আসতে চান ১৪৯ পরিবার
পুনর্বাসনের দায় নিজেরাই নিচ্ছেন মরিয়া ছিটমহলবাসী
ন্দিরা-মুজিব চুক্তি মেনে ভারত ও বাংলাদেশের ছিটমহল বিনিময় হলে বাসিন্দা আদানপ্রদান বা পুনর্বাসনের সমস্যা নিজেরাই মিটিয়ে ফেলার আশ্বাস দিচ্ছেন সেখানকার বসবাসকারীরা। দু’দেশের সরকারের কাছে ছিটমহলের বাসিন্দাদের এখন একটাই দাবি, দীর্ঘসূত্রতা ছেড়ে এ বার এ বিষয়ে সুনির্দিষ্ট পদক্ষেপ করুক দিল্লি ও ঢাকা। দু’দেশের ১৬২টি ছিটমহলে চরম দুর্দশায় বসবাসকারী প্রায় ৫১ হাজার মানুষের নাগরিকত্বের বিষয়টির এ বার একটা সুরাহা হোক। কিছু দিনের মধ্যেই অর্থমন্ত্রী প্রণব মুখোপাধ্যায় ঢাকা সফরে যাচ্ছেন। ছিটমহলবাসীরা চান, এই সফরেই বিষয়টির একটি সুষ্ঠু মীমাংসা হোক।
গত বছর বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দিল্লি সফরে ইন্দিরা-মুজিব চুক্তি দ্রুত বাস্তবায়নের বিষয়ে নীতিগত সিদ্ধান্ত হয়। ঠিক হয় ভারতে থাকা ৫১টি বাংলাদেশি ছিটমহল এ দেশের সঙ্গে মিশে যাবে। আবার বাংলাদেশে থাকা ১১১টি ভারতীয় ছিটমহল যুক্ত হবে সে দেশের সঙ্গে। অর্থাৎ আন্তর্জাতিক এই চুক্তির ফলে নাগরিকত্বই পাল্টে যাবে ভারতীয় ছিটমহলের ৩৭ হাজার এবং বাংলাদেশি ছিটমহলগুলির ১৪ হাজার বাসিন্দার।
কিন্তু বাসিন্দারা যদি তা এই নাগরিকত্ব পরিবর্তনে রাজি না হন? ১৯৭৪-এর এই চুক্তিতে বলা হয়েছে, তাঁরা চাইলে আগে যে দেশের নাগরিক ছিলেন, সে দেশে পুনর্বাসন পেতে পারেন। আর জটিলতা শুরু এই বিষয়টি থেকেই। ছিটমহল বিনিময় হলে কত জন নাগরিক এক দেশ থেকে অন্য দেশে যেতে চান, ছিটমহলবাসীদের সংগঠন ‘ভারত-বাংলাদেশ ছিটমহাল বিনিময় সমন্বয় কমিটি’-র কাছে তার একটা সাধারণ হিসাব জানতে চায় বাংলাদেশ প্রশাসন। এর পরেই কমিটি বাড়ি বাড়ি গিয়ে সমীক্ষায় নামে। সমীক্ষা হয় ভারতে অবস্থিত বাংলাদেশি ছিটমহলগুলিতেও। দেখা যায়, বাংলাদেশের মধ্যে থাকা ভারতীয় ছিটমহলগুলির ১৪ হাজার বাসিন্দার মধ্যে মাত্র ৭৪৩ জন বাংলাদেশের নাগরিকত্বের বদলে ভারতে পুনর্বাসন চান। আর এ দেশের মধ্যে থাকা বাংলাদেশি ছিটমহলগুলির ৩৭ হাজার বাসিন্দার এক জনও বাংলাদেশে ফিরতে চান না। কমিটির সম্পাদক গোলাম মুস্তাফা জানিয়েছেন, তাঁরা ১৬২টি ছিটমহলের প্রতিটি পরিবারের কাছে গিয়েছিলেন। ১৭টি ভারতীয় ছিটমহলের ১৪৯টি পরিবার ভারতে ফিরতে চান।
মুস্তাফা জানিয়েছেন, ঢাকায় ভারতীয় দূতাবাসের কাছে ইতিমধ্যেই এই রিপোর্ট পৌঁছে দেওয়া হয়েছে। শুক্রবার একযোগে ভারতে কোচবিহার জেলা প্রশাসন ও বাংলাদেশে পঞ্চগড়, লালমণির হাট ও কুড়িগ্রাম জেলা প্রশাসনের হাতে এই রিপোর্ট তুলে দেওয়া হবে।
গত বছরই প্রথম দুই ছিটমহলে সরকারি ভাবে জনগণনা করা হয়। সমন্বয় কমিটির সহযোগিতায় মাত্র কয়েক দিনের মধ্যেই সে কাজ সারা হয়। বাসিন্দারা আশা করেছিলেন, গত বছরে মনমোহন সিংহের ঢাকা সফরেই বিষয়টি মিটে যাবে। কিন্তু সেই সফরে তিস্তার জল-বণ্টন চুক্তি না হওয়ার প্রভাব ছিটমহল বিনিময়ের উপরেও পড়ে। তার মধ্যেই ছিটমহল বিনিময় নিয়ে সমঝোতাপত্রে সই করে দু’দেশ। তিনবিঘা করিডর ২৪ ঘণ্টা খুলে রাখার সিদ্ধান্তও হয়। এতে দু’তিনটি ছিটমহল লাভবান হলেও বাকিগুলির বাসিন্দারা হতাশ হন।
এর মধ্যেই খবর প্রকাশিত হয়, তিস্তা চুক্তির মতো ছিটমহল বিনিময় নিয়েও কেন্দ্রের কাছে আপত্তি জানিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
ভারতে সমন্বয় কমিটির নেতা দীপ্তিমান সেনগুপ্ত জানান, তাঁরা খোঁজ নিয়ে জানেন, পুনর্বাসন চাওয়া ছিটমহলবাসীদের দায়িত্ব কে নেবে, কেন্দ্রের কাছে সে প্রশ্নেরই জবাব চেয়েছিলেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী। তার পরেই ভারতে অবস্থিত বাংলাদেশি ছিটমহলের বাসিন্দারা সরকারের মুখাপেক্ষী হয়ে বসে না থেকে নিজেরাই ও দেশ থেকে আসা ১৪৯টি পরিবারকে পুনর্বাসন দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। তাঁদের জন্য ৭টি ছিটমহলে ২৩ একর জমিও নির্দিষ্ট করে ফেলেছে সমন্বয় কমিটি। ১৩টি ছিটমহলের বাসিন্দারা এই বসত জমি দান করেছেন। এই জমিতে তাঁরা বাড়ি করলে অর্থ-সাহায্য দেওয়ার সিদ্ধান্তও নেওয়া হয়েছে। দীপ্তিমানবাবু বলেন, ছিটমহল বিনিময়ের জন্য এখানকার বাসিন্দারা কতটা মরিয়া, এই পদক্ষেপই তার প্রমাণ। দু’দেশের সরকার এ বার রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত নিয়ে ইন্দিরা-মুজিব চুক্তি বাস্তবায়নে তৎপর হোক।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.