী, সে ভাবে পাকাপোক্ত কোনও সূত্রও উঠে আসেনি বলে পুলিশ সূত্রে খবর। উল্টে ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে বিএফ এবং বিএইচ ব্লকে আরও দু’টি ‘চুরি’র ঘটনা ফের দেখিয়ে দিল, অপরাধ নিয়ন্ত্রণের ছবিটা পাল্টায়নি এতটুকুও। যদিও একটি চুরির ক্ষেত্রে এখনও কোনও অভিযোগ দায়ের হয়নি বলে পুলিশের দাবি। আগের একটি ডাকাতির ঘটনার পরে বিধাননগরের এএইচ ব্লকের বাসিন্দা অপর্ণা বসু বাড়ি বিক্রি করে দিয়ে শহর ছেড়ে অন্যত্র চলে গিয়েছেন। সোমবারের ঘটনার পরে এ বার আতঙ্ক কাটাতে না-পেরে এডি ব্লকের সুরিন্দর সিংহ ডাবলাও সল্টলেক ছেড়ে অন্যত্র চলে যেতে চাইছেন। নিজের কর্মস্থলে বদলির মৌখিক আবেদন করছেন বলে জানান তিনি।
থানায় না বসে টহলদারি বাড়াতে পুলিশকর্মীদের নির্দেশ দিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সোমবারের ডাকাতির ঘটনার পরে বিধাননগরের পুলিশ কমিশনার রাজীব কুমার জানিয়েছিলেন, নজরদারি বেড়েছে, তিনি সরেজমিন গিয়ে তা পরীক্ষাও করেন। কিন্তু পরিকাঠামোগত কিছু প্রতিবন্ধকতায় ঘটনার আগাম খবর কিংবা ঘটনার পরবর্তী পুলিশি পদক্ষেপ করতে সমস্যা হচ্ছে। দ্রুত তার ব্যবস্থা হবে।
কিন্তু বাসিন্দাদের অভিযোগ, পুলিশ কোথায় থাকে? বিধাননগরে কমিশনারেট গড়া হলেও অপরাধ নিয়ন্ত্রণে আসেনি। আগের মতোই এখনও অপরাধ আটকাতে পারছে না পুলিশ। তা হলে আলাদা করে কমিশনারেট গঠন করে লাভ কী হল? এমনকী মহিলাদের নিরাপত্তা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন তাঁরা। বুধবার বাসিন্দাদের এক সংগঠন ‘বিধাননগর (সল্টলেক) ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশন’-এর সম্পাদক কুমারশঙ্কর সাধু বলেন, “কমিশনারেট হওয়ায় অতিরিক্ত কিছু সুবিধা মেলার কথা। কিন্তু কোনও লাভই হল না। ব্লক কমিটিগুলির সঙ্গে প্রশাসন যোগাযোগ করছে না। বিধাননগর এখন দুষ্কৃতীদের মুক্তাঞ্চল।”
৩০ এপ্রিল শেষ রাতে এডি ব্লকের ১২৫ নম্বর বাড়িতে দরজা ভেঙে ছ’জনের ডাকাতদল নগদ টাকা ও গয়না নিয়ে চম্পট দেয়। সেই দলে এক তরুণীও ছিলেন। ঘটনায় আহত হন গৃহকর্তা সুরিন্দর সিংহ ডাবলা এবং তাঁর স্ত্রী সুধা ডাবলা। ঘটনার পরে তাঁদের বাড়ির সামনে পুলিশি প্রহরা বাড়ানো হয়েছে।
এর ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই বিধাননগর (উত্তর) থানার সিএফ ব্লকে ৭৪ নম্বর বাড়িতে চুরি হয়। সেখানে কয়েক জন তথ্যপ্রযুক্তি কর্মী ভাড়া থাকেন। তাঁদের ল্যাপটপ-সহ কিছু জিনিস চুরি যায়। এই ঘটনায় ওই বাড়ির পরিচারিকাকে জেরা করেছে পুলিশ। তার ২৪ ঘণ্টার মধ্যে বিধাননগর (পূর্ব) থানার বিএইচ ব্লকে ১৩৬ নম্বর বাড়িতে দু’টি দরজার তালা ভেঙে একটি ডিভিডি প্লেয়ার চুরি করে পালায় দুষ্কৃতীরা। ওই বাড়ির একতলার পিছনের অংশে ভাড়া থাকেন একটি ইংরেজি মাধ্যম স্কুলের মালিক। তিনি এখন পঞ্জাবে আছেন বলে পুলিশ জেনেছে। সে কারণে লিখিত অভিযোগ দায়ের করা যায়নি। তাঁর আত্মীয়, এএইচ ব্লকের বাসিন্দা বি নাম্বিয়ার জানান, পুলিশকে চুরির বিষয়টি জানানো হয়েছে।
প্রশ্ন উঠেছে, অপরাধ আটকাতে আগাম ব্যবস্থা কেন নিচ্ছে না পুলিশ? কেনই বা পুলিশের দেখা মিলছে না? অভিযোগের জবাবে পুলিশ কমিশনারের দাবি, নজরদারি চালানো হয়। অপরাধ আটকাতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থাও নেওয়া হয়। তিনি নিজেও রাস্তায় ঘুরে নজরদারির কাজ করেন। এর বেশি আর কোনও মন্তব্য করেনি পুলিশ কমিশনার। এ দিকে, বিধাননগর পুলিশ কমিশনারেটের ডিসি (সদর) সুব্রত বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “ডাকাতির ঘটনায় তল্লাশি চলছে। তবে এখনও বিশেষ কোনও অগ্রগতি হয়নি।” এর পাশাপাশি পুলিশের পরিকাঠামোগত দুর্বলতার কথাও স্বীকার করেছেন তিনি। আগে সরকারের পরিকল্পনা ছিল, সল্টলেকের পুলিশি ব্যবস্থাকে জিপিএস-এর আওতায় আনা হবে। যাতে কোনও ঘটনার ক্ষেত্রে পুলিশ দ্রুত পৌঁছতে পারে। কিন্তু ডিসি (সদর) বুধবার জানিয়েছেন, কমিশনারেট এলাকায় ঘোরা ১৬টি টহলদার গাড়ির মধ্যে মাত্র চারটিতে ওই ব্যবস্থা করা গিয়েছে।
এ দিন এডি ব্লকের ওই বাড়িতে গিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ চালায় সিআইডি-র একটি দলও। পুলিশ সূত্রে খবর, বিধাননগরে দুষ্কৃতী-দলে থাকা ওই ‘তরুণী ডাকাত’ সম্পর্কে এখনও বিশেষ কোনও সূত্র মেলেনি, তবে ঝাড়খণ্ডে একই রকম একটি ঘটনা ঘটেছিল। ফলে সে দিকেও নজর রাখছে পুলিশ। অন্য দিকে, আজ, বৃহস্পতিবার আইনশৃঙ্খলা নিয়ে বৈঠকে বসবে বিধাননগর পুর-প্রশাসন ও পুলিশ প্রশাসন। পুরসভা সূত্রে খবর, গ্রিন পুলিশ নিয়ে ওঠা অভিযোগের বিষয়ে আলোচনা হতে পারে বৈঠকে।
 
 
 


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.