প্রভাতের রবি দুপুরে, বিতর্কে রাজ্য সরকার
বি লিখেছিলেন, ‘আপন হতে বাহির হয়ে বাইরে দাঁড়া।’ তাঁরই জন্মদিনে প্রথার বাইরে যেতে গিয়ে বিতর্কে জড়াল রাজ্য সরকার! আক্ষরিক অর্থে চার দেওয়ালের ঘেরাটোপের বাইরে দাঁড়াতেও চেয়েছে রাজ্য সরকার। গোলযোগ তাতেও!
রবীন্দ্র জয়ন্তীতে বরাবরের প্রভাতী অনুষ্ঠান এ বার পিছিয়ে দুপুর ২টো থেকে শুরু করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে রাজ্য সরকার। সিদ্ধান্ত স্বয়ং মুখ্যমন্ত্রী তথা তথ্য ও সংস্কৃতিমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের। পোড়া বৈশাখী দিনে সকালের রেওয়াজ ভেঙে ভর দুপুরে রবীন্দ্র-স্মরণকে নিয়ে গিয়ে ফেলায় গোল বেধেছে! বিভিন্ন মহল থেকে আপত্তি উঠছে। এতটাই যে, বিরোধী দলনেতা সূর্যকান্ত মিশ্র মুখ্যমন্ত্রীকে চিঠি দিয়ে অনুরোধ করেছেন, সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনা করা হোক। মুখ্যমন্ত্রীর কাছে তাঁর প্রশ্ন, এই ‘পরিবর্তন’ কি খুব জরুরি? মুখ্যমন্ত্রী অবশ্য মনে করেন, জরুরি। পরম্পরায় এই ‘পরিবর্তনে’র প্রস্তাব এসেছে তাঁর তরফেই। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর এবং স্বামী বিবেকানন্দের সার্ধ-শতবর্ষ উদযাপনে সংস্কৃতি ও সংশ্লিষ্ট জগতের ব্যক্তিত্বদের নিয়ে কমিটি গড়ে দিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা। সম্প্রতি সংশ্লিষ্ট কমিটির বৈঠকে মুখ্যমন্ত্রীর গোচরে আসে, ২৫শে বৈশাখ জোড়াসাঁকো ঠাকুরবাড়ি এবং রবীন্দ্র সদনে সকাল ৬টা থেকে রবীন্দ্র-স্মরণের প্রভাতী অনুষ্ঠান শুরু হয়। মুখ্যমন্ত্রী প্রস্তাব দেন, রবীন্দ্র সদনের ঘেরা প্রেক্ষাগৃহ থেকে ওই অনুষ্ঠানকে বাইরে আনা হোক। তাতে অনেকের অংশগ্রহণের সুযোগ থাকবে। অনুষ্ঠান সাত সকালে না-করে দুপুর থেকে রাত পর্যন্ত চলুক। মুখ্যমন্ত্রী নিজেও তাতে যোগ দেবেন। তাঁদের অনেক রাত পর্যন্ত কাজ করতে হয়। রবীন্দ্র-স্মরণ না হয় একটু বেলাতেই হল!
ঠিক এখানেই মুখ্যমন্ত্রীকে চেপে ধরতে চেয়েছেন বিরোধী দলনেতা। চিঠিতে লিখেছেন, বেলা গড়িয়ে গেলে বৈশাখের প্রখর তাপে অংশগ্রহণকারী ছাত্র-ছাত্রীদের কষ্ট বাড়বে। বিকেলের দিকে ঝড়-বৃষ্টির আশঙ্কাও অমূলক নয়। আর মুখে বলেছেন, “কিছু কিছু লোকের সকালে ঘুম থেকে ওঠার একটু অসুবিধা। কোনও ব্যক্তিবিশেষ নয়, অনেকেরই এমন অসুবিধা হয়। কিন্তু কিছু কিছু বিশেষ ক্ষেত্রে সকালে না-ওঠা গুরুতর বিচ্যুতি!” এ কথা আরও অনেকেরই মনে ছিল। কিন্তু মুখ ফুটে বলে দিয়েছেন বিরোধী দলনেতা! সূর্যবাবুর আরও মন্তব্য, “কিছু কিছু ক্ষেত্রে এমনও হয়েছে, কাল জন্মদিন। কিন্তু আজ হাতে সময় পেয়েছি বলে আজই পালন করলাম। ফাঁসির দিনে জন্মদিন করে নিলাম! এ সব দুর্ভাগ্যজনক!” মনীষীদের সম্মান দেওয়ার যে রেওয়াজ মমতা শুরু করেছেন, তাঁরা তেমন করতেন না। এই জন্যই কি আপত্তি? সূর্যবাবু মানতে নারাজ। বলছেন, “আমরাও করতাম। কিন্তু স্থান-কাল-পাত্র দেখে। কাল থেকে যদি প্রধানমন্ত্রীর সচিবালয়ে মনীষীদের জন্মদিন পালন শুরু হয়, দেশটার অবস্থা কী হবে?”
দেশ-দশের ‘বৃহত্তর সুবিধা’র কথা ভেবেই মুখ্যমন্ত্রী অবশ্য রবীন্দ্রনাথকে রাস্তায় আনতে বদ্ধপরিকর। ট্রাফিক সিগন্যালে রবীন্দ্র সঙ্গীতের পরিকল্পনা হাজার হোক তাঁরই ছিল। এ বার মুখ্যমন্ত্রী মমতার নির্দেশে রবীন্দ্র সদন প্রাঙ্গনে উঁচু করে মঞ্চ বাঁধা হবে। রবীন্দ্র সদন থেকে অ্যাকাডেমি অফ ফাইন আর্টসের সামনে দিয়ে ক্যাথিড্রাল রোড ধরে একেবারে বিড়লা তারামণ্ডল পর্যন্ত যাতে শ্রোতা-দর্শকের ভিড় জমতে পারে এবং কালবৈশাখীর আঘাত আসতে পারে, এই দুই সম্ভাবনা মাথায় রেখেই তাগড়াই করে ম্যারাপ তৈরি হবে। রবীন্দ্র সদনের অনুষ্ঠানের উদ্যোক্তা বরাবরই তথ্য ও সংস্কৃতি দফতর। এ বারও তারাই করবে। শুধু সংস্কৃতিটা ‘আম’ হবে। জনতার দরবারে বিশ্বকবিকে স্মরণ করবেন ‘জননেত্রী’-মুখ্যমন্ত্রী। সময়ের গেরোটা তবু রয়েই যাচ্ছে! এক নাগরিকের কথায়, “কার্টুন-কাণ্ডের পরে চার দিকে বলাবলি শুরু হয় সেই কথাটা ভগবান নিদ্রা গিয়েছেন, গোলযোগ সইতে পারেন না! এখন দেখছি, নিদ্রা কাটতে দেরি হবে বাকিদের গোলযোগ সইতে হবে!”
 
 
 


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.