দেরিতে আসার ‘অপরাধে’ শনিবার গোঘাটের একটি প্রাথমিক স্কুলে চড়াও হয়ে প্রধান শিক্ষককে ‘কটূক্তি’ করা এবং ‘হুমকি’ দেওয়ার অভিযোগ উঠল সেখানকার তৃণমূল কর্মী-সমর্থকদের বিরুদ্ধে। তৃণমূল অবশ্য অভিযোগ মানেনি।
গরমের সময়ে গোঘাটের সাতকোড়ে গ্রামের ‘রাজগ্রাম সাতকোড়ে আদিবাসী প্রাথমিক বিদ্যালয়’ নামে ওই স্কুলটি সকাল সাড়ে ৬টা নাগাদ শুরু হয়। প্রধান শিক্ষক জয়দেব সাঁতরা ছাড়া স্কুলে মাত্র এক জন শিক্ষক রয়েছেন। প্রতিদিনই মিড-ডে মিলের বাজার করে স্কুলে আসেন জয়দেববাবু। এ কারণে তাঁর মিনিট পনেরো-কুড়ি দেরি হয় বলে তিনি নিজেই স্বীকার করেছেন। শনিবার তিনি স্কুলে ঢুকতেই কয়েক জন তৃণমূল কর্মী-সমর্থক চড়াও হয়ে দেরিতে আসার জন্য তাঁর কৈফিয়ত দাবি করেন এবং কটূক্তি করে তাঁর বিরুদ্ধে ‘ব্যবস্থা’ নেওয়ার হুমকি দেন বলে অভিযোগ। |
জয়দেব সাঁতরা। নিজস্ব চিত্র। |
জয়দেববাবু লিখিত ভাবে অভিযোগ জানিয়েছেন গোঘাট-১ ব্লকের বিডিও জয়ন্ত মণ্ডলকে। মৌখিক ভাবে জানিয়েছেন গোঘাট-১ চক্রের স্কুল পরিদর্শক আশিসকুমার আটাকেও। আশিসবাবুর কাছে প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে পাল্টা দেরিতে আসার অভিযোগ জানিয়েছেন তৃণমূল কর্মী-সমর্থকেরা। বিডিও জানান, অভিযোগের ভিত্তিতে তদন্ত করে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হবে। আশিসবাবু বলেন, “দু’পক্ষকেই লিখিত অভিযোগ জানাতে বলেছি।”
জয়দেববাবু বলেন, “আমার দেরিতে আসার কথা গ্রাম শিক্ষা কমিটির সভাপতি জানেন। এ দিন স্কুলে এসে তৃণমূলের ছেলেরা দেরিতে আসার জন্য কৈফিয়ত চাইলে আমি কথা বলতে রাজি হইনি। তখন ওরা বলে, ‘আমরা রাজ্য চালাচ্ছি। আমাদের কৈফিয়ত দেবেন না তো কাদের দেবেন’? ওরা গালিগালাজ করে। ফের দেরিতে এলে ব্যবস্থা নেওয়ার হুমকি দেয়।” গ্রাম শিক্ষা কমিটির সভাপতি সিপিএমের পূর্ণিমা সাঁতরা জানিয়েছেন, মিড ডে মিলের বাজার করে স্কুলে আসার জন্য জয়দেববাবুর যে কিছুটা দেরি হয়, সে কথা তিনি জানেন।
এ দিনের ঘটনায় দলীয় কর্মী-সমর্থকদের নেতৃত্ব দিয়েছিলেন সাতকোড়ে গ্রামের তৃণমূল নেতা মনসা দাস। তবে তাঁর দাবি, তৃণমূল নেতা হিসেবে নন, স্কুলে গিয়েছিলেন গ্রামবাসী হিসেবে। তিনি বলেন, “প্রধান শিক্ষক আমাদের বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ তুলছেন। তিনি স্কুলে বাজার রেখে পাশের রাজগ্রামে বাড়ির কাজ করতে গিয়ে ৮টার সময়ে স্কুলে আসেন। এতে স্কুলের পড়াশোনা বিঘ্নিত হচ্ছে। সে কারণে আমরা গ্রামবাসীরা প্রতিবাদ করি। তাঁকে কোনও খারাপ কথা বলা বা হুমকি দেওয়া হয়নি।” প্রধান শিক্ষকের দাবি, “যাঁরা আমাকে হুমকি দিয়েছেন, তাঁরা কেউ স্কুলের ছাত্রছাত্রীদের অভিভাবক নন।”
গোঘাটের তৃণমূল নেতা মনোরঞ্জন পাল বলেন, “দলের পক্ষ থেকে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে হস্তক্ষেপ করা নিষিদ্ধ। গ্রামবাসীরাই প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ দেখিয়েছেন। ওই ঘটনায় দলের কেউ যুক্ত নন।” |