|
|
|
|
জাতপাত ভুলে রক্ষাকালীর পুজো লাভপুরে |
নিজস্ব সংবাদদাতা • লাভপুর |
জাতপাতের ভেদাভেদ ভুলে লাভপুরের রক্ষাকালী পুজোয় মেতে উঠলেন বাসিন্দারা। বাউড়িদের সঙ্গে এখানে পুজোয় ঊচ্চবর্ণের মানুষজনও সামিল হন। মঙ্গলবার সেই ছবিই দেখা গেল রক্ষাকালীতলায়।
স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, রক্ষাকালীর শিলামূর্তি রয়েছে লাভপুরের বাঁশপুর গ্রামে। প্রচলিত রয়েছে, এক সময় লাভপুরে বাউড়ি রাজার রাজত্ব ছিল। অনেক বছর আগে এখানে দুর্ভিক্ষ ও মড়ক দেখা দেয়। সেই সময় এই এলাকার বাউড়িরা বাঁশপুর থেকে দেবী বিগ্রহ এনে পুজো শুরু করেন। সেই থেকে ফি বছর বৈশাখের তৃতীয় মঙ্গলবার এই পুজো চলে আসছে। প্রবীণরা জানান, বাউড়ি রাজার আমলেই রক্ষাকালী পুজোর প্রচলন হয়। বাঁশপুরে রয়েছে রক্ষাকালীর প্রাচীন শিলামূর্তি। আর ওই শিলামূর্তির প্রতিরূপ হিসেবে গড়া হয়েছে, মাটির ৭টি বিগ্রহ। সেই বিগ্রহগুলিই একদিনের জন্য রক্ষাকালীতলা, আমোদপুর, কামারমাঠ, উচকরণ প্রভৃতি গ্রামে বছরের বিভিন্ন সময়ে নিয়ে গিয়ে পুজো করেন বাউড়িরা। রক্ষাকালীতলার মতোই ওই গ্রামগুলিতেও ভেঙে যায় জাতপাতের বেড়া। এক দিনের জন্য সবাই একই পরিবারের হয়ে ওঠেন। |
|
ছবি: সোমনাথ মুস্তাফি। |
রক্ষাকালীতলাতেও পুজো পরিচালনা করেন বাউড়িরাই। এখানকার পুজোর অন্যতম বৈশিষ্ট হল, পুরোহিত থাকেন না। মন্ত্রপাঠও হয় না। অন্যত্র যেমন পুজোর নিদির্ষ্ট আচার আচরণ থাকে, এখানে তেমনটা নেই। পুজোর অন্যতম সেবাইত সুকুমার বাউড়ি বলেন, “আমরা পুরুষানুক্রমে এই পুজোর সেবাইত। ফুল, বেলপাতা দিয়েই মায়ের পুজো করি। কোনও মন্ত্রও নেই। মায়ের কাছে শুধু সুখ-শান্তি প্রার্থনা করা হয়।”
রক্ষাকালীতলার এই পুজো কালে কালে এখন জাতপাতের ভেদাভেদ ভুলে আক্ষরিক অর্থেই সর্বজনীন হয়ে উঠেছে। পুজো দিতে এসেছিলেন সত্তোরার্দ্ধ সুষমা মুখোপাধ্যায়, সাধনা মুখোপাধ্যায়রা। তাঁদের পাশেই পুজো দিতে দেখা গেল সীমা বাউড়ি, চিন্তা বাউড়িদের। এক সুরে তাঁরা বলেন, “এই দিনটিতে দেবীই আমাদের মন থেকে জাতি-ধর্ম-বর্ণ ভুলিয়ে দেন। মনে হয় আমরা সবাই এক পরিবারের।” স্থানীয় সাংস্কৃতিক কর্মী উজ্জ্বল মুখোপাধ্যায়, কেষ্ট পাল, ধনঞ্জয় সরকাররা বলেন, “এখনও এলাকার অনেকের মন থেকে জাত-পাতের বিচার করে চলার প্রবণতা দূর করা যায়নি। কিন্তু বাউড়িদের এই কালী পুজোয় এক দিনের জন্য হলেও জাত-পাতের বাছবিচার পুরোপুরি ঘুচে যায়।” স্বাভাবিক ভাবেই এই পুজো উপলক্ষে জমে উঠেছে রক্ষাকালীতলা। কীর্তন-বাউলের আসরে প্রচুর মানুষ এসেছিলেন। তবে পুজো শেষ হওয়ায় মনখারাপ ছোটদের। সুরজিৎ বাউড়ি, লোকনাথ বাউরিরা বলে, “বৃহস্পতিবার দেবীকে বাঁশপুরে রেখে আসা হবে। তাই মন খারাপ। কারণ বছরে আমাদের আয়োজনে এই একটি পুজোই হয়। এক দিনের পুজোয় তাই মন ভরে না।” |
|
|
|
|
|