আসছেন কেন্দ্রীয় সচিব
অধিগ্রহণ-জটে আটকে রয়েছে সড়ক সম্প্রসারণ
বিস্তর চিঠি চালাচালি হয়েছে। বেশ কয়েকটি জাতীয় সড়ক চওড়া করার জন্য জমির প্রয়োজনের কথা জানিয়ে রাজ্য প্রশাসনকে বার বার আর্জিও জানিয়েছেন জাতীয় হাইওয়ে কর্তৃপক্ষ। কিন্তু কোনও সুরাহা না মেলায় কেন্দ্রীয় সড়ক পরিবহণ মন্ত্রকের সচিব এবং জাতীয় হাইওয়ে কর্তৃপক্ষের (এনএইচএআই) চেয়ারম্যান এ কে উপাধ্যায় এ বার নিজেই রাজ্যের মুখ্যসচিব সমর ঘোষের সঙ্গে কথা বলতে রাজ্যে আসছেন। সোমবার মহাকরণে তাঁদের বৈঠক হওয়ার কথা।
মুখ্যসচিবের সঙ্গে বৈঠকে বসার আগে সরেজমিনে রাস্তার হাল খতিয়ে দেখতে এনএইচএআই এবং পূর্ত দফতরের ইঞ্জিনিয়ারদের সঙ্গে নিয়ে শিলিগুড়ি থেকে সড়ক পথে কলকাতায় পৌঁছবেন উপাধ্যায়। মহাকরণ সূত্রের খবর, গত মাসে মুখ্যসচিবকে তিনি যে চিঠি লিখেছেন, তাতে মূলত জমি সমস্যার কথাই বলা হয়েছে। উপাধ্যায় বলেছেন, পশ্চিমবঙ্গে জাতীয় সড়ক উন্নয়নের ক্ষেত্রে জমি অধিগ্রহণই প্রধান বাধা। এখনই এই সমস্যার সমাধান না হলে এনএইচএআই-কে বড় রকমের আর্থিক ও আইনি জটিলতার মুখে পড়তে হবে। সেই সঙ্গে এ রাজ্যে জাতীয় সড়ক উন্নয়নের কাজ ব্যাপক ভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হবে। পশ্চিমবঙ্গে কোন জেলায় কী কারণে সড়ক সম্প্রসারণের কাজ আটকে আছে, মুখ্যসচিবকে তার একটা তালিকাও দিয়েছেন সড়ক পরিবহণ মন্ত্রকের সচিব।
ওই চিঠির পরিপ্রেক্ষিতে সংশ্লিষ্ট জেলার জেলাশাসকদের কাছে বিস্তারিত রিপোর্ট চেয়েছিল রাজ্য প্রশাসন। তার উত্তরে উত্তর দিনাজপুর জেলা প্রশাসন জানিয়েছে, স্থানীয় বাসিন্দাদের একটি সংগঠনের বাধায় জমি অধিগ্রহণের কাজ থমকে রয়েছে। একই পরিস্থিতি মুর্শিদাবাদ ও মালদহেও। স্থানীয় বাসিন্দাদের বাধাতেই যে জমির দখল নেওয়া যাচ্ছে না, সে কথাই জানানো হয়েছে জেলাশাসকদের রিপোর্টে।
রাজ্যে বেশ ক’টি জাতীয় সড়ক সম্প্রসারণের কাজ হাতে নিয়েছে কেন্দ্রীয় সড়ক মন্ত্রক। তার মধ্যে বারাসত থেকে ডালখোলা পর্যন্ত ৩৪ নম্বর জাতীয় সড়ক চার লেন করার প্রকল্পটি সব চেয়ে বড়। ২০০৬-এ সেটি ছাড়পত্র পায়। কিন্তু দেড় বছর ধরে এক চিলতে জমিও হাতে না পাওয়ায় কাজ শুরু করা যায়নি। এনএইচএআই কর্তৃপক্ষ রাজ্যকে জানিয়েছে, ৩৪ নম্বর জাতীয় সড়ক সম্প্রসারণের জন্য ২৩৮০ একর জমির প্রয়োজন। এর মধ্যে উত্তর দিনাজপুরে ৬৬৪ একর, মুর্শিদাবাদে ৬৩২, মালদহে ৪২৭, নদিয়ায় ৫৫৮ এবং উত্তর ২৪ পরগনায় ৯৯ একরের মতো জমি লাগবে। কিন্তু কোনও জেলা থেকেই জমি হাতে পায়নি এনএইচএআই।
এ ছাড়া ডানকুনি থেকে খড়্গপুর পর্যন্ত ৬ নম্বর জাতীয় সড়ক ছয় লেন এবং খড়্গপুর থেকে জঙ্গলমহলের ভিতর দিয়ে ঝাড়খণ্ডের সীমানা লাগোয়া চিচিড়া পর্যন্ত ১২৯ কিলোমিটার রাস্তা চার লেন করার প্রকল্প হাতে নিয়েছে এনএইচএআই। চার লেন হবে শিলিগুড়ি থেকে অসম সীমানা লাগোয়া সালসালাবাড়ি পর্যন্ত ৩১ নম্বর জাতীয় সড়কের ১৫৫ কিলোমিটার অংশও। বর্ধমানের বরাকর থেকে পানাগড় পর্যন্ত রাস্তা ছয় লেন করার পাশাপাশি পানাগড় বাই-পাস তৈরির পরিকল্পনা রয়েছে এনএইচএআই-এর। কিন্তু কোথাওই জমি মেলেনি।
সড়ক পরিবহণ মন্ত্রকের এক কর্তা বলেন, জমি না পাওয়ায় সব প্রকল্পেরই খরচ বাড়ছে। এ জন্য জাতীয় হাইওয়ে কর্তৃপক্ষকে ভবিষ্যতে গুণাগার দিতে হতে পারে। হাইওয়ে কর্তৃপক্ষের এক অফিসার বলেন, “বারাসত থেকে ডালখোলা পর্যন্ত রাস্তা চার লেন করার জন্য ২০১০-এ পাঁচটি ঠিকাদার সংস্থাকে নিয়োগ করা হয়। কিন্তু জমি না মেলায় তাদের কাজ শুরুর অনুমতি দেওয়া যাচ্ছে না।” ওই আধিকারিক জানান, ২০১৪-এর মধ্যে ওই কাজ শেষ হওয়ার কথা থাকলেও ইতিমধ্যে দেড় বছর সময় নষ্ট হয়ে গিয়েছে। যে হেতু বরাত দেওয়ার পরেও ঠিকাদার সংস্থা কাজ শুরু করতে পারছে না, তাই ওদের ক্ষতিপূরণ দিতে হতে পারে। এ ক্ষেত্রে ক্ষতিপূরণের একটা অংশ দিতে হবে রাজ্যকেও। তার কারণ, প্রকল্প শেষ করার দায়িত্ব যেমন এনএইচএআই-এর, তেমনই রাজ্যেরও।
রাজ্য প্রশাসনের এক কর্তা বলেন, “নতুন সরকারের জমি অধিগ্রহণ বিল এখনও বিধানসভায় পাস না হওয়ায় ক্ষতিপূরণ ও পুনর্বাসনের বিষয়টি আটকে আছে। সেই কারণে জাতীয় সড়ক সম্প্রসারণের জন্য জমি অধিগ্রহণ করা সম্ভব হয়নি।” মহাকরণের খবর, জুন মাসে বিধানসভার পরবর্তী অধিবেশনে জমি বিল পেশ হতে পারে।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.