কতটা কাজ করলে তবে...
লাদলি নয়, যোগাযোগ।
শিক্ষিকা মৃদুলা দাস কর্মকার বলছেন, এটাই তাঁর উন্নয়নের মন্ত্র। অথচ তাতেও বিরোধীরা নিন্দেমন্দ করতে ছাড়ছে না।
দুর্গাপুর শহরের প্রধান অভিজাত এলাকার পাশাপাশি কিছু বস্তি আর প্রান্তিক এলাকা নিয়ে মৃদুলাদেবীর ওয়ার্ড ২৭ নম্বর। কাজ একেবারে হয়নি, কেউ বলবে না। কিন্তু সিপিএম কাউন্সিলরের মনে শান্তি নেই।
মৃদুলাদেবীর আক্ষেপ, তিনি যতই ‘আমরা-ওরা’ ছেড়ে ‘সকলের’ হতে চান, সংকীর্ণ রাজনীতি পিছু ছাড়ে না। শিক্ষিকার দাবি, “প্রতিনিয়ত এলাকার মানুষ ও বিরোধীদের সঙ্গে যোগাযোগ রেখে কাজ করেছি। দল দেখিনি। তার পরেও কয়েক জায়গায় বিরোধীদের হেনস্থার মুখে পড়তে হয়েছে। ওঁদের আচরণে আমি ব্যথিত।” বিরোধীরা আবার পাল্টা বলছেন, ব্যক্তিগত ভাবে মৃদুলাদেবীর বিরুদ্ধে তাঁদের কোনও অভিযোগ নেই। কিন্তু কাজ না হওয়ার অভিযোগ ভুরি ভুরি।
এক দিকে বিধাননগর কলোনি, সেক্টর ২-এ, ২-বি, ২-সি, অন্য দিকে হাডকো, ফার্টিলাইজার কলোনি, উত্তরণ কলোনি ও ভ্যামবে কলোনি। কাউন্সিলরের দাবি, বিধাননগরে সমস্ত রাস্তাঘাট সংস্কার হয়েছে। ঢেলে সাজা হয়েছে নিকাশি। বহু সমবায় আবাসন হয়েছে ওই এলাকায়। আবাসিকদের জন্য ৮টি সমবায় আবাসন উদ্যান গড়া হয়েছে। মৃদুলাদেবী বলেন, “প্রাক্তন বিধায়ক ও বর্তমান সাংসদের এলাকা উন্নয়ন তহবিলের টাকায় এই সব কাজ হয়েছে।” তাঁর মতে, বন্ধ হয়ে পড়ে থাকা রাষ্ট্রায়ত্ত কারখানা হিন্দুস্থান ফার্টিলাইজারের কলোনিতে কাজের সুযোগ প্রায় নেই। তবু এলাকাবাসীর কথা ভেবে রাস্তা সারানো হয়েছে। ওয়ার্ডের প্রায় সব রাস্তায় পর্যাপ্ত আলোর ব্যবস্থাও হয়েছে।
তৃণমূল নেতা নিখিল মুখোপাধ্যায় পাল্টা বলেন, “প্রায় সব ওয়ার্ডেই কমিউনিটি শৌচাগারের জল উপচে বাড়িতে ঢুকছে। পানীয় জলের সমস্যা ব্যাপক। মার্টিন লুথার কিং রোডে এলাকার আবর্জনা জড়ো করে রাখা হয়। লুনা স্ট্রিট, মার্টিন লুথার কিং, শাস্ত্রী অ্যাভিনিউ ও সাফে অ্যাভিনিউ বেহাল।” স্থানীয় বাসিন্দা দ্বিজেন্দ্রনাথ দাস বলেন, “কবে যে রাস্তা সংস্কার হবে!” আর এক বাসিন্দা গীতা মুখোপাধ্যায়ের অভিযোগ, পুরসভায় বিস্তর চিঠি-চাপাটি লেখা সত্ত্বেও রাস্তা সারানো হয়নি। নিখিলবাবু যোগ করেন, “ঠিকঠাক নিকাশি ব্যবস্থা না থাকায় বর্ষায় ভ্যামবে কলোনিতে বাড়ির ভিতরে জল ঢোকে। গরিব মানুষের জন্য বিপিএল কার্ড দেওয়া হয়। অথচ কার্ড থাকা সত্ত্বেও অনেকে সরকারি সুবিধা পান না।”
২৭ নম্বরে ঝাঁ চককে শহরে বাড়ির
সামনে পড়ে রয়েছে জঞ্জাল।
২৮ নম্বরে কাঁচা নর্দমা উপচে
নোংরা জল বাড়ির সামনে।
পাশের ওয়ার্ডের বিরোধী নেতা, তৃণমূলের খোকন রুইদাসেরও খেদ, বিপিএল তালিকায় যোগ্য অনেকের নামই ওঠেনি। যেমন এইচএফসি বস্তির বাসিন্দারা বিপিএল তালিকায় জায়গা পাননি। রাস্তা এবং নিকাশি নিয়েও একগুচ্ছ অভিযোগ রয়েছে।
সগড়ভাঙা, গোপীনাথপুর, কুষ্ঠ কলোনি, মুচিপাড়া উত্তর ও দক্ষিণ, খাটপুকুর, খয়রাশোল, নিবেদিতা পার্ক, মৃত্যুঞ্জয় হাউসিং, আরআইসি ও আরআইপি প্লট, এফসিআই বস্তি, আনন্দনগর, আইটিআই গোঁসাইতলা নিয়ে ২৮ নম্বর ওয়ার্ড। খোকনবাবুর অভিযোগ, মুচিপাড়া উত্তরের রাস্তা ও নিকাশির কাজ হয়নি। মুচিপাড়া খুবই জনবহুল এলাকা। কিন্তু প্রতীক্ষালয় বা শৌচাগার নেই। আরআইপি ও খয়রাশোলের মানুষ দূষণের শিকার। গোপীনাথপুরে নিয়মিত জঞ্জাল সাফাই হয় না। খাটপুকুরে পানীয় জলের সঙ্কট প্রবল।
২৮ নম্বরের সিপিএম কাউন্সিলর শিবশঙ্কর চট্টোপাধ্যায় আবার ৪ নম্বর বোরোর চেয়ারম্যানও। গোটা এলাকা তাঁর হাতের তালুর মতো চেনা। কাজ যে সব হয়নি, তা তিনিও জানেন। ‘কিছু সমস্যা’ যে আছে, তা তিনিও মেনে নিয়েছেন। তাঁর কথায়, “পানীয় জলের সঙ্কট রয়েছে। সামাল দেওয়ার চেষ্টা চলছে।” তাঁর দাবি, যে জলাধার নির্মাণের কাজ চলছে, তা শেষ হলেই সমস্যা মিটে যাবে। যদিও কে বা কারা রাস্তার জলের সংযোগ থেকে ‘ট্যাপ’ খুলে নিয়ে চলে যাওয়ায় প্রচুর জল নষ্ট হয় বলে তিনি আক্ষেপও করেন।
কাউন্সিলের ফিরিস্তি, “অধিকাংশ রাস্তা হয় পিচের নয় কংক্রিটের হয়ে গিয়েছে। নর্দমা সংস্কার করা হয়েছে। এলাকার জল একটি বড় নালা দিয়ে মাঠে গিয়ে পড়ে। সেই ‘সিএস নালা’র সংস্কার চলছে। বিএসইউপি প্রকল্পে ১৮০টি বাড়ি হয়েছে। তিনটি পুকুর সংস্কার করা হয়েছে। দু’টি উপ-স্বাস্থ্যকেন্দ্র, দুটি শিশু শিক্ষাকেন্দ্রের পাকা বাড়ি হয়েছে। বেশ কিছু কমিউনিটি শৌচাগার হয়েছে।” পর্যাপ্ত জায়গা না মেলায় কয়েকটি করা যায়নি বলেও তাঁর দাবি।
স্থানীয় বাসিন্দা সুনীল রুইদাস, সুব্রত সাঁই, উত্থান মাজিদের মতে, “উন্নয়নের কাজ কিছু নিশ্চয়ই হয়েছে। কিন্তু আরও অনেক কিছু করার ছিল। কাউন্সিলর তেমন নজরই দেননি।”
কে না জানে, ভোটারেরা বড় অভিমানী। প্রশ্ন একটাই, নেতা তাঁদের ‘সুনজরে’ থাকবেন তো?
নজরে নগর
ওয়ার্ড ওয়ার্ড
• বিপিএল কার্ড থেকেও সুবিধা মেলে না
• কমিউনিটি শৌচাগারের জল
উপচে বাড়িতে ঢুকে পড়ে
• ভ্যামবে কলোনির নিকাশি ব্যবস্থা বেহাল
• পানীয় জলের সঙ্কট তীব্র
• জনবহুল মুচপাড়া বাসস্ট্যান্ডে
প্রতীক্ষালয় নেই, নেই শৌচাগার-ও
• আরআইপি ও খয়রাশোলে দূষণ

দলীয় রং দেখে কাজ করিনি কোনও দিন।
মৃদুলা দাস কর্মকার,

দিন-দিন বসতি বাড়ছে, উন্নয়নের চাহিদা বাড়ছে।
শিবশঙ্কর চট্টোপাধ্যায়,

বিপিএল তালিকায় নাম উঠেছে,
অথচ কার্ড পাননি অনেকেই।
নিখিল মুখোপাধ্যায়,

না সেরেছে রাস্তা, না সাফাই হয় জঞ্জাল।
দূষণের কথা নয় ছেড়েই দিলাম।
খোকন রুইদাস,

ছবি: বিশ্বনাথ মশান।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.